মো. নুরুল করিম আরমান, লামা:

আসন্ন ১৮ মার্চ দ্বিতীয় ধাপে অনুষ্ঠিতব্য পঞ্চম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বান্দরবানের লামা উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে তিনজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্ধিতায় নেমেছেন। এদের মধ্যে শিক্ষায় এগিয়ে আওয়ামী লীগ সমর্থিত মোস্তফা জামাল, জাতীয় পার্টি (জাপা) সমর্থিত সেতারা বেগম সম্পদে ও সবদিকে প্িিছয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. আলমগীর। উপজেলা নির্বাচন কার্যালয়ে দাখিলকৃত হলফনামা সূত্রে এ তথ্য পাওয়া গেছে। হলফনামায় মোস্তফা জামাল এইচ.এস.সি পাশ, সেতারা বেগম এসএসসি ও মো. আলমগীর স্ব-শিক্ষিত দেখিয়েছেন। এছাড়া পেশায় মোস্তফা জামাল কৃষি ও ব্যবসা, সেতারা বেগম গৃহিনী ও মো. আলমগীর কৃষি বলে উল্লেখ করেন। তবে কোন প্রার্থীর দায়-দেনা বা ঋণ নেই বলেও হলফ নামায় উল্লেখ করেন এসব প্রার্থীরা।

নির্বাচন কার্যালয়ে চেয়ারম্যান পদ প্রার্থীদের দাখিলকৃত হলফনামা সূত্রে জানা যায়, প্রার্থী মোস্তফা জামালের অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ ৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা। তার ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী রয়েছে টিভি ১টি, ফ্যান ৪টি, ফ্রিজ ১টি, মোবাইল সেট ৩টি যার মূল্য ৮৫ হাজার টাকা। আসবাবপত্রের মধ্যে আছে সোফাসেট ১টি, আলমারি ২টি, খাট ২টি, চেয়ার ৬টি, আলনা ২টি যার মূল্য ১ লাখ ২০ হাজার টাকা। স্ত্রীর নামে ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা ও নির্ভরশীলদের নামে ৭০ হাজার টাকার অস্থাবর সম্পদ রয়েছে। এছাড়া তার স্ত্রীর ২০ ভরি স্বর্ণ অলংকার রয়েছে, যার মূল্য দেখিয়েছেন ৫ লাখ ৩০ হাজার টাকা। স্থাবর সম্পদের মধ্যে ০.৫০ শতাংশ জমি, সেমি পাকা ১টি দোকানের কথা উল্লেখ করা হয়। কৃষিখাত, বাড়ি-দোকান ভাড়া ও ব্যবসা হতে বার্ষিক আয় ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা বলে উল্লেখ করেন মোস্তফা জামাল।

প্রার্থী সেতারা বেগমের নগদ টাকা, ব্যাংক জমা, সঞ্চয় আমানত, স্বর্ণ, ইলেকট্রনিক্স ও আসবাবপত্র সহ অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ ৩১ লাখ ৩৭ হাজার ২৪০ টাকা। এরমধ্যে ৩০ ভরি স্বর্ণের মূল্য ৯০ হাজার টাকা। এছাড়াও তার স্বামীর নামে ৮ লাখ ৫০ হাজার ৭৫ টাকার অস্থাবর সম্পদ রয়েছে। প্রার্থীর নিজ নামে স্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে ৭.২০ একর কৃষিজমির যার মূল্য ৭ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। তার স্বামীর নামে ৩০ একর কৃষি ও অকৃষি জমি রয়েছে যার মূল্য ১১ লাখ ৫০ হাজার টাকা, ৪ গন্ডা প্লট মূল্য ৫৮ হাজার ৭০৯ টাকা, চট্টগ্রামের সিডিএতে প্লট মূল্য ১৫ লাখ ১৫ হাজার টাকা ও জামালখানে ১,০৫০ বর্গফুটের বাড়ি মূল্য ৩২ লাখ টাকা। নির্ভরশীলদের নামে ৪ কাঠা জমি মূল্য ১২ লাখ ৮৮ হাজার ৭৫০ টাকা, দালান ৭৫ লাখ টাকা, ১৪.৫ প্লট মূল্য ৬ লাখ, ৫ কাঠা জমি ২ লাখ ১ হাজার টাকা, ৮.০০ একর জমি ৩ লাখ টাকার স্থাবর সম্পদ রয়েছে। যৌথ মালিকানায় ০.৮০ জমির মধ্যে ০.৪০ একর জমির মালিক তিনি। কৃষিখাত, বাড়ি-দোকান ভাড়া ও গরু খামার হতে বার্ষিক আয় ৭ লাখ ১৭ হাজার ৫০০ টাকা। এছাড়া প্রার্থীর উপর নির্ভরশীলদের বাৎসরিক আয় ৯ লাখ ৪২ হাজার ২০০ টাকা বলে উল্লেখ করেন সেতারা বেগম। এদিকে তুলনামূলকভাবে স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. আলমগীর সব দিক মিলিয়ে অনেক পিঁছিয়ে। হলফনামায় তার কোন অস্থাবর সম্পদ নেই, এছাড়া স্ত্রীর নামে ও নির্ভরশীলদের নামেও কোন অস্থাবর সম্পদ নেই বলেও উল্লেখ করেন তিনি। স্থাবর সম্পদের মধ্যে ০.২০ শতাংশ জমি আছে। কৃষিখাত ও ব্যবসা হতে বার্ষিক আয় ২ লাখ টাকা বলে হলফনামায় উল্লেখ করেন মো. আলমগীর। প্রার্থীদের মধ্যে মোস্তফা জামাল ও মো. আলমগীরের নামে কোন মামলা থাকার কথা উল্লেখ না করলেও সেতারা বেগমের নামে একটি মামলা চলমান আছে বলে হলফনায় উল্লেখ করা হয়। গত শনিবার বান্দরবান জেলা নির্বাচন অফিসার ও রিটার্নিং অফিসার মো. রেজাউল করিম প্রার্থী মোস্তফা জামালের হাতে নৌকা, সেতারা বেগমের হাতে নাঙ্গল ও মো. আলমগীরের হাতে জোড়া ফুল প্রতীক তুলে দেন। এরপর থেকে প্রার্থীদের প্রতীক সম্বলিত পোস্টারে ছেয়ে গেছে উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকা ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুক পাতায়। পাশাপাশি প্রচার প্রচারণায় পুরোদমে নেমে পড়েন তিন চেয়ারম্যান প্রার্থীরা।

নির্বাচনে প্রার্থী কর্তৃক হলফনামায় উল্লেখিত সম্পদের হিসাব দাখিলের সত্যতা নিশ্চিত করে সহকারী রিটার্নিং অফিসার ও লামা উপজেলা নির্বাচন অফিসার নব বিন্দু নারায়ন চাকমা বলেন, তফশীল অনুযায়ী আগামী ১৮ মার্চ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এবারের উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে তিনজন, পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান পদে তিন জন প্রতিদ্বন্ধিতায় নেমেছেন। এর আগে কোন প্রতিদ্বন্ধি প্রার্থী না থাকায় মিল্ক রানী দাশকে বেসরকারীভাবে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ঘোষনা করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।