ডেস্ক নিউজ:

‘হেমানজিওমায়’ আক্রান্ত সাতক্ষীরার শিশু মুক্তামণির অস্ত্রোপচার সম্পন্ন হয়েছে। তার হাতের সব টিউমার অপসারণ করা হয়েছে। অস্ত্রোপচার শেষে তাকে ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ইউনিটের নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র- আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়েছে।

অস্ত্রোপচারের সময় মুক্তার প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছে বলেও জানিয়েছেন কর্তব্যরত চিকিৎসকরা।

মঙ্গলবার সকালে মুক্তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের দ্বিতীয় তলার অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাওয়া হয়। অপারেশন শেষ হয় দুপুর সাড়ে ১২টায়।

জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের প্রধান সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন জাগো নিউজকে এসব তথ্য জানান। তিনি আরও জানান, মুক্তাকে ২৪ ঘণ্টা পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। তার হাতের সব টিউমার অপসারণ করা হয়েছে।

এদিকে মুক্তার অস্ত্রোপচারের সময় প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছে বলে জানিয়েছেন উপস্থিত চিকিৎসকরা। ইতোমধ্যে তাকে পাঁচ ব্যাগ এ-পজেটিভ রক্ত দেয়া হয়েছে। আরও দুই ব্যাগ রক্তের প্রয়োজন তার।

এর আগে গত ২৯ আগস্ট মুক্তামণির দ্বিতীয় দফা অস্ত্রোপচার শুরু করা হলেও জ্বরের কারণে পরে তাকে কেবিনে ফিরিয়ে নেয়া হয়।

মুক্তামণির প্রথম অস্ত্রোপচার হয় গত ১২ আগস্ট। সেদিন ২০ সদস্যের একটি চিকিৎসক দল প্রায় আড়াই ঘণ্টার জটিল সেই অপারেশনে অংশ নেয়।

হাতে বিকট আকৃতির ফোলা নিয়ে গত ১১ জুলাই ঢামেকেভর্তি হয় মুক্তামণি। তার রোগটি ‘হাইপারকেরাটসিস’ বা স্কিন ক্যান্সার হতে পারে বলে প্রথমে ধারণার কথা বলেছিলেন চিকিৎসকরা।

রোগ শনাক্ত করতে গত ৫ আগস্ট তার হাতের টিস্যু সংগ্রহ করে বায়োপসি করা হয়। পরে ডা. সামন্ত লাল সেনের নেতৃত্বে ১৪ সদস্যের একটি মেডিকেল বোর্ড মুক্তামণির রোগটি হেমানজিওমা বলে শনাক্ত করে।

চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায়, হেমানজিওমা হলো শিশুদের রক্তনালীর মধ্যে টিউমার, যেগুলো সাধারণত ক্যান্সারপ্রবণ হয় না। এরকম টিউমার শিশুদের মধ্যে প্রায়ই দেখা যায়। ত্বকের উপরিভাগে লাল গুটির মত দেখতে এই টিউমার বেশিরভাগ সময় চিকিৎসা ছাড়াই মিশে যায়।

অধিকাংশ শিশুর ক্ষেত্রে এই টিউমার বড় কোনো সমস্যা সৃষ্টি করে না। তবে ফেটে গেলে তা যন্ত্রণাদায়ক হতে পারে; রক্তপাতও হতে পারে।

আবার টিউমারের আকার ও অবস্থানের ওপর নির্ভর করে এটা বিকৃত হয়ে যেতে পারে এবং স্নায়ুতন্ত্র বা মেরুদণ্ডের ওপর হলে জটিলতা বড় হয়ে দেখা দিতে পারে।

ত্বক ছাড়াও যকৃত ও ফুসফুসের মতো অভ্যন্তরীণ অঙ্গেও হেমানজিওমা হতে পারে।

গত জুলাইয়ের প্রথমদিকে বিভিন্ন গণমাধ্যমে বিরল চর্মরোগে আক্রান্ত সাতক্ষীরার শিশু মুক্তাকে নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। গত ৯ জুলাই জাগো নিউজে ‘লুকিয়ে রাখতে হয় মুক্তাকে’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। এ প্রতিবেদন প্রকাশের পর মুক্তার চিকিৎসার দায়িত্ব নেন স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব মো. সিরাজুল ইসলাম। পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুক্তার যাবতীয় চিকিৎসার ব্যয়ভার বহনের দায়িত্ব নেন।

মুক্তামণির বাবা ইব্রাহিম হোসেন জানান, দেড় বছর বয়সে মুক্তার ডান হাতে একটি ছোট গোটা দেখা দেয়। পরে তা বাড়তে বাড়তে বছর চারেক আগে এমন পর্যায়ে যায় যে স্বাভাবিক চলাফেরা ব্যাহত হয়।

১২ বছরের মেয়েটির আক্রান্ত হাতটি ফুলে দেহের চেয়ে ভারি হয়ে উঠলে তার শরীর শুকিয়ে যেতে শুরু করে। ওই হাতের কারণে সে সব সময় যন্ত্রণায় অস্থির থাকত বলে জানান তার বাবা।