সবর আল্লাহ তাআলার নেয়ামতের মধ্যে অন্যতম। দুনিয়াতেই যে নেয়ামত লাভ হয়। সবর বা ধৈর্যধারণকারীদের জন্য আল্লাহ তাআলা অসংখ্য নেয়ামতের ঘোষণা করেছেন।

আবার কারো অন্যায়ের বিচার তথা প্রতিশোধ নেয়ার বিধান দিয়েছে ইসলাম। কেউ কারো প্রতি কোনো অন্যায় করলে তার প্রতিশোধ গ্রহণ করা বৈধ। তবে প্রতিশোধ নেয়ার মানদণ্ড নির্ধারণ করা আছে।

এ আয়াতে আল্লাহ তাআলা প্রতিশোধের কথা যেমন বলেছেন, তেমনি সবর তথা ধৈর্যধারণ করার কথাও উল্লেখ করেছেন। ইসলামে উভয়টি জায়েয এবং সবর অবলম্বন প্রতিশোধ গ্রহণ থেকে উত্তম।

প্রথমত প্রতিশোধ গ্রহণ : আল্লাহর পথে দাওয়াত দানকারীদেরকে আইনগত অধিকার দেয়া হয়েছে যে, যারা নির্যাতন চালায়, তাদের কাছ থেকে প্রতিশোধ গ্রহণ করা বৈধ, কিন্তু শর্ত হলো- প্রতিশোধ গ্রহণের ক্ষেত্রে নির্যাতনের সীমা অতিক্রম করা যাবে না।

যতটুকু জুলুম প্রতিপক্ষের তরফ থেকে করা হয়, প্রতিশোধ ততটুকুই গ্রহণ করতে হবে; বেশি হতে পারবে না। হাদিসে এসেছে-

হজরত আনাস রাদিয়াল্লাহ আনহু থেকে বর্ণিত, ‘এক ইয়াহুদি এক মেয়েকে দুই পাথরের মাঝে রেখে হত্যা করে, মৃত্যুর আগে সে মেয়ে এক ইয়াহুদির প্রতি ইঙ্গিত করে। সেই ইয়াহুদিকে নিয়ে আসা হলে সে তা (হত্যার কথা) স্বীকার করে। ফলে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সে ইয়াহুদিকে দুই পাথরের মাঝখানে বেঁধে হত্যা করার আদেশ করেন।’ (বুখারি, মুসলিম)

দ্বিতীয়ত সবরের পরামর্শ : আয়াতের শেষাংশে পরামর্শ দেয়া হয়েছে যে, যদিও প্রতিশোধ গ্রহণ করার অধিকার আছে, কিন্তু সবর অবলম্বন করা উত্তম। ওহুদের যুদ্ধে সত্তর জন সাহাবির শাহাদতবরণ এবং হজরত হামজা রাদিয়াল্লাহু আনহুকে হত্যার পর তার লাশের নাক-কান কর্তনের ঘটনা দেখে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দারুণভাবে মর্মাহত হলেন।

সাহাবায়ে কেরাম (আনসারগণ) বললেন, ‘আমরা যদি তাদের ওপর জয়লাভ করি, তবে তাদেরকে দেখিয়ে দেব। তারপর মক্কা বিজয়ের দিন আসল। তখন আল্লাহ আয়াত নাজিল করলেন-

‘যদি শাস্তি দিতে চাও তবে ততটুকুই দেবে, যতটুকু তোমরা শাস্তি ভোগ করেছ। আর যদি তোমরা ধৈর্য ধারণ কর, তবে তা ধৈর্যশীলদের জন্য অনেক উত্তম (কল্যাণকর)।’

তখন এক লোক বলল, ‘আজকের পরে কুরাইশদের কেউ অবশিষ্ট থাকবে না। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘৪ জন ব্যতিত আর সবাইকে ছেড়ে দাও।’ (মুসতাদরেকে হাকেম, তিরমিজি, নাসাঈ)

পরিশেষে….

ইসলামে প্রতিশোধ গ্রহণ জায়েয তবে সবরে রয়েছে সর্বোত্তম কল্যাণ। তবে প্রতিশোধের ক্ষেত্রে অবশ্যই জুলুমের মাত্রাকে ছাড়িয়ে যাওয়া যাবে না। এটাই ইসলামের চূড়ান্ত ঘোষণা।

এ আয়াত নাজিল হওয়ার পর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সবর করেছিলেন। সম্ভবত এ কারণেই কোনো কোনো রেওয়ায়েতে বলা হয়েছে যে, আলোচ্য আয়াতগুলো মক্কা বিজয়ের সময় নাজিল হয়েছিল।

সুতরাং মুসলিম উম্মাহর উচিত জুলুমের সমপরিমাণ প্রতিশোধ গ্রহণ বা শাস্তি প্রদানের প্রতি বিশেষ খেয়াল রাখা জরুরি। কোনোভাবেই যেন প্রতিশোধ জুলুমের মাত্রা ছাড়িয়ে না যায়। আর মাজলুম ব্যক্তির জন্য প্রতিশোধ গ্রহণের চেয়ে সবরে রয়েছে সর্বোত্তম কল্যাণ।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে সুন্দর সমাজ বিনির্মাণে কুরআনের আয়াত ও হাদিরে ওপর যথাযথ আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।