সেলিম উদ্দিন দিদার , সৌদি আরব থেকে :
রেজাউল হক হেলাল, ফেনী জেলার দাগনভূঞা উপজেলার ৭নং মাতুভূঞা ইউনিয়নের আশ্রাফুরের বাসিন্দা। তিনি ১৯৮৮ সালে পারিবারিক ভাবে লক্ষিপুর জেলার রায়পুর নিবাসী অহিদুল্যার কন্যা নাছিমা আক্তারের সাথে ঢাকার কল্যাণপুরে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।

তিনি প্রবাসে আসার আগে ভারত, নেপাল, শ্রিলংকা, মালদ্বীপ সহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগে বাংলাদেশ দুতাবাসে চাকুরী করেন, টিএমএসএস এনজিও সংস্থার গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন, চাকুরীগত কারনে ও বাচ্চাদের পড়ালেখার সুবিধার জন্য দেশে এবং দেশের বাহিরে, যেমন ভারতের বোম্বে, দিল্লি, দেশের মধ্যে বগুড়া, ঢাকা সহ বিভিন্ন স্থানে স্বপরিবারে বসবাস করেন। দুই কন্যা সহ তাদের ২৫ বছরের দাম্পত্য জীবন খুব সুখেই অতিবাহিত হচ্ছিলো ।

সংবাদ সম্মেলনে নাবিলা হক ও জামিলা হক জিমুর হতভাগ্য পিতা কবি রেজাউল হক হেলাল জানান, ২০০৮ সালে অর্থনৈতিক আরো সমৃদ্ধির জন্য জীবিকার তাগিদে সৌদি আরব আসার সময় ঢাকা দনিয়া কলেজের পাশে ভাড়া বাসায় আদরের দুই কন্যা, স্ত্রী নাছিমাকে রেখে আসি।

আমি সৌদি আরব আসার পর বগুড়ার ছেলে কম্পিউটার শিক্ষক মশিউর রহমান মোহন পিতা,বজলুর রহমান কে আমার মেয়েদের কম্পিউটার শিখানোর জন্য রাখা হয়, সেই সুবাধে সে আমার বাসায় যাতায়াত করতো।

এক পর্যায়ে আমার বড় মেয়ের জন্য বিভিন্ন জায়গা থেকে বিয়ের প্রস্তাব আসছিলো, তার মধ্যে এই কম্পিটার শিক্ষক মশিউর রহমান মোহনও ছিলো। বগুড়া এবং ফেনীর দুরত্ব বেশী হওয়ায় আমি ফেনীর শাহিন পাটোয়ারীকে যাচাই বাঁচাই করে মেয়ের সম্মতিতে পছন্দ করি। তাদের বিয়ে ঠিক হয়।

কবি হেলাল বলেন, ২০১২ সালে ২৯ ফেব্রুয়ারী হঠাত আমার শাশুড়ি হাসিনা বেগম ও স্ত্রী নাছিমা আক্তার আমাকে ফোন করে জানান, আমার প্রথম মেয়ে যাত্রাবাড়ী দনিয়া কলেজের অনার্স তৃতীয় বর্ষের প্রতিভাবান মেধাবী ছাত্রী নাবিলা হক ব্রেন স্টোকে ইন্তেকাল করেছে। আমার মাথার উপর যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়লো।
হাজার ইচ্ছা থাকা সত্তেও ভিসা জটিলতার কারণে আমি তখন বাংলাদেশে যেতে পারিনি।
আমি যখন মেয়ের শোকে কাতর, তখন আমার বাসায় কল দিয়ে স্ত্রী নাসিমা ও মেয়ে জিমুর সাথে ফোনে কথা বলতে চাইলে আমার শাশুড়ি হাসিনা বেগম আমাকে বলতেন আমার স্ত্রী বেহুস, মেয়ে কান্নাকাটি করছে, বিভিন্ন অজুহাতে আমার শাশুড়ি কথা বলতে দিতেন না।

নাবিলা মৃত্যুর ২০/২৫ দিন পর হঠাত করে আমার শাশুড়ি জানান, আমার স্ত্রী মেয়ের শোকে মারা গেছেন, তখন প্রবাসে মানসিক ভাবে আমি বাকরুদ্ধ হয়ে পড়ি।

আমার পৈত্রিক বাড়ি থেকে শশুর বাড়ির দূরত্ব বেশী হওয়ায় এবং আমি প্রবাসে থাকায় অনেক বিষয় আমার অগোচরে রয়ে যায়।

নাবিলার মায়ের মৃত্যুর খবরের ৬/৭ মাস পর আমি বিভিন্ন সুত্রে খবর পাই, আমার স্ত্রী নাসিমা আক্তার মেয়েদের কম্পিউটার শিক্ষক লম্পট প্রতারক খুনি মশিউর রহমানের সাথে পরকীয়া প্রেমে লিপ্ত হয়ে ২৫ বছরের সাজানো সংসার ভেঙ্গে আমার অর্থ-সম্পদ,স্বর্ণালংকার সব নিয়ে পালিয়ে যায়। আমার শাশুড়ির কাছে এই বিষয়ে জানতে চাইলে তিনিও নিজ মেয়ের উপর ক্ষিপ্ত ছিলেন এবং আমাকে বলেছিলেন উনারা কলঙ্কিত মেয়ে নাছিমাকে ত্যাজ্য করেছেন।

