শাহিদ মোস্তফা শাহিদ, কক্সবাজার সদর:

চৌফলদন্ডীতে ইয়াবা ব্যবসা করে কয়েক বছরের মধ্যে কোটিপতি হয়ে যান মহিষ ব্যবসায়ী আমান উল্লাহ আমানু। স্থানীয় বিভিন্ন সূত্র থেকে এসব তথ্য জানা যায়। আমান উল্লাহ প্রকাশ আমানু বাড়ি চৌফলদন্ডী ইউনিয়নের ডেইল পাড়া এলাকায়। তার বাবার নাম মৃত নজির আহমদ।

জানা যায়, আমান উল্লাহ বৃহত্তর ঈদগাঁওয়ের অন্যতম প্রধান ইয়াবা ব্যবসায়ী। দীর্ঘদিন ধরে সীমান্ত উপজেলা টেকনাফ থেকে মায়ানমারের পশু গরু-মহিষের ব্যবসা করে আসছিল। এ সুযোগে কিনে নেয় একটি হিনো ট্রাক। এ ট্রাক দিয়ে বিভিন্ন কৌশলে এসব পশুর পেটে করে ইয়াবার চালান এনে বৃহত্তর ঈদগাহসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করে আসছে। সম্প্রতি মাস দুয়েক আগে তার নিজস্ব হিনো ট্রাক করে বিশাল একটি চালান ঢাকায় পাচারের সময় পটিয়া এলাকায় পুলিশের হাতে ধরা পরে।

এদিন আমান উল্লাহ পুলিশের গতিবিধি লক্ষ করে ট্রাক থেকে বিশাল একটি চালান হাতে নিয়ে লাফ দিয়ে পালিয়ে যায়। এ দিন চৌফলদন্ডী ইউনিয়নের কালু ফকির পাড়া এলাকার শাহ আলমের পুত্র ট্রাক চালক শাহাব উদ্দীনকে ১৮শ পিস ইয়াবা উদ্ধার দেখিয়ে আদালতে সোপর্দ করে পুলিশ। সে মামলায় পলাতক আসামি হিসাবে আমান উল্লাহ আমানুকে ২নং আসামী করেছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। তবে ঘটনায় সাহাব উদ্দিন কোন ভাবে জড়িত নয় বলে দাবী করেন তার এলাকার শতশত লোকজন। সে আমান উল্লাহর হিনো ট্রাকটি চালাতে বেতনধারী গরু মহিষ পৌছে দেওয়ার জন্য চাকরি নিয়েছিল কয়েকদিন আগে। এ ঘটনার মাস খানেক পর গত ৩ সেপ্টেম্বর ইয়াবার চালানপাচার করতে গিয়ে লোহাগাড়া থানার পুলিশের হাতে আটক হন তার স্ত্রী জমিলা বেগম (৩২)। এসময় তার দেহ তল্লাশি করে ৩ হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধার করে পুলিশ।

