রায়হান বেলায়ত:
“নির্দেশ” এবং “বাস্তবায়ন এই শব্দ দুটিতে নির্ভর করছে বর্তমান দেশের অবস্থা। মহামারী করোনার কারণে সরকারী নির্দেশনা মতে সেই ১৭ই মার্চ থেকে সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয় ৩১ই মার্চ পর্যন্ত। কিছু প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়েছে তারও আগে। এরই কিছুদিন পর অফিস-আদালতেও ছুটি ঘোষণা করা হয়। ধীরে ধীরে সকল ক্ষেত্রে বন্ধ আর বন্ধ। মানুষের চলাচলও শিথীল করে দেওয়া হয়। কিছু সংখ্যক কর্মজীবি ছাড়া বাকীদের ইনকাম সম্পূর্ণ বন্ধ। পুরো দেশটিকে ধীরে ধীরে লকডাউনের আওতাধীন আনা হলো। গণজমায়েত এড়াতে এবং সামাজিক দুরুত্ব বজায় রাখার জন্য মসজিদের ইমামদেরকও স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে কঠোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যাতে মুসল্লীদের সংখ্যা নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়। এ নির্দেশ দেওয়া হয়েছে অন্য ধর্মীয় উপসনালয়গুলোতেও। বাজার কমিটিকে নির্দিশ দেওয়া হয়েছে ৩ ফুট দূরত্ব রেখে যেন ক্রেতাদের অবস্থান করতে দেওয়া হয়। কোথাও যথাযথ আইন মান্য করা হয়নি। যথারীতি চলেছে সবকার্যক্রম পূর্বের মতই।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর একের পর এক বাজেট আর প্রনোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করে যাচ্ছেন। জনপ্রতিনিধিরা যাতে চুরি না করে সেব্যাপরে নির্দেশও প্রদান করেছেন। অধ্যাবধি করোনার অবস্থা কোন মতে নিয়ন্ত্রণে আসলো না। আক্রান্তের সংখ্যার সাথে সাথে মৃত্যুর সংখ্যাও সমানভাবে বৃদ্ধি পেতে লাগল। শুধু তাই নয়, ভুল এন-৯৫ মাষ্ক কিনে নার্স-ডাক্তারদের কাছে পাঠানো হচ্ছে। মাটির তলায় পাওয়া যাচ্ছে চালের খনি আর খাটের তলায় তেলের খনি। সরকারের পাশাপাশি এনজিও গ্রাম-গঞ্জে যে পরিমাণ ত্রাণ বিতরণ করছেন দেশের একটি পরিবারও অভাবে থাকার কথা না। কিন্তু বাস্তবে এমনটা হয়নি।
কারণ, নির্দেশের সাথে “বাস্তবায়ন” শব্দটি যথাযথ প্রয়োগ হয়নি। স্বয়ং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নিজেও এব্যাপারে একটি অধিবেশনে বলেছেন- “আমি তো নির্দেশ দিচ্ছিই। মানুষ না মানলে কী করবো।” এই মানুষের না মানার পিছনে “বাস্তবায়ন” শব্দটির বড় অভাব রয়েছেন। ভবিষ্যতে নির্দেশনা এবং বাস্তবায়ন যাতে সমানতলে চলে সে ব্যাপারে সকলকে এগিয়ে আসা উচিত।
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ যাতে যথাযথ বাস্তবায়িত হয় এবং সবকিছু নজরদারীতে থাকে এজন্য একটি শক্ত পর্যবেক্ষক দল গঠন করা একান্ত প্রয়োজন। হয়তো করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হবে। অন্যথায়, দেশের অবস্থা খারাপ থেকে অধিকতর খারাপের দিকে চলে যাবে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত মসজিদে তালা ঝুলে থাকবে। একই ঘরে করোনার রোগীর সাথে বসবাস করতে হবে না হলে অনাহারে থাকতে হবে। অর্থনৈতিক ব্যবস্থার পাশাপাশি শিক্ষা ব্যবস্থাও ঝুঁকিতে পড়বে। বেসরকারী / প্রাইভেট চাকুরীজীবিরা বিশেষ করে প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক যারা অনেক দিন ধরে নিজেকে গৃহবন্দি করে রেখেছেন। হয়তো তারা শিক্ষকতা পেশা ছেড়ে করোনা পরিস্থিতিও করা যায় এমন বিকল্প কোন পেশা বেছে নিবেন। শিক্ষার্থীদের লেখা পড়ার অবস্থা অবনতির দিকে চলে যাবে। সবার ঘরেতো আর টিভি নেই “অন লাইন” ক্লাস দেখার জন্য। শিক্ষার্থীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে পড়বে হেফজ বিভাগের শিক্ষার্থীরা যারা ২৪ ঘন্টা শিক্ষকদের তত্ত্বাবধানে থাকতো। দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর বন্ধ/ছুটি যেন তাদের জীবনের কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। করোনার প্রভাবের সাথে সাথে দেশে অভাব অনটনও বেড়ে যাবে। জনগণকে দিতে দিতে সরকারী কোষাগারও শেষ হয়ে যাবে।
আল্লাহ পাক প্রিয় মাতৃভূমিকে সকল প্রকার আপদ-বিপদ থেকে হেফাজত করুন।

রায়হান বেলায়ত:
সহকারী শিক্ষক, তানযীমুল উম্মাহ হিফয মাদরাসা, কক্সবাজার শাখা।