তখনো আমার ইকামা সমস্যার সমাধান হয়নি।

আমার ছোট মেয়ে জামিলা হক জিমু তার নানুর কাছে রায়পুরে থাকে এবং রায়পুর এল এম স্কুলে ছষ্ঠ শ্রেনীতে তাকে ভর্তি করা হয়। আমার শাশুড়ি বলেন, তোমার জামিলা হক জিমুর বয়স যখন ১৮ বছর হবে তখন তাকে তোমার বাড়ীতে নিয়ে যেও।

আমার মান-সম্মান ও মেয়ের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে বুকে পাথর চেপে আইন আদালতে যাইনি। কিন্তু মেয়ের যাবতীয় খরচ আমার শাশুড়ির মাধ্যমে চালিয়ে গিয়েছি।

বিগত ২০১৫/১৬ সালের কোন এক সময় অজানা গন্তব্য থেকে ফিরে এসে আমার শাশুর শাশুড়িকে ম্যানেজ করে স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে, আমার মেয়ে জিমুর পিতা সেজে রায়পুর পৌরসভায় আমার শশুরের শশুর বাড়ীতে পরিবার ধ্বংসকারি পরকীয়া প্রেমিক প্রেমিকা মশিউর রহমান মোহন ও নাছিমা আক্তার আমার শশুর শাশুড়ি ও মেয়ে জিমুর সাথে বসবাস শুরু করে।

আমার বৃদ্ধা মা দিলবাহার বেগম কয়েক দফা আমার মেয়ে জিমুকে রায়পুর থেকে আনতে গিয়ে জিমুর নানা নানুর অমতের কারণে আমার মেয়েকে ফেনীর বাড়ীতে আনতে ব্যর্থ হয়।

গত ২৭শে আগষ্ট দেশ থেকে খবর পাই রায়পুর রেসিডেন্সিয়াল স্কুল এন্ড কলেজের একাদশ শ্রেনীর মেধাবী ছাত্রী আমার মেয়ে জামিলা হক জিমু ইন্তেকাল করেছে!

ফেনী থেকে আমার নিকটাত্মীয়রা রায়পুর ছুটে যায়। সেখানে গিয়ে তারা জানতে পারে লাশ ময়না তদন্তের জন্য লক্ষিপুর নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ঐবাড়িতে জিমুর নিকট আত্মিয়দেরকে অনেক খোঁজা খুজির পর এক পর্যায়ে হটাৎ নাবিলার মায়ের সাথে দেখা হলে কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই বাগানের মধ্য দিয়ে সে অন্যত্র লুকিয়ে যায়। আমার নিকট আত্মীয়রা প্রতিবেশীদের কাছে খোঁজ নিয়ে জানতে পারে আমার জিমু ফেনীতে তার বাবার বাড়ীতে বেড়াতে যাওয়ার বায়না ধরলে তার ডাইনী মা ও মায়ের পরকীয়া প্রেমিক মশিউর রহমান আমার জিমুকে হত্যা করে।

আমি আশংকা করছি, আমার বড় মেয়ে নাবিলা হক ও জামিলা হক জিমু দুই জনকে সমাজ বিধ্বংসী পরকীয়ার কারণে পরিকল্পিত ভাবে ঠান্ডা মাথায় নিষ্ঠুর এই পাষন্ড ঘাতক নাছিমা আক্তার ও মশিউর রহমান মোহন মিলে নৃশংস ভাবে হত্যা করেছে। তারা আমার দুই মেয়েকে পরকীয়ার বলি বানিয়ে দুনিয়া থেকে বিদায় এবং আমার সাজানো সংসার ধ্বংস করে দিয়েছে।

অসহায় প্রবাসী কবি রেজাঊল হক হেলাল বিনীত আহবান জানান, দুই দুইটি বিবাহ উপযুক্ত মেয়েকে পরকীয়ার বলি বানিয়ে হত্যা ও আমার ২৫ বছরের সুখী পরিবার ধ্বংসের সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে সঠিক বিচার পেতে মাননীয়া প্রধান মন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা, পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রানলয়, প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় গণমাধ্যামক্রমী ও দেশের আইনশৃংখলা বাহিনীর সুদৃষ্টি কামনা করছি।

পরিকল্পিত ভাবে হত্যার মূল হোতা ঘাতক মশিউর রহমান মোহন, স্ত্রী নাছিমা ও শাশুড়ি হাসিনা বেগমকে গ্রেফতার করে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার দাবি জানাচ্ছি।

উল্লেখ্য, মিথ্যা তথ্য দিয়ে গনমাধ্যমে জামিলা হক জিমু মৃত্যুর খবর পরিকল্পিত ভাবে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেয়া হয় এবং জিমুর পিতা রেজাউল হক হেলালের নাম না লিখে পিতা হিসেবে মশিউর রহমানের নাম লিখা হয়। তবে ভয়েস অফ বাংলা নামে একটি নিউজ পোর্টাল জিমুর মৃত্যুর সংবাদ হত্যা হিসেবে উল্লেখ করেন। পরদিন স্থানীয় এলাকাবাসী মেধাবী ছাত্রী জামিলা হক জিমু হত্যার সুষ্ঠু বিচার চেয়ে প্রতিবাদ মিছিল ও মানব বন্ধন করে।