ডেস্ক নিউজ:
পুলিশের টিয়ার শেলে আহত সিদ্দিকুর রহমানের চোখের আলো ফিরবে না। তার দুই চোখই নষ্ট হয়ে গেছে। দুঃখজনক এ সংবাদটি জানিয়েছেন ভারতের চেন্নাইয়ের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। আজ সোমবার (৩১ জুলাই) চেন্নাইয়ের শংকর নেত্রালয়ে সিদ্দিকুরের দুই চোখ পরীক্ষা-নীরিক্ষা করে এ তথ্য জানিয়েছেন হাসপাতালের রেটিনা বিশেষজ্ঞ ডা. লিংগম গোপাল। বাংলা ট্রিবিউনকে এ তথ্য জানিয়েছেন সিদ্দিকুরের সহপাঠী ও বন্ধু শেখ ফরিদ ।

শেখ ফরিদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘দুপুর পৌনে দুইটায় সিদ্দিকুর ও তার সঙ্গে যাওয়া বড় ভাই নওয়াব আলীর সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। চিকিৎসকরা তাদের জানিয়েছেন, অস্ত্রোপচার করা হলেও সিদ্দিকুরের চোখের আলো ফেরার আর সম্ভাবনা নেই। চিকিৎসকের এ কথা শোনার পর সিদ্দিকুর ও তার ভাই মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন।

ফরিদ বলেন, ‘সিদ্দিকুরের সঙ্গে যাওয়া জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক জাহিদুল এহসান মেননের কাছে সিদ্দিকুর ও তার বড় ভাই সেখানকার চিকিৎসকদের সিদ্ধান্তের ব্যাপারে আরও নিশ্চিত হতে চাইলে তিনি ওই মুহূর্তে তাদের কাছে এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করেননি। তবে জানিয়েছেন, সিদ্দিকুরের পরীক্ষা-নিরীক্ষার কাগজপত্র তিনি ঢাকায় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠিয়েছেন। তাদের সিদ্ধান্তের জন্য তিনি অপেক্ষা করছেন।

উল্লেখ্য, পরীক্ষার রুটিন ও তারিখ ঘোষণাসহ কয়েকটি দাবিতে গত ২০ জুলাই সকাল ১০টার দিকে শাহবাগে নতুন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত হওয়া সাতটি সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীরা অবস্থান কর্মসূচি পালন করতে গেলে পুলিশ তাদের ওপর লাঠিচার্জ করে। এসময় পুলিশের ছোড়া কাঁদানে গ্যাসে গুরুতর আহত হন তিতুমীর কলেজের ছাত্র সিদ্দিকুর রহমান। এরপর জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাকে। এ ঘটনায় দেশজুড়ে নিন্দা ও প্রতিবাদ অব্যাহত থাকলে বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার নির্দেশে ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের তত্ত্বাবধানে জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের চিকিৎসরা তাকে চেন্নাইয়ের শংকর নেত্রালয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য পাঠিয়েছেন।

এদিকে, চোখ ভালো হবে না বলে চিকিৎসকদের সিদ্ধান্তের পর সিদ্দিকুর মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন।কান্নাকাটিও করেছেন তিনি বলে জানিয়েছেন তার বন্ধু ও সহপাঠী শেখ ফরিদ।

বাংলা ট্রিবিউনকে শেখ ফরিদ বলেন,‘চেন্নাইয়ের চিকিৎসকরা সিদ্দিকুরকে জানিয়েছেন, যদি এক শতাংশেরও সম্ভাবনা থাকতো তবে তারা সিদ্দিকুরের দৃষ্টি ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চালাতেন। যেহেতু কোনও সম্ভাবনা নেই, তাই চিকিৎসকরা এ বিষয়ে সিদ্দিকুরকেই সিদ্ধান্ত নিতে বলেছেন। চিকিৎসকরা আরও জানিয়েছেন যে, তারপরেও যদি রোগী চান তাহলে তারা মানবিক দিক বিবেচনায় অপারেশন করবেন।’

শেখ ফরিদ বাংলা ট্রিবিউনকে আরও জানান, সবকিছু জানার পর সিদ্দিকুর চাইছেন যে, মানসিক শান্তির জন্য হলেও অপারেশনটা হোক।’

চিকিৎসকদের এ সিদ্ধান্তের পরে সিদ্দিক ফোন করেছিলেন জনিয়ে শেখ ফরিদ জানান, সিদ্দিকুর বলেছেন, ‘যদি এখানে না আসতাম তাহলে কোনও কথা ছিল না। কিন্তু যখন এসেছি, তখন অপারেশনটা করেই যাই। তাতে মানসিক শান্তি থাকবে যে, চিকিৎসার কোনও ত্রুটি আমরা করিনি। আর এখন বিষয়টা ভাগ্যের ওপরে ছেড়ে দিয়েছি। অপারেশনটা করি, যা হবার তাই হবে। এখনতো কিছু করার নেই।’