মোঃ নাজিম উদ্দিন, দক্ষিণ চট্টগ্রাম:

সাম্প্রতিক একাধিক বার বন্যার পানিতে সবজি ক্ষেত তলিয়ে যাওয়ায় গত এক মাস ধরে দক্ষিণ চট্টগ্রামের বাজারগুলোতে বেড়েছে সবজির দাম। উপজেলার বিভিন্ন হাটবাজারে এখনো সবজি চড়া দামে বিক্রি হওয়ায় নিন্মবিত্ত ও মধ্যবিত্ত মানুষের ত্রাহি অবস্থা। গত ২৭ আগস্ট রোববার দক্ষিণ চট্টগ্রামের বেশ কিছু বাজার ঘুরে চড়া দামে সবজি বিক্রি হতে দেখা গেছে। যেখানে দেড় মাস আগে সব সবজিই ২০-৩০ টাকা কেজিতে পাওয়া গেছে, তা এখন দ্বীগুনের চেয়ে বেশি দামে কিন্তে হচ্ছে। ৬০ টাকা কেজির নিচে কোনো সবজিই পাওয়া যাচ্ছে না। বন্যার অজুহাতে বেড়ে যাওয়া সবজির দাম এখনো কমাচ্ছে না বিক্রেতারা।

বিক্রেতারা বলছেন, জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে বন্যায় ক্ষেত নষ্ট হওয়ায় উৎপাদন কমে যায় সবজি। এতে বাড়তে থাকে দাম। চলতি মাসেও সবজির দাম কমার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।

সাতকানিয়ার কেরানীহাট, বাজালিয়ার বোমাংহাট, দেওয়ানহাট, বাংলা বাজার, জোটপুকুরিয়া বাজার, লোহাগাড়ার বটতলী, পদুয়া তেওরীহাট, দরবেশ হাট, চুনতী বাজার, বড়হাতিয়া সেনেরহাট, বাঁশখালীর গুনগুরি খাস মাহাল, চাম্বল বাজার, পুকুরিয়া বাজার, চন্দনাইশের দোহাজারী, বাগিচার হাট, কলেজ গেইট, বাদামতল, রৌশনহাট, পটিয়া, আনোয়ারা ও বোয়ালখালী বাজার ঘুরে প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ ১২০ থেকে ১৬০ টাকা, বেগুন ৬০ থেকে ৭০ টাকা, টমেটো ১০০ থেকে ১২০ টাকা, শিম ৫০ থেকে ৭০ টাকা, ঢেঁড়স ৬০ টাকা, করলা ৫০ থেকে ৬০ টাকা, চিচিঙ্গা ৬০ টাকা, পটল ৫০ টাকা, শসা ৩৫ থেকে ৫০ টাকা, মূূলা ৫০ থেকে ৬০টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। তবে ভোক্তাদের দাবি এখন কোনো দুর্যোগ নাই। এ অঞ্চলে বর্তমানে ফসল উৎপাদন কিছুটা বেড়েছে। এতে বাজারে সবজির দাম কমার কথা। প্রশাসনের বাজার মনিটরিং না থাকায় ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে সবজির দাম বাড়িয়ে রেখেছেন। সামনের কোরবানি ঈদের আগেই নিত্যপণ্যসহ সবজির দাম না কমলে মানুষের জীবনযাত্র আরো বেশি নাভিশ্বাস হয়ে উঠবে। কেরানীহাট কাঁচা বাজারে আসা ক্রেতা মোহাম্মদ রাশেদুল ইসলাম বলেন, ‘লাগামহীন’ সবজির বাজার। আর কখনো সবজির বাজার লাগামহীন চড়া ছিলনা। গত এক সপ্তাহ আগে ২৪০ টাকায় মরিচ কিনেছি। সেই মরিচ এখনো ১৩০ টাকায় প্রতিকেজি। চিচিঙ্গা, বেগুন, শসা, মূলা, ঢেঁড়স, শিম, পটল, গাজর, করলসহ সব সবজির দামই চড়া। শুধু আলোর দাম কম রয়েছে। ২৫ থেকে ৩৫ টাকায় কেজি দরে পাওয়া যাচ্ছে।

দোহাজারীতে বাজার করতে আসা মরফলার বাসিন্দা সাবের হোসেন বলেন, গত এক মাস ধরে সবজির বাজার যে চড়া, তাতে নিন্মবিত্তদের না খেয়ে থাকতে হবে। এখন তো ফসল উৎপাদন বেড়েছে, তার পরেও কেন সবজির দাম? গরীবেরা না খেয়ে থাকলে কেউ খবর নেবে না। মরিচ কিনে মনে হচ্ছে, তার দাম দিয়ে আপেল আরো বেশি কেনা যেত।

সবজির দাম এতো বাড়তি কেন জানতে চাইলে বিক্রেতা আক্কাস উদ্দিন বলেন, সবজির আড়ৎ থেকে এনে কেজি প্রতি ৪-৫ টাকা লাভে বিক্রি করছি। কেরানীহাটের সবজি বিক্রেতা শফিউল আলম বলেন, বেশ কিছুদিন ধরে পাইকারী বাজারে সবজি চড়া দাম। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে দফায় দফায় বন্যা হওয়ায় ক্ষেত নষ্ট হয়ে গেছে। ফসল পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় সবজি উৎপাদন কমে গেছে। তখন থেকে আড়ৎ থেকে চড়া দামে কিনে আমরা কেজি প্রতি ৫-৭ টাকা বেশি নিচ্ছি।

সাতকানিয়া ছদাহা শিশুতল পাইকারী নুর সবজি মান্ডারের মালিক এইচ এম সেলিম বলেন, এখন বর্ষা হওয়ায় সমতল অঞ্চলে সবজি উৎপাদন কম হচ্ছে। এর মধ্যে কয়েক দফা বন্যায় অনেক ক্ষেত নষ্ট হয়ে গেছে। ফলে পাহাড়ে উৎপাদিত সবজিই বাজার চাহিদা মেটানো হচ্ছে। তাই বেশ কিছুদিন ধরেই সবজির বাজার চড়া। শুস্ক মৌসুমের আগে সবজির দাম কমার সম্ভাবনা খুবই কম। এ কারণে অন্যান্য বছরের চেয়ে এবছর সবজির বাজার ‘লাগামহীন’ থেকে গেছে।

সবজির বাজার চড়া হলেও মাছ-মাংসের দাম অনেকটা আগের মতোই রয়েছে। গরুর মাংস ৪৫০ থেকে ৫৫০ টাকা। বিভিন্ন মাছ প্রকারভেদে ১০০ থেকে ৬০০ টাকা পর্যন্ত কেজি প্রতি বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া ব্রয়লার মুরগি বাজারে ১৪০ থেকে ১৫০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। কাতাল ২০০ থেকে ৪৫০ টাকা, রুই দেশীয় ২৫০ থেকে ৩৫০ টাকা, ইলিশ ২৫০ থেকে ৮০০ টাকায় কেজি বিক্রি হচ্ছে।