মো:গোলাম মোস্তফা ( দুঃখু ) 

সকাল হলে আমার খুব ভালো লাগে কারণ সকালের মাঝে আমি নিজের ভালো লাগা গুলো খুজে পাই, আজ আমি সকাল সকাল বইয়ের দোকানে যাবো, নতুন কিছু গল্পের বই কেনার জন্য। বই কেনার পর বাসায় এসে গ্রামের বাড়ীর উদ্দেশে রওনা হবো। বই কেনা শেষে বাসায় এসে রান্না করতে বসলাম ও বলে রাখি আমি আমার রান্না নিজেই করি, রান্না শেষে গ্রামের বাড়ীতে গেলাম আমার গ্রামের নাম চূরখাই । আমাকে দেখে অনেক মানুষ জমা হতে লাগলো, সবাই এসে আমার গায়ে হাত দিয়ে বলতে লাগলো এই টা কালামের ছেলে এত বড় হয়ে গেছে। পরিবেশের সাথে নিজেকে মানিয়ে নিতে একটু সময় লাগলো,  গ্রামের বাড়ীতে কোন ঘর নেই আমার। আমার বয়স যখন চার মাসের তখন আমি মায়ের সাথে চলে যাই নানার বাড়ীতে। এর মাঝে কখনো গ্রামে আর আসা হয়নি, প্রায় ২৪বছর পর গ্রামের বাড়ীতে এলাম। গ্রামে যাওয়ার পর থেকে কিছু ভালো লাগছে না আসার পর থেকে অনেক কষ্ট হচ্ছে, বাড়ীর ভিটে পড়ে আছে কোথাও কিছু নেই। বাড়ীর সাক্ষী হয়ে দাড়িয়ে আছে দুটি নারিকেল গাছ, গাছের কাছে গিয়ে বার বার প্রশ্ন করছিলাম তুমি বলতে পারো ?  আমার বাবার কবর কোথায় ? কি গো কথা বলছো না কেন?  উওর দাও ?  আমার বাবার কবর কোথায় ? সাহেব কি করছেন?  গাছ কি করে আপনার কথার উওর দিবে, তাহলে তুমি বলো আমার বাবার কবর কোথায় ?  বলো না, আমার খুব কষ্ট হচ্ছে। একবার বাবার কবরে মাথা রেখে ঘুমাতে চাই, কতোবছর ধরে এই দিন টির অপেক্ষায় ছিলাম আমি গ্রামে আসবো। বাবার কবরে পাশে শুয়ে শুয়ে বাবার সাথে কথা বলবো, আজ যখন এসেছি আমার বাবার কবর কোথায় হয়েছিলো কেউ বলতে পারছে না। আমি কার কাছে গেলে জানতে পারবো বাবার কবরের ঠিকানা, মা মারা যাবার পর কেউ আমাকে বলেনি আমার গ্রাম কোথায়। সেদিন ঘরের আলমারি পরিষ্কার করতে গিয়ে মায়ের লেখা চিঠিতে আমার বাবার কথা আসে, তখন গ্রামের নামটি প্রথম শুনি। বিকাল হয়ে আসছে  আমি বাড়ীর ভিটেতে শুয়ে আছি, সবাই চলে গেছে আমি রেয়ে গেলাম বাবার ঘরে। আজ ঘর নেই চালা নেই তাতে কী বাবার হাতে লাগানো নারিকেল গাছের পাতা গুলো আমার ঘরের চালা, আজ সারা রাত আমি এখানে থাকবো। বাবার সাথে কথা বলবো আর মায়ের ঠিটি গুলো পড়বো। মায়ের হাতে প্রথম চিঠি বাবা কে নিয়ে লেখা, প্রিয় নিরবের বাবা.. অনেক দিন পর তোমার জন্য চিঠি লিখতে বসেছি, তুমি চলে যাওয়ার পর তোমার ছেলে কে আমি তোমার মতো করে মানুষ করেছি। কখনো মানুষের বাড়ীতে কাজের লোক হিসেবে কাজ করছি, আবার কখনো রাস্তার মাটি কেটেছি। আমাদের নীল আজ বড় হয়েছে আমাকে এখন আর কোন কাজ করতে দেয়না, আমি কখনো তোমার গ্রামের বাড়ীর ঠিকানা ওকে দিইনি কারন অজানা একটি ভয় আমাকে সবসময় তাড়া করতো। এই জন্য তুমি আমাকে ক্ষমা করে দিয়ো নীলের বাবা, আমি যখন চলে আসবো তোমার কাছে তখন ও এই চিঠি টি পেলে জানতে পারবে ওর গ্রামের বাড়ী চূরখাই। নীলের বাবা তুমি কি আমাকে আর নীল কে দেখতে পাও ? তোমার শূন্যতা আমাকে লাশ বানিয়ে রেখেছে। সমাজে বিধবা নারীর কোন মূল্য নেই, সারাদিন লোকে খারাপ খারাপ কথা বলে তখন মনে হয় বিষ খেয়ে মারা যাই, নীলের মুখের দিকে তাকিয়ে আর পারি না। তোমার মনে আছে যখন প্রথম শুনেছিলে তুমি বাবা হবে তখন তোমার চোখ দিয়ে জল পড়ছিলো, আমি জিজ্ঞেসা করেছিলাম আমাদের সন্তান হবার কথা শুনে তুমি খুশি হওনি ? তুমি বলেছিলে আমার জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ আসতে চলেছে পৃথিবীর মাঝে তাই তো চোখের জল ধরে রাখতে পারলাম না খুশির খবর শুনে, জানো মাজেদা আমি পৃথিবীতে আসার আগেই বাবা মারা যান। তাই ভয় হচ্ছে আমার সন্তান তার বাবা কে দেখতে পারবে তো ? এসব কি বলছো তুমি এমন কথা বলতে নেই। নীলের বাবা তোমার কথা যে সত্যি হয়ে যাবে কে জানতো, তোমার মতোই নীল তার বাবা কে দেখতে পারলো না। নীলের বাবা আমি খুব তাড়াতাড়ি তোমার কাছে আসবো, তোমার একা একা খুব কষ্ট হচ্ছে না তো ? আমায় ভুলে যাওনিতো আবার নীলের বাবা ?  আজও আমি রাত জেগে তোমার অপেক্ষায় চেয়ে থাকি। জানি তুমি আসবে না তার পরেও মন যে  কথা শুনতে চায় না, নীল তোমার জন্য খুব কষ্ট পায়। ও রাতে একা একা তোমার নাম ধরে চিৎকার করে কান্না করে, আমি শুনতে পাই বাবা, ও বাবা তুমি কোথায় ? ছেলের কান্না দেখে নিজেকে অসহায় মনে হয় নীলের বাবা। আমি খুব তাড়াতাড়ি আসবো তোমার কাছে,তুমি যেখানেই থাকো ভালো থেকো নীলের বাবা – ইতি তোমার সন্তানের মা।

লেখক : শিক্ষার্থী, সাংবাদিকতা বিভাগ, পোর্ট সিটি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, খুলশী ,  চট্টগ্রাম।