মো: গোলাম মোস্তফা ( দুঃখু )

১.

আজ চিঠি লিখতে বসে কেন জানি মনে হচ্ছে আমি ভুল করছি নাতো ? তবে আমার প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবে একজন সে হচ্ছে দিদি মুন্নি সাহা। কারণ আমার সবকিছুর মাঝে এক অচেনা সুরের মতো দিদি সবসময় পাশে থেকেছে, তাই আমার মনে হয় আমার স্বপ্ন দেখানো ব্যক্তি পারবে আমার প্রশ্নের উত্তর দিতে। আমি যখন রিকশা চালাতাম সেই দিন টিভি দেখতেছিলাম হাশেম ভাইয়ের দোকানে , হঠাৎ করে চোখ গেলো এটিএন নিউজ চ্যানেলে । একটি অনুষ্ঠান হচ্ছিলো আর সেই অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করছিলেন দিদি মুন্নি সাহা, আমি পড়া লেখা ছেড়ে দিয়েছি প্রায় একবছর হলো । দিদির কথা বলার ধরণ দেখে আমার কাছে মনে হলো সাংবাদিক দিদি এত সাহস কোথায় থেকে পায় ! এত ক্ষমতাবান ব্যক্তিদের কেউ ছাড় দিয়ে কথা বলে না, সাহস হলো দিদির সততা, উনার কলমের শক্তি উনাকে সবসময় সাহস দিয়ে থাকে। এই কথা গুলো আগে বুঝতাম না, এখন বুঝতে পারি সাংবাদিক হলো দেশের সততার প্রাণ। মানুষ রাজনীতিক ব্যক্তিদের চেয়ে সাংবাদিকদের বেশি বিশ্বাস করেন আমার তাই মনে হয় ।
২.

সেই চায়ের দোকান থেকে আমি স্বপ্ন দেখা শুরু করলাম , আমি ও দিদির মতো সাংবাদিক হবো । কিন্তু আমি তো পড়া লেখা ছেড়ে দিয়েছি অনেক আগে, রাতে শুয়ে শুয়ে বার বার একি চিন্তা মাথায় ঘুরপাক খায়। আমি কিভাবে দিদি মুন্নি সাহার মতো সাংবাদিক হবো, সকালে সিদ্ধান্ত নিলাম আমি শহরে গিয়ে রিকশা চালাবো আর স্কুলে নতুন করে ভর্তি হবো। যেই কথা সেই কাজ আমি গ্রাম থেকে শহরে চলে গেলাম আর স্কুলে ভর্তি হয়ে গেলাম ক্লাস শুরু হয়ে গেছে, দিনে ক্লাস করি রাতে রিকশা চালাই। এইভাবে এস এস এসি পাশ করি, আর এর সাথে আমার স্বপ্ন আরো বেশি করে আমার কাছে আসতে শুরু করলো । তবে এর মাঝে আমার জীবনের সকল কষ্ট গুলো ভুলে গিয়েছি শুধু দিদি কে ভালোবাসি বলে, আমি জানি না কখনো উনার সাথে দেখা হবে কিনা। যদি কখনো দেখা হয় শুধু এটুকু বলবো ” দিদি স্বপ্ন গুলো মানুষ কে এত কষ্ট দেয় কেন? “তোমাকে দেখে সাংবাদিক হওয়ার স্বপ্ন দেখি আর সেই পথে আমি চলছি ।

৩.

রাতে কখনো ভাত খেতাম না কারণ আমি রাতে ভাত খেলে আমার স্বপ্ন আমাকে ছেড়ে চলে যাবে, আমাকে পড়তে হবে আর পড়ার জন্য প্রয়োজন অনেক টাকা। সেই জন্য শুধু দুপুরে ভাত খেতাম সকালে মুড়ি খেয়ে থাকতাম সবসময় , আমার বাবা, মা নেই। আমি অনেক ছোট বেলা থেকে একা থাকি, কখনো যে পড়া লেখা করবো এই চিন্তা কখনো করিনি। তবে আজ স্বপ্ন দেখি সাংবাদিক হবো ” দিদি মুন্নি সাহার মতো ” আমি জানি না পারবো কিনা তবে চেষ্টা শেষ পর্যন্ত করে যাবো। রাতে যখন পড়ার টেবিলে বসতাম অনেক কষ্ট হতো। ক্ষুধার জন্য পড়তে ইচ্ছে করতো না, একদিন রাতে হঠাৎ করে ঘুম ভেঙ্গে যায় সেই রাতে আর ঘুম হয়নি । বাবা, মা কে অনেক মিস করেছি সারা রাত। মাঝে মাঝে নিজের প্রতি অনেক রাগ হয়, সেদিন যদি চায়ের দোকানে না বসতাম । তাহলে আজ আমার এতো কষ্ট হতো না, এটিএন নিউজের অনুষ্ঠান দেখার পর থেকে আমার কষ্ট শুরু। কারণ দিদি মুন্নি সাহা আমাকে সাংবাদিক হওয়ার স্বপ্ন দেখিয়েছে উনার অনুষ্ঠানের মাধ্যমে, এই জন্য সকল রাগ কষ্ট আবার চলে যায় কিছুক্ষণ পরেই।
৪.

