তোফায়েল আহমদ :

এর আগে এতগুলো প্রকল্প নিয়েও কোন ওজর আপত্তি উঠেনি কক্সবাজারে। আপত্তি উঠেনি কক্সবাজারের শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ষ্টেডিয়াম নিয়ে। বরং এই ষ্টেডিয়াম করায় কক্সবাজারবাসী সরকার প্রধান সহ সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়েছে। মহেশখালী দ্বীপের মাতারবাড়ী সহ পুরো দ্বীপটিতে এতগুলো উন্নয়ন পকল্পের জন্য প্রায় ১০ হাজার একর জমি নেয়া হচ্ছে। তথাপি কক্সবাজারবাসী চুপচাপ রয়েছেন।

কক্সবাজারের পেকুয়ায় জমি নেয়া হয়েছে সাবমেরিন ক্যাবলের জন্য। অধিগ্রহণ করা হয়েছে রাস্তা-ঘাট এবং পাইপ লাইনের জন্য-তবুও এলাকাবাসী চুপ। মহেশখালীর মাতারবাড়ী সহ পুরো মহেশখালী দ্বীপের তাপ বিদ্যুৎ সহ অন্যান্য প্রকল্পগুলোর জন্য বহু পরিমাণ লবণ ও চিংড়ি জমি অধিগ্রহণ করা হচ্ছে। এ কারনে বহু পেশাজীবী হয়ে যাচ্ছেন পেশাচ্যুত। তবুও কারও টু-শব্দটি নেই।

বাগেরহাটের প্রকল্প নিয়ে পরিবেশবাদী গোষ্ঠির কত আন্দোলন-কত সংগ্রাম। এমনকি সেই পরিবশেবাদীদের সংগ্রামের ঢেউ আন্তর্জাতিক অঙ্গণে গিয়েও আঘাত হেনেছে। পরিবেশবাদীরা মহেশখালীর মাতারবাড়ীর তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রকল্প নিয়েও নড়াচড়া শুরু করেছিল। কানাঘুষায় নেমেছিল সরকার বিরোধী গোষ্ঠিও-যাতে পরিবেশ ধ্বংশের অজুহাত নিয়ে আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারের চলমান উন্নয়ন কর্মকান্ড থামিয়ে দেওয়া যায়। কিন্তু এই গোষ্ঠি সফল হয়নি একমাত্র কক্সবাজারের সচেতন সুশিল সমাজের কারনে।

কক্সবাজার বিমান বন্দরে ৬০০ একর জমি নেওয়া হয়েছে। বিমান বন্দর সংলগ্ন বিমান ঘাঁটির জন্যও নেওয়া হয়েছে অনেক পরিমাণের জমি। একেত একটি পর্যটন শহরে আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর দ্বিতীয়ত সেই বিমান বন্দরের পার্শ্বেই বিমান ঘাঁটি স্থাপনেও মহল বিশেষের আন্দোলনকে সুশিল সমাজই থামিয়ে দিয়েছে।

অথচ এই বিমান ঘাঁটি স্থাপনের কারনেই আজ দক্ষিন চট্টগ্রামের একটি মাত্র কক্সবাজার ডায়াবেটিক হাসপাতালটিও এক অনিশ্চিত অবস্থায় পড়েছে। অনিশ্চিত অবস্থায় রয়েছে শিল্পকলা ও শিশু একাডেমী সহ প্রস্তাবিত শিশু পার্কের জমি খন্ডটিও। জেলে পার্কটিও চলে যাচ্ছে বিমান বন্দরের পেটে। তবুও কক্সবাজারের শান্ত মানুষগুলো একবারের জন্যও রাস্তায় নামেননি।

তাহলে এমন যে কি হল-পর্যটনের হোটেল শৈবাল সহ পার্শ্ববর্তী ১৩৫ একর জমি রক্ষার জন্য আজ কক্সবাজারের আবাল-বৃদ্ধ বণিতা কেন এক কাতারে দাঁড়ালেন। আমি এ সংক্রান্ত বিস্তারিত একটি প্রতিবেদন দৈনিক কালের কন্ঠে গত ৭ ডিসেম্বর তারিখের অন লাইন সংষ্করণে এবং ৭ ডিসেম্বর দৈনিক আজকের দেশবিদেশ পত্রিকায় প্রধান শিরোনামে প্রকাশ করি। কালের কন্ঠ অনলাইনের ‘৫ হাজার কোটি টাকার হোটেল শৈবালের সম্পত্তি ৬০ কোটি টাকায় বেসরকারি খাতে’ শিরোনামের সংবাদটি এক দিনের মধ্যেই ২৫ হাজার ফেসবুকে শেয়ার হয়ে যায়। বুঝতে বাকি থাকে না বাস্তবে বিষয়টি কত গুরুত্বপূর্ণ।

হোটেল শৈবাল সহ ১৩৫ একর জমি পাবলিক-প্রাইভেট-পার্টনারশীপ (পিপিপি) এর নামে এক প্রকারের ইজারা দেওয়ার বিষয়টিকে স্থানীয় বাসিন্দারা কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না। ইতিমধ্যে স্থানীয়রা আে ন্দালন-সংগ্রামে নেমেছেন। এ আন্দোলন-সংগ্রামের অনেক কারন রয়েছে। তবে সবচেয়ে বড় কারন যেটি সেটি হচ্ছে-বিগত বিএনপি –জামায়াত সরকারের আমলে কক্সবাজার সাগর পাড়ের হোটেল-মোটেল জোনের প্রায় ১০০ একর জমির লুন্ঠন। সাগর পাড়ের সেই জমি রাতারাতি বিএনপি দলীয় নেতারা ভাগাভাগি করে নেয়। এই জমিতে গড়ে তোলা ভবনগুলো আজ পর্যটকদের সাগর দর্শনে প্রতিবন্ধকতার ভবন হয়ে দাঁড়িয়েছে। মূলত কক্সবাজার সৈকত দর্শনে মস্তবড় একটি দালান হচ্ছে বিএনপি পল্লী নামে পরিচিত হোটেল-মোটেল ভবনগুলো।

বিশ্বের দীর্ঘতম সৈকত তীরের মূল্যবান জমি রাতারাতি ভাগাভাগি করে নিয়ে অপরিকল্পিত ভাবে দালান-কোঠার মাধ্যমে বিগত বিএনপি সরকার মূলত কক্সবাজার সাগর পাড়কে এখন ঘিঞ্জি শহরে পরিণত করে দিয়েছে। সৈকত তীরের বিশাল এলাকায় এরকম অপরিকল্পিত দালান-কোঠার হোটেল গড়ে তোলায় খোলা জায়গার বড়ই অভাব দেখা দিয়েছে। এভাবে সাগর পাড়ের আরো জমিতে নতুন করে কোন দালান-কোঠা নির্মিত হলে সেটি হবে পর্যটন শহরটির জন্য আতœঘাতি সিদ্ধান্ত। তাই হোটেল শৈবাল সংলগ্ন এলাকাটি এখন খোলা রাখাই হবে বড় মানবিক ব্যাপার। আবারো বিগত বিএনপি সরকারের মত করে রাতারাতি জমি ইজারার মাধ্যমে নতুন করে ‘একটি পল্লী’ কক্সবাজারবাসী দেখতে চান না।

লেখক ঃ তোফায়েল আহমদ, কক্সবাজারে কর্মরত দৈনিক কালের কন্ঠের সিনিয়র রিপোর্টার ও আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম এপি’র ষ্ট্রিঙ্গার।