ডেস্ক নিউজ:
চিত্রনায়ক সালমান শাহ্ হত্যা মামলার অন্যতম আসামি আমেরিকা প্রবাসী রাবেয়া সুলতানা রুবিকে জিজ্ঞাসাবাদ করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এর আগে তার ভিডিও বার্তাগুলো যাচাই-বাছাই হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। বুধবার (৯ আগস্ট) পিবিআই’র একাধিক কর্মকর্তা বাংলা ট্রিবিউনকে এসব তথ্য জানান।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই’র বিশেষ পুলিশ সুপার আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘আমরা রাবেয়া সুলতানা রুবির প্রতিটি ভিডিও বার্তাকে আমলে নিয়েছি। তার কথা বলার অধিকার আছে। তিনি বলতেই পারেন। প্রতিটি মানুষের কথা বলার অধিকার আছে।’

পিবিআই’র এই কর্মকর্তা বলেন, ‘আগে সে কি কথা বলছে, এখন যা বলছে সবকিছুই আমলে নিচ্ছি। কিন্তু তার কথাবার্তা বলার যে ভঙ্গিমা, তাতে মনে হচ্ছে সে মানসিকভাবে অসুস্থ থাকতে পারে বা মাদকাসক্তও হতে পারে। তার যে কোনও সমস্যা থাকতে পারে।’

রুবির সব কথা গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়া হবে না বলেও জানান পিবিআই’র এই কর্মকর্তা। তার ভাষ্য, ‘এটাই তদন্তের একমাত্র অংশ নয়। তাকে নিয়েই শুধু মামলা তদন্ত করছি না। ভবিষ্যতে সে আরও কথা বলতে পারে, সে আরও কথা বলবে। আমরা অবশ্যই তার এই কথাগুলোকে গ্রহণ করবো।’

অন্যদিকে বিষয়টি জানতে চাইলে পিবিআই’র আরেক বিশেষ পুলিশ সুপার বশির উদ্দিন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা সব বিষয় গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করছি। মামলার তদন্ত কাজে যেগুলো সহায়ক হবে সবই গ্রহণ করবো আমরা।’ যোগ করে তিনি বলেন, ‘তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করার পরিকল্পনা আছে আমাদের। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য যা করা প্রয়োজন সেই প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।’

সম্প্রতি মামলার এজাহারভুক্ত আসামি রাবেয়া সুলতানা রুবি নিউ ইয়র্কে বসে একটি ভিডিও বার্তায় দাবি করেন, সালমান শাহকে হত্যা করা হয়েছে। তিনি সালমানের মায়ের উদ্দেশ্যে বারবার বলেন, ‘সালমান আত্মহত্যা করেনি, তাকে হত্যা করা হয়েছে।’

এমনকি নিজের চীনা স্বামী, ভাই, ছেলে ও সালমানের স্ত্রীসহ আরও অনেকের নাম উল্লেখ করেন রুবি। তার ভিডিও বার্তাটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। দেশের গণমাধ্যমে এ নিয়ে একাধিক খবর প্রকাশিত হয়। শুরু হয় তীব্র প্রতিক্রিয়া। তার এই বক্তব্যের পর নড়েচড়ে বসে পিবিআই।

পুলিশ সদর দফতরের এআইজি (গণমাধ্যম ও জনসংযোগ) সহেলী ফেরদৌস বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সালমান শাহ মৃত্যুর ঘটনায় একটি হত্যা মামলা হয়েছে। আমাদের হাতে কিছু ভিডিও এসেছে। এই মামলাটি তদন্ত করছে পিবিআই। তারা সাধারণত স্পেশাল মামলাগুলো তদন্ত করে থাকে। যেসব ভিডিও এসেছে সেগুলো যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। এখানে যে ভিডিওটি দেখা যাচ্ছে, সেটির কণ্ঠটি রুবি নামের নারীর কিনা কিংবা যে ছবিটা দেখা যাচ্ছে সে আমাদের ওয়ান্টেড রুবি নামের ব্যক্তি কিনা, এসব বিষযে সত্যতা পাওয়া গেলে আমরা মনে করবো, এই নারী আমাদের ওয়ান্টেড, তার কাছে তথ্য থাকতে পারে। সেক্ষেত্রে আমরা তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করবো।’

রুবিকে জিজ্ঞাসাবাদের বিষয়ে পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘যদি মনে হয় ভিডিওটি সত্যি রুবি নামে ওই নারীর, তার সংযোগ রয়েছে, তাহলে অবশ্যই তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।’

আসামিকে ফেরত আনার বিষয়ে পুলিশ সদর দফতরের এআইজি (গণমাধ্যম ও জনসংযোগ) বলেন, ‘আমরা সবসময় আসামি ফেরত আনার ক্ষেত্রে ইন্টারপোলের সহযোগিতা নিয়ে থাকি। কিছু প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে আসামি বা সন্ত্রাসীদের ফেরত আনা হয়। এক্ষেত্রেও প্রয়োজন হলে ইন্টারপোলের সহায়তা নেওয়া হবে।’
১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর শাহরিয়ার চৌধুরী ইমন ওরফে সালমান শাহ্’র অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়। ঘটনার পর একটি অপমৃত্যুর মামলা নেয় পুলিশ। যদিও তার পরিবার শুরু থেকেই দাবি করে আসছে, তাকে হত্যা করা হয়েছে।

সালমানকে হত্যার দায় স্বীকার করে রেজভী আহমেদ ওরফে ফরহাদ নামের এক তরুণ আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। ওই জবানবন্দির ভিত্তিতে সালমানের মা নীলা চৌধুরী হত্যার অভিযোগে ১১ জনকে আসামি করে আদালতে নালিশি মামলা করেন।

আসামিরা হলো— সালমানের স্ত্রী সামিরা হক, শাশুড়ি লতিফা হক লুসি, ব্যবসায়ী আজিজ মোহাম্মদ ভাই, রেজভী আহমেদ ফরহাদ, খল অভিনেতা ডন, নজরুল শেখ, ডেভিড, রাবেয়া সুলতানা রুবি, মোস্তাক ওয়াইদ এবং সালমানের বাসার গৃহকর্মী আবুল হোসেন খান। মামলাটি দেশের বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তদন্ত করে। সেই নালিশি ও অপমৃত্যু মামলা একসঙ্গে মিলিয়ে তদন্ত করছে পিবিআই।