হাফিজুল ইসলাম চৌধুরী :
নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো.ইসমাইলকে পরিকল্পিতভাবে খুন করা হয়েছে দাবি করে এবার খুনিদের গ্রেপ্তার এবং শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৪এপ্রিল) বিকেল সাড়ে ৫টায় নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা পরিষদ চত্বরস্থ প্রধান সড়কে এই কর্মসূচী পালন করা হয়। পরিবারের স্বজনরা ব্যানার, ফেস্টুন নিয়ে মানববন্ধনে অংশ নেয়। মানববন্ধন থেকে মো.ইসমাইলের খুনিদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানানো হয়।
নিহতের বড় মেয়ে উম্মে আইমান তান্নি এসময় লিখিত বক্তব্যে বলেন, ‘আমার বাবা কোন সংকীর্ণ মন মানসিকতার লোক ছিলেন না যে, কঠিন পরিস্থিতিতে আত্মহত্যার পথ বেঁচে নিতে পারে। আত্মহত্যার যদি উদ্দেশ্য হতো তাহলে ২৭ এপ্রিল ঘর থেকে বের হয়ে ৩০ এপ্রিল আত্মহত্যা কেন করলেন?। তিনি আরো বলেন-‘আমার বাবা নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের আগামী কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী ছিলেন। মৃত্যুর আগের রাতেও তিনি মুঠোফোনে মোবাইলে স্বাভাবিক কথা বলেছেন। সুতরাং আমার বাবার মৃত্যুটি কোন প্রকার আত্মহত্যা হতে পারে না। পরিকল্পিত ভাবেই তাঁকে হত্যা করা হয়েছে। এটি পরিকল্পিত হত্যা ছিল বলেই হোটেলের কক্ষে সোফার উপর টি টেবিলটি যথাস্থনে ছিলনা। বাবার হাতের তালুতে কালচে বর্ণ ধারণ করে যা হাতে আঘাত করা হয়েছে। ডান হাতের মধ্য আঙ্গুলটি ভাঙ্গা ছিল। কেউ স্বেচ্ছায় ফাঁসি নিলে গলায় একটি দাগ থাকার কথা। কিন্তু বাবার গলায় তিনটি সম আকারের দাগ ছিল। নিজের পাশাপাশি, কলেজ পড়–য়া ছোট বোন ও পরিবারের জীবনের নিরাপত্তা নিয়েই এখন আমরা উৎকণ্ঠায় আছি। তাই সাংবাদিকদের মাধ্যমে প্রশাসনের সহযোগিতা চাই।
মো.ইসমাইলের স্ত্রী জোসনা আক্তারের বড় ভাই ছালামত উল্লাহ বলেন, ‘নাইক্ষ্যংছড়িতে ইসমাইলের কোন ব্যাক্তিগত শত্রু নেই। তিনি কোন ধনী লোক নয়। হত্যাকান্ড কেন হয়েছে আমরা পরিবারের সদস্যরা এখনো জানিনা। ইসমাইলকে ব্যবহার করে তৃতীয় কোন শক্তি ফায়দা হাসিলের চেষ্টা করছে। সেই জানাজা নামাজ থেকে এখন পর্যন্ত আমরা কাউকে সন্দেহ করছি না। কিন্তু নানা গণমাধ্যমে একটি ফেসবুক স্ট্যাটাস নিয়ে বিভিন্ন ধরণের লেখালেখি হচ্ছে। ফেসবুকের আইডিটা ফেইক নাকি আসল সেটাও তদন্ত করে দেখা উচিত। কারণ প্রযুক্তি এখন অনেক উন্নত। আমাদের পরিবার যেন নিরাপত্তা পায়। যেন এ হত্যাকান্ডে সুবিচার আসে। স্থানীয় রাজনীতিতে এঘটনাকে কেন্দ্র করে যেন কেউ সুবিধা আদায় করতে না পারে। পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর আশ্বাস দিয়েছেন-কারা এই হত্যাকান্ডে জড়িত? তাঁদের খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হবে।’
মানববন্ধন ও সামাবেশে মো.ইসমাইলের স্ত্রী জোসনা আক্তার, ছোট মেয়ে আফিফা আইমান তিথি, উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্যসচিব মোহাম্মদ ইমরান, যুগ্ম আহবায়ক তসলিম ইকবাল চৌধুরী, আওয়ামী লীগ নেতা মো. শফি উল্লাহ, মহিলা আওয়ামী লীগের নেত্রী ওজিফা খাতুন রুবি, উপজেলা কৃষকলীগের সাধারণ সম্পাদক সাইফুদ্দিন মামুন শিমুল, বাইশারি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম বাহাদুর, উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আলি হোসেন, উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি বদুর উল্লাহ, সাধারণ সম্পাদক উবাচিং মার্মা প্রমূখসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ একাত্বতা প্রকাশ করেন।
উল্লেখ্য, কক্সবাজার শহরের লালদীঘির পাড়স্থ পালংক্যি নামের একটি আবাসিক হোটেল থেকে রোববার (৩০এপ্রিল) বিকেলে মো. ঈসমাইলের (৪৮) ঝুলন্ত লাশ পাওয়া যায়। হোটেলের ১০৭ নম্বর কক্ষ থেকে বৈদ্যুতিক পাখার সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় ঈসমাইলের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। গত ২মে এটি পরিকল্পতি হত্যাকান্ড দাবি করে কক্সবাজার প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন পরিবারের সদস্যরা।