আলমগীর মানিক, রাঙ্গামাটি:

রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ এর মাসিক সভা মঙ্গলবার (১৮ সেপ্টেম্বর) সকালে অনুষ্ঠিত হয়েছে। রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের সভাকক্ষে আয়োজিত সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বৃষ কেতু চাকমা। পরিষদের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা ছাদেক আহমদের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সভায় রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্য এবং হস্তান্তরিত বিভাগের কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।

সভায় সভাপতির বক্তব্যে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বৃষ কেতু চাকমা বলেছেন, এ জেলার সামগ্রিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে সকলের সহায়তা প্রয়োজন। তিনি বলেন, সমন্বয় না থাকলে উন্নয়ন কখনই সম্ভব নয়। তাই প্রতিটি সভায় পরিষদের হস্তান্তরিত বিভাগের সকল কর্মকর্তাকে উপস্থিত থেকে মতামত ও পরামর্শ প্রদান করতে হবে। তিনি বলেন, সরকার আমাদের নিয়োগ দিয়েছেন জনকল্যাণের স্বার্থে। কারোর উপর কর্তৃত্ব খাটাতে নয়। তাই সমন্বয় ঘটিয়ে এ এলাকার জনগণের স্বার্থে আমাদের কাজ করে যেতে হবে।

সভায় স্বাস্থ্য বিভাগের সিভিল সার্জন ডা. শহীদ তালুকদার বলেন, জেলায় ডেঙ্গু ও চিকনগুনিয়া রোগ নির্মূলে স্বাস্থ্য বিভাগ হতে সচেতনতামূলক বার্তা সম্বলিত লিফলেট বিতরণ করা হচ্ছে। এছাড়া পৌরসভাকে এ বিষয়ে জোরালো পদক্ষেপ নিতে বিশেষ করে মশার ডিম পাড়ার স্থানে ঔষুধ ছিটানোর বিষয়ে অবগত করা হয়েছে। তিনি বলেন, জেলার সবকটি উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে গর্ভবতী নারীদের ডেলিভারী করা হচ্ছে এবং প্রসূতিদের প্রয়োজনীয় সেবা প্রদান করা হচ্ছে। এছাড়া কমুনিটি ক্লিনিক ও জেনারেল হাসপাতালে রোগীসেবা আগের তুলনায় বৃদ্ধি পেয়েছে।

কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক পবন কুমার চাকমা জানান, বর্তমানে উফশী আউশ ফসল কর্তন শেষ পর্যায়ে। এবারে জুমের ফলন ভালো হয়েছে এবং জুমের ধান কর্তন চলছে। এছাড়া দপ্তরে পর্যাপ্ত সারের মজুদও রয়েছে।

জেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ খোরশেদ আলম বলেন, জেলার চেলাছড়া ও আটারকছড়া আবাসিক বিদ্যালয় ছাত্রাবাস সমূহের ব্যয় রাজস্ব খাতে অন্তর্ভুক্তির জন্য পত্র লেখা হয়েছে। অন্যদিকে জেলার ৮০টি

বেসরকারী স্কুল জাতীয়করণ কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। বর্তমানে ১২৪টি সহকারী শিক্ষক ও ১৩টি কর্মচারী পদ পূরণের লক্ষ্যে মন্ত্রণালয়ে পত্র প্রেরণ করা হয়েছে। অনুমোদন হলে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করা হবে।

মাধ্যমিক শিক্ষা বিভাগের জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা উত্তম খীসা বলেন, পরিষদ হতে ৭ম শ্রেণী মেধাবৃত্তি প্রদানের লক্ষ্যে যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। এছাড়া জেলার পোয়াপাড়া ও ঘাগড়া উচ্চ বিদ্যালয় পরিদর্শন করা হয়েছে।

জেলা প্রাণী সম্পদ বিভাগের কর্মকর্তা মনোরঞ্জন ধর বলেন, খামারীদের দেশী জাতীয় গরু এবং ছাগল দিয়ে গত কোরবানী ঈদ পালন করা হয়েছে । খামারীরা জেলার চাহিদা মিটিয়ে বাইরের জেলায়ও রপ্তানি করতে সক্ষম হয়েছে। এটি আমাদের জন্য একটি বড় অর্জন। এছাড়া দপ্তরে চিকিৎসা ও প্রোডাকশন কার্যক্রম যথারীতি চলছে।

বিসিক-কুটির শিল্প উন্নয়ন কর্মসূচীর সহকারী মহা ব্যবস্থাপক আহমেদ জামাল নাসের চৌধুরী জানান, ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে কুটির শিল্প উন্নয়ন কর্মসূচীর মধ্যে বিভিন্ন মেয়াদে তাঁতে বস্ত্র বুনন, পোশাক সেলাই, বাঁশ বেতের পণ্য তৈরী, কাঠের কাজ, বাটিক ছাপা, কম্পিউটার ফান্ডামেন্টাল ও প্লাষ্টিক ব্যাগ এবং পুতি শিল্প তৈরীর প্রশিক্ষণ কোর্স চলছে।

সমাজসেবা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক রুপনা চাকমা জানান, ক্যান্সার, কিডনী, লিভার সিরোসিস, স্টোকে প্যারালাইজড, জন্মগত হৃদরোগে আক্রান্ত রোগীর আর্থিক সহায়তা কর্মসূচীর মধ্যে জেলাধীন ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে ১ম, ২য় এবং ৩য় কিস্তিতে সর্বমোট ৩৪জন রোগীকে ৫০হাজার টাকা করে মোট ১৭ লক্ষ টাকা এককালীন আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। এছাড়া মুক্তিযোদ্ধা, বয়স্ক ভাতা, অসচ্ছল প্রতিবন্ধী, বিধবা ও স্বামী পরিত্যক্তা দুস্থ মহিলাদের সমাজসেবা কার্যালয় থেকে ভাতা প্রদান করা হচ্ছে। অন্যান্য ভাতা প্রদান কার্যক্রমও চলমান রয়েছে।

হর্টিকালচার সেন্টার বালুখালী, বনরুপা, লংগদু, নানিয়ারচর, আসামবস্তী ও কাপ্তাইয়ের উদ্দ্যান তত্ববিদরা জানান, বর্তমানে নার্সারিতে টার্গেট অনুযায়ী চারাকলাম উৎপাদন ও বিক্রয় কার্যক্রম চলছে।

সভায় অন্যান্য হস্তান্তরিত বিভাগের কর্মকর্তাগণ তাদের বিভাগের স্ব স্ব কার্যক্রম উপস্থাপন করেন।