এপ্রিলের এক তারিখ থেকে আমার এইচ এস সি পরীক্ষা শুরু রিকশা চালানো বন্ধ করে দিলাম পরীক্ষার জন্য , কিন্তু কি করে চলবে আমার দিনকাল।সেই জন্য রাতে মাঝে মাঝে হোটেলে কাজ করতাম। পরীক্ষার এক দিন আগে হোটেলের কাজও বন্ধ করে দেই, সকলে তার বাবা , মা, না হলে ভাই কারো না কারো সাথে পরীক্ষার হলে আসতেছে। আর আমি সারা রাত পড়া শেষ করে সকালে শুধু পানি খেয়ে পরীক্ষার হলের সামনে চলে যাই একা একা, আমার তো কেউ নেই ! আমি কাকে নিয়ে পরীক্ষা হলের সামনে যাবো, তবে আমার সাথে আছে সবসময় ছায়া হয়ে আমার স্বপ্ন আর দিদি মুন্নি সাহার দোয়া।

৫.

এইচ এস সি পাশ করার পর মনে হলো আমি পারবো তো সাংবাদিকতা বিভাগে পড়তে? সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দেওয়া হয়নি কারণ কোন এক রাগ থেকে। এখন আমি কিভাবে সাংবাদিকতা বিভাগে পড়বো সেই চিন্তায় রাতে ঘুম আসে না, একদিন মনে হলো প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকতা বিভাগে আমি পড়তে পারি । সেই আশায় সারা রাত দিন কাজ করা শুরু করলাম, আর বাসায় গিয়ে গিয়ে ছাত্র পড়ানো শুরু করলাম। এই দিক দিয়ে আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি টাকা জোগার হয়ে গিয়েছে, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিকতা বিভাগে ভর্তি হয়ে গেলাম। যেদিন ভর্তি হলাম সারা রাত কান্না করেছি বাবা আর মাকে ডেকে ডেকে, আমি পেরেছি বাবা, মা দেখ তোমার সন্তান আজ প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি হয়েছে সাংবাদিক হওয়ার জন্য। মা কত রাত না খেয়ে ছিলাম আজ সকল কষ্ট ভুলে গিয়েছি, তবে তোমাকে আর বাবা কে খুব মিস করছি । আমার অনেক কষ্ট হচ্ছে , আমাকে বলার মতো কেউ নেই খোকা তোর কষ্ট কোথায় হচ্ছে? আমাকে বল বাবা, মাগো আমার এত কষ্ট কেন ? এই পৃথিবীর মাঝে আমি একা একা আর পারছি না, আমার স্বপ্ন আমাকে এখনো বাঁচিয়ে রেখেছে মা।
৬.

আজ সাংবাদিকতা বিভাগে পড়ছি, আমার পাশে আছে আমার স্বপ্ন আর দিদি মুন্নি সাহার দোয়া। আমি কোন দিন উনাকে দেখিনি তবে সবসময় চেষ্টা করি উনার অনুষ্ঠান গুলো দেখার, আমার জীবনের চলার পথে আমি নিজের পরিচালক। আমার স্বপ্ন হবে সাধারণ মানুষের হয়ে কথা বলা, ওদের কষ্ট হবে আমার সাথী। আর আমার লক্ষ্য সবসময় নিজের প্রতি নিজেকে বিশ্বাস করা কারণ এর মাঝে হবে আমার সাংবাদিকতার পথ চলা।

লেখক : বিতার্কিক-শিক্ষার্থী, সাংবাদিকতা বিভাগ, পোর্ট সিটি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি,খুলশী
চট্টগ্রাম।