বিদেশ ডেস্ক:
ফেসবুক আর গুগলের মতো বহুজাতিক কর্পোরেশনগুলো ‘বহুরাষ্ট্রিক ডিজিটাল ফেডারেশন’র রূপ নিয়ে সমাজের বিরাজমান গণতান্ত্রিক কাঠামোর ভিত্তিমূলে আঘাত করছে; মন্তব্য করেছেন বিশ্বজুড়ে সাড়া জাগানো বিকল্পধারার সংবাদমাধ্যম উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ।

তিনি মনে করছেন, সমাজের ওপর গুগল ও ফেসবুক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার যান্ত্রিক আধিপত্যকে এমন এক পর্যায়ে নিয়ে যাচ্ছে; যা মানব সভ্যতাকে হুমকির মুখে ঠেলে দিয়েছে। অ্যাসাঞ্জের এক বিবৃতিকে উদ্ধৃত করে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস টাইমসের এক প্রতিবেদন থেকে এসব কথা জানা গেছে।

সুইডেনে দুই নারীকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ ওঠার পর ২০১২ সালের জুন থেকে লন্ডনের ইকুয়েডর দূতাবাসের আশ্রয়ে আছেন অ্যাসাঞ্জ। তবে ধর্ষণের অভিযোগ বরাবরই অস্বীকার করে আসছেন তিনি। ওয়ার্ল্ড সোশ্যালিস্ট ওয়েবসাইটের আয়োজনে অনলাইনভিত্তিক সেমিনার ‘অর্গানাইজিং রেসিসট্যান্স টু ইন্টারনেট সেন্সরশিপ’ অনুষ্ঠানের জন্য দূতাবাস থেকেই একটি বিবৃতি দিয়েছেন অ্যাসাঞ্জ। নিজেকে ভূ-রাজনীতি বিশ্লেষক দাবি করা অ্যাসাঞ্জ বলেন, এই বড় টেক কোম্পানিগুলো ‘বহুরাষ্ট্রিক ডিজিটাল ফেডারেশন’ গড়ে তুলছে।
মঙ্গলবার তার এই বিবৃতি সবার সামনে উপস্থাপন করা হয়। তিনি বলেন, গুগল, ফেসবুক ও তাদের চীনা প্রতিপক্ষের মতো বহুরাষ্ট্রিক ডিজিটাল ফেডারেশনের উত্থান এবং তাদের বিদ্যমান কাঠামোর আওতায় তাদের সংযুক্তি নতুন সামাজিক কাঠামোকে সামনে আনছে। সৃষ্টি হচ্ছে যোগাযোগের নতুন ধারা।’অ্যাসাঞ্জ বলেন, ‘ইন্টারনেট একদিকে যেমন পরষ্পরকে জানার ক্ষেত্রে ও শিক্ষার ক্ষেত্রে যেমন বিপ্লব এনেছে, অন্যদিকে তেমনি বিরাজমান গণতান্ত্রিক কাঠামোর ভিত্তিমূলে আঘাত করছে।‘
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার এই সামাজিক প্রভাব মানবসভ্যতার জন্য হুমকি বলেই মনে করেন অ্যাসাঞ্জ। তিনি বলেন, এই টেক কোম্পানিগুলো সংস্কৃতি ও রাজনীতিকে নতুন রুপ দিচ্ছেন। তারা এমন গতি ও আকারে এই কাজ করতে সক্ষম যা আগে কখনোই সম্ভব ছিল না।
অ্যাসাঞ্জ বলেন, পারমাণিক যুদ্ধ, জলবায়ু পরিবর্তন, মহামারী আকারে রোগ ছড়িয়ে পড়া আমরা আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করতে পারি। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেলে সেটা হবে বেশি মারাত্মক। ডিজিটাল হুমকি নিয়ে তিনি বলেন, ভবিষ্যতে দ্বন্দ্ব হবে যে মানুষ যন্ত্রকে নিয়ন্ত্রণ করবে নাকি মানুষকে যন্ত্র।
অ্যাসাঞ্জের আশঙ্কা, তিনি সুইডেনে গেলে সুইডিশ সরকার তাকে গ্রেফতার করে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের কাছে প্রত্যর্পণ করবে। আর যুক্তরাষ্ট্র সরকার তাকে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে বিচারের নামে মৃত্যুদণ্ড দেবে। ইকুয়েডর দূতাবাস থেকে বের হলে সুইডেন বা যুক্তরাষ্ট্র সরকারের কাছে প্রত্যর্পণ না করার নিশ্চয়তা চান অ্যাসাঞ্জ। গত বছর সুইডিশ প্রসিকিউটররা ওই অভিযোগের তদন্ত বন্ধ করে দেন। তবে জামিনের শর্ত ভঙ্গ করায় তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি রয়েছে। উইকিলিকসের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে মার্কিন কতৃপক্ষও অ্যসাঞ্জকে বের করে দিতে চাপ দিচ্ছেন।