বিদেশ ডেস্ক:
রাখাইনের জাতিগত নিধন থেকে বাঁচতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা প্রায় ৬ লাখ রোহিঙ্গাকে ফিরিয়ে নিতে সে দেশের সরকারের দেওয়া প্রতিশ্রুতি রুৃখে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে বৌদ্ধ উগ্রবাদীরা। ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, এক প্রতিবাদে বিক্ষোভ আয়োজনের মধ্য দিয়ে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে নেওয়া সু চির পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে দেবেন না বলে হুঁশিয়ার করেছেন তারা।
রাখাইনে রোহিঙ্গাবিরোধী বিক্ষোভ২০১৭ বৃহস্পতিবার রাতে মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে দেওয়া এক ভাষণে অং সান সু চি বলেন, রাখাইন থেকে পালিয়ে যাওয়া ‘মানুষের’ প্রত্যাবাসনে বাংলাদেশের সঙ্গে আলোচনা চলছে। আমাদের স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত দুই বার এই বিষয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। সফল অতীতের উপর ভিত্তি করে আমরা তৃতীয়বারের মতো আলোচনা করছি।’ এর কয়েকদিনের মাথায় সরকারের শীর্ষ কর্মকর্তাদের উদ্ধৃত করে আল জাজিরা জানায়, মিয়ানমারের পক্ষ থেকে প্রতিদিন ১০০ জন রোহিঙ্গাকে ফেরত নেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনমন্ত্রী উইন মিয়াত আইয়ি আল জাজিরাকে জানান, যাদের পরিচয় মিয়ানমার সরকারের নথিতে থাকবে তাদের ফিরিয়ে নেওয়া হবে।
রাখাইন প্রদেশের রাজধানী সিত্তিতে রোহিঙ্গাদের ফেরত নেওয়ার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে অংশ নেন বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের শত শত উগ্রবাদী। ২০১২ সালের সহিংসতার সময় এই সিত্তি থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আসতে বাধ্য হয় হাজার হাজার রোহিঙ্গা। তার আগ পর্যন্ত এই শহরটি ছিল রোহিঙ্গা অধ্যূষিত।বিক্ষোভের আয়োজনকারীদের একজন অং হুতাই। তিনি এএফপিকে বলেন, মিয়ানমারের যে কোনও নাগরিককে তারা রাখাইনে স্বাগত জানাবেন। তবে নাগরিক হওয়ার অধিকার যাদের নেই, তাদের নিয়ে সরকারের পরিকল্পনা কোনভাবেই বাস্তবায়ন করতে দেওয়া হবে না।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশে পালিয়ে আসা শরণার্থীদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমার নব্বই দশকের যে চুক্তিকে উপজীব্য করতে চাইছে, তাতে একটুও ভরসা দেখছেন না শরণার্থী শিবিরে অবস্থানরত রোহিঙ্গারা। অতীতে বাংলাদেশে পালিয়ে এসে রাখাইনে ফিরে গিয়েছিলেন, দ্বিতীয় কিংবা তৃতীয়বারের মতো আসা এমন রোহিঙ্গারা সেখানে ফিরে যাওয়ার কথা শুনলেই অতীত স্মৃতিতে ‘বিভীষিকার চিহ্ন’ দেখছেন। জাতিগত নিধনযজ্ঞ আর মানবতাবিরোধী অপরাধের দুঃস্বপ্ন নিয়ে পুড়ে যাওয়া গ্রামে ফিরে কী করবেন, এমন প্রশ্ন অনেকের মনে।
চুক্তিকে উপজীব্য করে মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের ফেরত নেওয়ার কথা জানিয়েছে, তাতে যাচাইবাছাইয়ের ক্ষেত্রে বৈধ প্রমাণপত্র হাজিরের শর্ত আছে। পুড়ে যাওয়া ঘরবাড়ি ফেলে স্রেফ জীবন নিয়ে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের প্রশ্ন: বৈধ-অবৈধ পরের প্রশ্ন; কাগজপত্র কোথায় পাবে তারা?
কেবল রোহিঙ্গারা নয়, এরইমধ্যে যুক্তরাজ্যভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল মিয়ানমারের রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নীতিতে নিজেদের আস্থাহীনতার কথা জানিয়েছে। মিয়ানমারের রাখাইনে ভয়ঙ্কর মানবাধিকার হরণ বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত ঝুঁকির মুখে জোর করে রোহিঙ্গা শরণার্থীদেরকে ফেরত পাঠানো উচিৎ হবে না বলে মনে করছে সংস্থাটি। জোরপূ্র্বক যেন রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো না হয়, তা নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছে এই সংস্থা।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।