সৌদি আরবসহ বেশ কয়েকটি দেশ কাতারের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করার এক সপ্তাহের মধ্যেই খাদ্য বোঝাই ৫টি প্লেন কাতারে পাঠিয়েছে ইরান। আঞ্চলিক অবরোধের কারণে কাতার ঘাটতির সম্মুখীন হওয়ায় সৌদির প্রধান প্রতিদন্দ্বী দেশ ইরান এই পদক্ষেপ নিলো।

মাত্র ২৫ লাখ জনসংখ্যার ছোট দেশ কাতারে তেল ও গ্যাসের বিশাল মজুদ থাকলেও তারা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়। সৌদি আরবের সীমান্ত দিয়েই কাতারের ৪০ শতাংশ খাবার আসে, যা বন্ধ করে দিয়েছে সৌদি আরব। কাতারকে বিচ্ছিন্ন করা দেশগুলোর কয়েকটি তাদের দেশে অবস্থানরত কাতারের নাগরিকদের দেশত্যাগের নির্দেশ দিলেও কাতার বলছে, তারা একই পন্থা অনুসরণ করবে না।

গত ৫ জুন সৌদি আরব, মিশর, বাহরাইন, সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই), ইয়েমেন এবং লিবিয়া কাতারের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে। পরে মালদ্বীপও একই সিদ্ধান্ত জানায়। জঙ্গিবাদ সমর্থন করে উপসাগরীয় অঞ্চল অস্থিতিশীল করার অভিযোগে দেশগুলো এই সিদ্ধান্ত নেয়।

ইরান এয়ারের একজন মুখপাত্র শাহরোখ নৌশাবাদি এএফপি’কে রবিবার জানান, এখন পর্যন্ত ফল ও সব্জীর মতো খাদ্য বহন করা ৫টি প্লেন কাতারে পাঠানো হয়েছে। এর প্রতিটিতেই ৯০ টন পণ্য রয়েছে। আরও একটি প্লেন আজ পাঠানো হবে। নৌশাবাদি বলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত চাহিদা থাকবে ততক্ষণ খাদ্য সরবরাহ করা হবে।

তবে এই খাদ্য প্রেরণ বাণিজ্যিকভাবে না সাহায্য হিসেবে প্রদান করা হচ্ছে তা স্পষ্ট নয় বলে জানায় বিবিসি। ইরানের গণমাধ্যম তাসনিম নিউজ এ্যাজেন্সির বরাতে এএফপি আরও জানায়, ৩৫০ টন খাদ্য বোঝাই তিনটি জাহাজ কাতারে পাঠানো হচ্ছে।

কাতারে ফ্লাইটের জন্য নিজেদের আকাশসীমাও উন্মুক্ত করে দিয়েছে ইরান। যেখানে সৌদি আরব, বাহরাইন এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত কাতারের জন্য তাদের দেশের আকাশসীমা ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে।

বিশ্লেষকদের মতে, সুন্নি অধ্যুষিত সৌদি আরবের চিরবৈরি শিয়া অধ্যুষিত ইরানের সাথে কাতারের ইতিবাচক সম্পর্ক এবং এই অঞ্চলে ইরানের প্রভাব বৃদ্ধির চেষ্টা সাম্প্রতিক অস্থিরতার অন্যতম কারণ। আর ইরানের এই খাবার পাঠানোর পদক্ষেপ উত্তেজনা নিঃসন্দেহে আরও বাড়াবে।

সৌদি আরব, বাহরাইন, এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) তাদের দেশে অবস্থানরত কাতারের নাগরিকদের আগামী ১৪ দিনের মধ্যে দেশত্যাগের নির্দেশনা দিয়েছে। দেশ তিনটিতে কাতারের ১১ হাজার নাগরিক রয়েছে বলে ধারণা। তবে কাতার জানিয়েছে, এর পাল্টা পদক্ষেপ নিবে না তারা।

আজকের ঘটনা প্রবাহঃ
তবে শুক্রবার পরিস্থিতি শান্ত করতে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসনের আহ্বানের পর সৌদি আরব, বাহরাইন, এবং ইউএই দেশগুলোতে কাতারের নাগরিকদের সাথে সম্পর্কযুক্ত পরিবারের সাথে যোগাযোগের জন্য হটলাইন প্রতিষ্ঠা করেছে, অবরোধ পরবর্তী মানবিক সঙ্কট হ্রাসে যা একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।

আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে নিজেদের পক্ষে লড়াইয়ের জন্য সাবেক ইউএস এ্যাটর্নি জেনারেল জন আশক্রফ্টের শরণাপন্ন হয়েছে কাতার।

ফিফা প্রেসিডেন্ট জিয়ান্নি ইনফান্তিনো বলেন, এই অঞ্চল স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে। সাম্প্রতিক এই সঙ্কট ২০২২ ফুটবল বিশ্বকাপ আয়োজনে কোন নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে না।

কাতারের দাতব্য প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ জঙ্গিদের অর্থায়নের সাথে জড়িত থাকার বিষয়টি অস্বীকার করে মানবসেবামূলক সংস্থাগুলো সন্ত্রাসকে সহায়তা করছে এমন অভিযোগকে উড়িয়ে দিয়েছে।