পাভেল হায়দার চৌধুরী , বাংলাট্রিবিউন : বিএনপির সঙ্গে গত ১৫ অক্টোবর অনুষ্ঠিত সংলাপে দলটির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানকে বহুদলীয় গণতন্ত্রের পুনঃপ্রবর্তক বলে উল্লেখ করেন। এ ঘটনার পর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা ক্ষোভ প্রকাশ করলেও বৃহস্পতিবার (২৬ অক্টোবর) সংবাদ সম্মেলনে একই বক্তব্যের পুনরাবৃত্তি করেন সিইসি। এদিন সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি নিজে ধারণ করি বলেই জিয়াউর রহমানকে গণতন্ত্রের পুনঃপ্রতিষ্ঠাতা বলেছি। তবে কাউকে খুশি করার জন্য বলিনি। যেটা বলেছি সেটা তথ্যভিত্তিক। আমি নিজেও এটা ওন (ধারণ) করি।’ তার বক্তব্যের পুনরাবৃত্তি হওয়ায় দ্বিতীয় দফা ক্ষুব্ধ করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে। তবে এই ইস্যুতে দলটির নেতারা প্রকাশ্যে মুখ খুলতে রাজি হচ্ছেন না। ইস্যুটি নিয়ে কোনও নেতাকে প্রকাশ্যে প্রতিক্রিয়া জানাতেও নিষেধ করেছেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। দলটির একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা বাংলা ট্রিবিউনকে এই তথ্য জানিয়েছেন।

আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর একাধিক নেতা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনানুষ্ঠানিক এক বৈঠকে নেতাকর্মীদের এ ব্যাপারে কথা না বলতে কড়া নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন দলের সাধারণ সম্পাদক। তিনি দলের সভাপতির বরাত দিয়ে এই নিষেধজ্ঞা আরোপ করেন।

এই প্রসঙ্গে নাম প্রকাশ না করার শর্তে সম্পাদকমণ্ডলীর একাধিক নেতা জানান, ‘অনির্ধারিত এই সভায় সিইসির বক্তব্য নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বৈঠকে সিইসির বক্তব্য নিয়ে অনেক কেন্দ্রীয় নেতা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। কিন্তু প্রকাশ্যে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে কথা না বলার পরামর্শ দিয়েছেন দলের সাধারণ সম্পাদক।

প্রসঙ্গত, গত ১৮ অক্টোবর ইসির সঙ্গে আওয়ামী লীগের সংলাপ শেষে ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, জিয়াউর রহমানকে গণতন্ত্রের পুনঃপ্রবর্তক বলার বিষয়ে সিইসির কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে। তিনি ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তার ব্যাখ্যায় আমরা সন্তুষ্ট। কিন্তু এ প্রসঙ্গে বৃহস্পতিবারের (২৬ অক্টোবর) সংবাদ সম্মেলনে সম্পূর্ণ ভিন্ন তথ্য দিয়েছেন সিইসি। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আমার কাছে এই বিষয়ে কোনও ব্যাখ্যা চাওয়া হয়নি।

সিইসির এমন বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের অনির্ধারিত বৈঠকে দলের সম্পাদকমণ্ডলীর দুই সদস্য বলেন, গণতন্ত্রের পুনঃপ্রবর্তক ইস্যুটি নিয়ে সিইসি বিভ্রান্তি ছড়িয়েছেন। এ ব্যাপারে অন্তত তার সঙ্গে কথা বলার দাবি তোলেন তারা। জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘দরকার নেই।’ তবে কেন, কোন প্রেক্ষাপটে সিইসি এ কথার পুনরাবৃত্তি করেছেন, আওয়ামী লীগ তার হেতু খোঁজার চেষ্টা করছে বলেও এই নেতারা বাংলা ট্রিবিউনকে জানান।

আওয়ামী লীগের নীতি-নির্ধারণী সূত্রগুলো জানিয়েছে, সিইসি ইস্যুতে সর্বোচ্চ ধৈর্য ধারণ করতে চান তারা। কোনোভাবেই সিইসিকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চান না। আসলে কী কারণে এসব বিষয়ের অবতারণা ঘটছে, তা পরিষ্কার নয় ক্ষমতাসীন দলটি। দলের শীর্ষ নেতারা আগে এই বিষয়ে পরিষ্কার ধারণা পেতে চান। এরপর প্রয়োজন হলে মুখ খুলবেন।

জানতে চাইলে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্যাহ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনারের বক্তব্য নিয়ে কথা বলতে চাই না।’ তিনি বলেন, ‘এ ব্যাপারে কথা বলতে হলে দলের সাধারণ সম্পাদক বলবেন।’ তবে এ বিষয়ে জানতে চাইলে ওবায়দুল কাদের বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমি কোনও কথা বলব না।’

এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবউল আলমের কাছে জানতে চাইলে তিনিও প্রতিক্রিয়া জানাতে রাজি হননি।