তথ্য অনুসন্ধানে জানা গেছে, আমান উল্লাহ তার নিজস্ব সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ইয়াবা এনে ঈদগাঁও থেকে ইয়াবার চালান পৌঁছে দিতো চট্টগ্রাম -ঢাকা শহরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। ইয়াবা সরবরাহের জন্য আমান উল্লাহর ছিল বিশাল সিন্ডিকেট। তবে বর্তমানে স্ত্রী আটকের পর আটকের ভয়ে সপ্তাহ ধরে গা-ঢাকা দিয়েছে। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, লবন চাষা হিসাবে কয়েক বছর লবন ব্যবসা করে আমান উল্লাহ। লবন বোঝাই ট্রাক নিয়ে যাওয়া হত নারায়ণগঞ্জ, ঢাকাসহ বিভিন্ন প্রান্তে। সে সুবাদে লবন ব্যবসা ছেড়ে রাতারাতি একটি হিনো ট্রাক কিনে নেয় সুচতুর আমান উল্লাহ। এলাকার লোকজন জানায়, ৫ বছর আগেও আমানু বিভিন্ন জনের কাছ থেকে টাকা ধার নিয়ে পরিশোধ করতে পারত না। যার ঘরে নুন আনতে পান্তা ফুরাত। সে এখন এত সম্পদের মালিক কি ভাবে হল? এমন সময় গেছে তার সংসার চালানো দুরূহ ব্যাপার হয়ে দাঁড়াত। কিন্তু ২০১৪ সাল থেকে তার কর্মকান্ড বদলে যেতে থাকে। তার চলাফেরা স্থানীয়দের ভাবিয়ে তুলত! ট্রাক নিয়ে গরু-মহিষ আনার সুযোগে টেকনাফ থেকে ইয়াবার চালান এনে হঠাৎ করে রাতারাতি কোটিপতি হয়ে যায় আমানু। গ্রামের বাড়িতে নির্মান করেছে আলীশান ঘর। ঘরের মধ্যে চারটি রুমেই টাইলস, দুটিতে এসি, প্রতিটি স্থরে টাইলস লাগানো হয়েছে। গত কয়েক বছরে নামে বেনামে কেনা হয়েছে জমি, গাড়ী, বিভিন্ন স্থানে বিপুল সম্পত্তির মালিক ও হয়েছেন তিনি। এছাড়া ইসলামী ব্যাংকসহ কয়েকটি ব্যাংকে প্রচুর পরিমান টাকা রাখারও সন্ধান পাওয়া গেছে। সারাদেশে মাদক বিরোধী অভিযান শুরু হলেও থামেনি তার ইয়াবা ব্যবসা। অত্যন্ত সুকৌশলে পাচার করত ইয়াবা। এলাকায় প্রচার রয়েছে টেকনাফ থেকে আনা গরু মহিষের পেটে করে প্রতিনিয়ত চালান আনত ঘরে। সময়ে অসময়ে গরু মহিষ অসুস্থ হয়ে পড়লে জবাই করে ইয়াবা গুলো বের করত আমানু। প্রতিনিয়ত ইয়াবা ব্যবসা করে আসলেও নজরে আসেনি কারো। তার চালচলন দেখলে মনে হয় বড় মহিষ ব্যবসায়ী। আসলে এলাকার লোকজন মনে করত সে ইয়াবা ব্যবসায় জড়িত থাকতে পারে। তবে কোন সময় আটক না হওয়ায় স্থানীয়রা বুঝতে পারেনি। স¤প্রতি তার স্ত্রী আটক হওয়ার খবরে পুরো এলাকায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়। বেরিয়ে আসে আমান উল্লাহ আমানুর অজানা কাহিনী। এভাবেই বিশাল ইয়াবা সিন্ডিকেট গড়ে তুলে রাতারাতি হয়ে যায় কোটি টাকার মালিক। ধবংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে যুব সমাজ। সম্প্রতি সরকার মাদকের বিরুদ্ধে জিরো ট্রলারেন্স ঘোষনা করলেও তার ইয়াবা ব্যবসা চিহ্নিত করতে না পারায় দুঃখ প্রকাশ করেন এলাকাবাসী।

এদিকে তার আয় ব্যয়ের হিসাব, সম্পদের উৎস খুঁজতে সংশ্লিষ্টদের কাছে অনুরোধ জানান এলাকাবাসী। তার বেপরোয়া ইয়াবা ব্যবসার কারনে তাকে আটক পুর্বক আইনের আওতায় আনতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেন সচেতন মহল।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ঈদগাঁও পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ পুলিশ পরিদর্শক মিনহাজ মাহমুদ ভুঁইয়া বলেন, ইতিমধ্যে আমান উল্লাহ প্রকাশ আমানুর বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। তার স্ত্রী ইয়াবাসহ আটক হয়েছে বলে শুনেছি। তাকেও আইনের আওতায় আনা হবে। এসব বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত আমান উল্লাহ আমানুর সাথে বিভিন্ন মাধ্যমে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। না পাওয়া তার বসত ঘরে যাওয়া হয়। সেখানেও পাওয়া যায়নি। তবে তার এক বৃদ্ধ মা ও কোমলমতি ৫ শিশু সন্তানকে পাওয়া যায়। মায়ের কাছে জানতে চাইলে তার মা আমিনা খাতুন বলেন ছেলে আমান উল্লাহ ৬/৭ দিন ধরে বাসায় আসছে না। কোথায় থাকে জানেন কি না জিজ্ঞেস করলে জানে না বলে জানায়। আমান উল্লাহ আমানুকে না পাওয়ায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।