ডা. গোবিন্দ চন্দ্র রায়

পেটের উপরিভাগে সারা দিন অল্প অল্প করে ব্যথা। আবার তীব্র ব্যথা আর বদহজম। কখনো খাবারের পর ব্যথা—সবই পেপটিক আলসারের ব্যথা হিসেবে পরিচিত। সাধারণত মানুষ গ্যাস্ট্রিক বা আলসার বলতে যা বুঝিয়ে থাকেন, চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় একে বলে পেপটিক আলসার।

যাঁরা সঠিকভাবে খাবার গ্রহণ করেন না কিংবা দীর্ঘ সময় উপোস থাকেন, তাঁদের পেপটিক আলসার দেখা দিতে পারে। পেপটিক আলসার যে শুধু পাকস্থলীতেই হয়ে থাকে তা কিন্তু নয়, বরং এটি পৌষ্টিকতন্ত্রের যেকোনো অংশেই হতে পারে।

কেন হয়
প্রধানত পাকস্থলীতে অতিরিক্ত অ্যাসিড তৈরি হওয়ার জন্যই এ সমস্যা দেখা দেয়। অতিরিক্ত অ্যাসিড পাকস্থলীর মিউকোসার পর্দা নষ্ট করে পাকস্থলীর সংস্পর্শে আসে এবং প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে। আর হেলিকোব্যাকটার পাইলোরি নামক ব্যাকটেরিয়ারও মিউকোসার পর্দা নষ্ট করে দেয় এবং অ্যাসিডকে পাকস্থলীর সংস্পর্শে এসে প্রদাহের সৃষ্টি করে। কারও পৌষ্টিকতন্ত্র থেকে যদি বেশি পরিমাণে অ্যাসিড এবং প্রোটিন পরিপাককারী এক ধরনের এনজাইম বা পেপসিন নামে পরিচিত, তা নিঃসৃত হতে থাকে। জন্মগতভাবে পৌষ্টিকতন্ত্রের গঠনগত কাঠামো দুর্বল থাকে, তাহলেও পেপটিক আলসার হতে পারে।

কী কী কারণে পাকস্থলীতে বেশি অ্যাসিড তৈরি হতে পারে
কিছু ওষুধ যেমন ব্যথানাশক ওষুধ, অনিদ্রা, অতিরিক্ত টেনশন, বেশি তেলে ভাজাপোড়া খাবার, ধূমপান ইত্যাদি।

উপসর্গ
* পেটের উপরিভাগে ব্যথা, জ্বালাপোড়া হওয়া
* খাওয়ার ঠিক পরপর ব্যথা বেড়ে যাওয়া (গ্যাস্ট্রিক আলসার)
* খালি পেটে ব্যথা বেড়ে যাওয়া (ডিওডেনাল আলসার)
* ঢেকুর ওঠা
* বদহজম হওয়া

প্রতিরোধ
নিয়মিত খাবার গ্রহণ, ভাজাপোড়া খাবার পরিহার, দুশ্চিন্তা পরিহার, পর্যাপ্ত ঘুম, ধূমপান বন্ধ করতে হবে। ব্যথানাশক ওষুধ সেবন থেকে যথাসম্ভব বিরত থাকতে হবে।

চিকিৎসা
* পেপটিক আলসারের রোগীরা সাধারণত অ্যান্টাসিড এবং এজাতীয় ওষুধ সেবনে উপকৃত হন।
* জীবাণুজনিত কারণে যদি এ রোগ হয়ে থাকে, তবে বিভিন্ন ওষুধের সমন্বয়ে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
* তবে দীর্ঘমেয়াদি ওষুধ সেবনের পরও যদি রোগী ভালো না হয়, কিছু খেলে যদি বমি হয়ে যায় অর্থাৎ পৌষ্টিক নালির কোনো অংশ যদি সরু হয়ে যায়। সে ক্ষেত্রে অপারেশন করিয়ে রোগী উপকৃত হতে পারে।

সময়মতো পেপটিক আলসারের চিকিৎসা না করালে
* পাকস্থলী ফুটো হয়ে যেতে পারে
* রক্তবমি হতে পারে
* কালো পায়খানা হতে পারে
* রক্তশূন্যতা হতে পারে
* ক্যানসার হতে পারে (কদাচিং) এবং
* পৌষ্টিক নালির পথ সরু হয়ে যায় এবং রোগীর বারবার বমি হতে পারে।

কিছু প্রশ্ন
ভাজাপোড়া খাবার খেলে কি এই রোগ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে?
হ্যাঁ। এসব বেশি খাবার খেলে পেটে বেশি বেশি অ্যাসিড তৈরি হয়, যার কারণে এই রোগের আশঙ্কা বেশি থাকে।
ঝাল খেলে কি পেপটিক আলসার হয়?
এর কোনো সুনির্দিষ্ট প্রমাণ চিকিৎসাবিজ্ঞানে মেলেনি।
বেশি পানি পান করলে কি পেপটিক আলসার ভালো হয়ে যায়?
বেশি পানি পান করলে এই রোগ হবে না বা ভালো হয়ে যায় এমন কোনো কথা নেই; বরং হিতে বিপরীত হতে পারে। পরিমিত পানি পান করাই উত্তম।
কাজেই যাঁরা দীর্ঘমেয়াদি পেপটিক আলসারে ভুগছেন, তাঁদের উচিত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া। পেপটিক আলসারজনিত জটিলতা আগে থেকেই শনাক্ত করা এবং সে অনুযায়ী চিকিৎসা নেওয়া দরকার।
লেখক: চিকিৎসক