শোকহরিণী

প্রকাশ: ২০ জানুয়ারী, ২০১৮ ০৯:১৮

পড়া যাবে: [rt_reading_time] মিনিটে


আলমগীর মাহমুদ :

লিংরোডগামী টমটমের প্যাসেঞ্জার ছিলাম। টমটম নির্দেশক বয়স সত্তরের উপরে বাদে নীচে নয়।কূঁজো হয়ে ধরে আছে স্টিয়ারিং।পেছনের সিটে একঝাঁক জীবন সকালের যাত্রী। এপ্রোন পরা। বুঝাই যাচ্ছিল এরা কলেজগামী।

কক্সবাজার বি,ডি,আর অডিটোরিয়ামে তখন চলমান ছবিটির নাম “টাকার চেয়ে প্রেম বড়’ বেশ রসিয়ে পড়ছিল তরুণীরা। বিনিময় চলছিল রোমান্টিক কথামালার।

তারা গাড়ীতে।গাড়ীতে আরো কেউ আছে তা ছিল বেমালুম। ড্রাইভার কথন শুনছে আর ঝমকাচ্ছে সাথে কম ভলিয়ুমে হুৎকার দিচ্ছে — টাকার চেয়ে প্রেম বড় হু..টাকার চেয়ে প্রেম বড় হু..

চালকের বামপাশের সিটে এমন দৃশ্যে আমি চমকালাম।জানতে চাইলাম চাচা এই বয়সে গাড়ী চালান ছেলে সন্তান নেই? সব আছে। তাইলে?.. হুনছ না বেঠিরা কয় কি, টাকার চেয়ে প্রেম বড়! টাকার চেয়ে প্রেম বড় অইলে এ বয়সে গাড়ী চালাই ?

সবাই চুপচাপ। বাস টার্মিনাল পৌঁছা পৌঁছা ঠিক এই সময় পেছন থেকে একজন কয়,দাদু টাকার চেয়ে প্রেম বড় না তাইলে! .. তোরা আমারে নানা বুলাইছ যতক্ষণ গাড়ীতে থাকছ।আপনে মাত মা’য়ে শেখনের সময় হয় নাই।মাইন্ড করলে কিছু পাবি না। তোদের সাথে আর একটা লাইন যোগ কর,’প্রেমের চেয়ে পেট বড়’।

সবাই একসাথেই কইল ‘নানাতো বেশ রোমান্টিক। ‘বুড়া নাক ছিটকায়ে… ‘রোমান্টিক তোমান্টিক এগুনেরে এখন গুলি করত মন চায়।’তোরারে বুঝাইলে এখন বুঝতি ন..তোরা ত চাকরির টিকেট কাটনর লায় মরিয়া,শিখনর লায় যদি এইরকম মরিয়া অইতি তোদের কুয়ালত ঘিলাফুল ফুইট ত।একজন একখান সুখর কারখানা বনতি।

সবাই এবার নানারেই নানা! আমরারে সুখের কারখানা বনার তালিম কোথায় পাওয়া যায় শিখিয়ে দেন প্লিজ।আমরা আপনারে মনে রাখবো।
মনে তনে রাখন লাগত ন। সোজা হিসেবে আইলে আমি তোদের সে বিশ্ববিদ্যালয় দেখিয়ে আনবো।তবে একখান শর্ত আছে।মনে রাইছ ভোলার মানুষ আমি তোদের কাক্সবাজারইজ্যা জামাই।তর বইনর হাতমেলা এই খরচখান তোদের দিতে অইব।একজনে বিশটাকা করে ভাড়া দিবি আমি দেখিয়ে আনবো সেই বিশ্ববিদ্যালয়।

সবাই রাজি। বুড়া গাড়ী ঘুরিয়ে টারমিনালের পাশে সি,এন,জি পাম্প। শত শত গ্যাস নিতে আসা সি এন,জি র কাছে নিয়ে গাড়ি দাঁড় করিয়ে কয় ‘সি,এন,জি র পেছনে কি লেখা এগুলো দেখ। পারলে লেইখা নে।ঘরে যাইয়া ভাবিস ভেতরে কি?

এবার তিনি দেখাচ্ছেন সবাই পড়ছে..একশত হাত দূরে থাকুন।/নামাজ বেহেশতের চাবি/ /ব্যবহার বংশের পরিচয় /রেগে গেলেনতো হেরে গেলেন;/নিরাপদ দুরত্বে থাকুন/
জয় বাবা লোকনাথ/আপনার সন্তানকে স্কুলে পাঠান/আমি ছোট আমারে মেরো না/চলার পথে আল্লাহকে স্মরণ করুন/একটি দূর্ঘটনা সারাজীবনের কান্না/ বিয়ের পর বিদেশ যাবেন না/………….

এবার গাড়ীতে উঠানোর আগেই ভাড়ার বিশ টাকা করে নিয়েই বয়ান… শিক্ষা পুঁথিগত বিদ্যায় নয়। পথে, ঘাটে, প্রকৃতির ঘুরপাঁকে।ছাত্রের মানস রাখলে এমন শিখন পাবি— যার অর্জনে হবি ‘শোকহরনী’।
পুথিরঁ বিদ্যায় সুখ খোঁজলে হবি ‘সুখহরণী’।
যদি দু’টি মিলাইতে পারস ধামাধুম মাছকেলেন্ডার হয়ে রইবি “শোকহরিণী”!…শোকহরিণী!….

লেখক: উখিয়া কলেজের সমাজবিজ্ঞানের শিক্ষক।