জেলা ত্রাণ কর্মকর্তার ‘ত্রাণময়ী’ ভূমিকা

প্রকাশ: ৪ জুন, ২০১৭ ০১:২১ , আপডেট: ৪ জুন, ২০১৭ ০১:৪১

পড়া যাবে: [rt_reading_time] মিনিটে


ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী এরকম ব্যস্ত সময় কাটান জেলা ত্রাণ ও পূনর্বাসন কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাইফুল আশরাফ জয়।

বিশেষ প্রতিবেদক
মোহাম্মদ সাইফুল আশরাফ জয়। সহকারী কমিশনার ও কক্সবজার জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। মাস খানেক আগে তিনি জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেছেন। অফিসিয়াল কার্যক্রম গুছাচ্ছিলেন। বিভাগীয় দায়িত্ব পুরোপুরি বোঝে ওঠতেই পারেননি। এরই মধ্যেই ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’র ধকল তাকে মোকাবেলা করতে হলো।
মোহাম্মদ সাইফুল আশরাফ জয় কম বয়সী ত্রাণ ও পূনর্বাসন কর্মকর্তা হলেও পরিস্তিতি মোকাবেলায় মোটেও ঘাবড়াননি। বুদ্ধি, বিচক্ষণতা, সাহস সঙ্গি করে ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় এগিয়েছেন। সংকেত জারীর পর থেকে টানা ২৮ ঘন্টা নির্ঘুম সময় পার করেন জেলার ত্রাণ কর্মকর্তা। কন্ট্রোল রুমের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি দূর্যোগপূর্ণ এলাকাসমূহের সার্বক্ষণিক খোঁজখবর নিয়েছেন। সার্বক্ষণিক সমন্বয় রেখেছেন জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের সাথে।
ঘূর্ণিঝড়ের দিন রাত ৮ টা। জেলা ত্রাণ ও পূনর্বাসন কর্মকর্তার কার্যালয়ে সংবাদের প্রয়োজনে ছুটে গেলাম। দেখলাম, ত্রাণ কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাইফুল আশরাফ জয় চরম ব্যস্ত। ল্যান্ডফোন-মুঠোফোনে প্রতি মুহুর্তের আপডেট নিচ্ছেন এবং দিচ্ছেন।
প্রবাসীরাও জানতে চাচ্ছে- তাদের স্বজনদের অবস্থা, এলাকার অবস্থা। ঠিক এই সময়ে দম ফেলানোর সময় নেই তার। মাত্র ৩/৪ জন জনবল নিয়ে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।
এসময় প্রতিবেদকের সঙ্গে থাকা বেশ কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শীর মন্তব্য ছিল ঠিক এই রকম- ‘ত্রাণ কর্মকর্তা সত্যিই একজন ত্রাণময়ী ব্যক্তি। অফিসিয়াল নাম্বারের পাশাপাশি ব্যক্তিগত মোবাইল নাম্বারও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘কন্ট্রেল রুমের নাম্বার’ হিসেবে ছেড়ে দিয়েছেন। জবাব দিতে মোঠেও কার্পন্য করছেননা। ইয়াং অফিসার বলেই কথা।’
এদিকে ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী ৩ জুন বিকালে ত্রাণ বিষয়ে তথ্য জানতে জেলা ত্রাণ ও পূনর্বাসন কর্মকর্তা কার্যালয়ে গিয়ে দেখা হয় মোহাম্মদ সাইফুল আশরাফ জয় এর সাথে। ওই সময়ও তিনি ব্যস্ত সময় পার করছিলেন। এই কাগজ-সেই কাগজে চোখ বুলাচ্ছেন আর স্বাক্ষর করছেন।
একটু সময় নিয়ে জানতে চাইলাম, কেমন আছেন? ভাল আছেন জানালেন।
এরপর ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্তদের কি পরিমাণ ত্রাণ সহায়তা দেয়া হয়েছে? জানতে চাইলে বিস্তারিত একটি সার্ট এনে দেন। এক্কেবারে ৫ মিনিট আগের আপডেট।
দেয়া তথ্য অনুযায়ী- কক্সবাজার সদরে ২৭ মে. টন চাল, ৭০ হাজার নগদ টাকা, রামুতে ১৮ মে. টন চাল চকরিয়ায় ৪৪ মে. টন চাল, ১ লাখ ৪০ হাজার নগদ টাকা, পেকুয়ায় ২৮ মে. টন চাল, ৭০ হাজার নগদ টাকা, মহেশখালীতে ৭২ মে. টন চাল, ৬ লাখ নগদ টাকা, কুতুবদিয়ায় ৫০ মে. টন চাল, ৬ লাখ নগদ টাকা, উখিয়ায় ৩ মে. টন চাল, টেকনাফে ৬৫ মে. টন চাল, ৬ লাখ নগদ টাকা, কক্সবাজার পৌরসভায় ২৫ মে. টন চাল, ১ লাখ নগদ টাকা বিতরণ করা হয়। এছাড়া ২ লাখ ১২ হাজার ৯২৯ টাকার শুকনো খাবর বিতরণ করা হয়। সবমিলিয়ে ৩৩৪ মে. টন চাল এবং ২৩ লাখ ৯২ হাজার ৯২৯ টাকা দূর্যোগাক্রান্ত এলাকায় বিতরণ করা হয়।
প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে সহকারি কমিশনার ও জেলা ত্রান ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাইফুল আশরাফ জয় বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের সংকেতের পর দেশ-বিদেশ থেকে ৩৩০০ এর উপরে ফোন আসে। দেড় হাজারের অধিক ফোনের জবাব দিয়েছি। এক সেকেন্ডের জন্য ফোন বন্ধ ছিলনা। ল্যান্ডফোন-মুঠোফোনে অবিরত জবাব দিয়েছি। মানুষকে সতর্ক করেছি। দূর্যোগপূর্ণ এলাকার মানুষদের ফোর্স করে নিরাপদে আনা হয়েছে।
তিনি বলেন, সংকেত জারীর পর থেকে জেলা প্রশাসন খুবই আন্তরিক ছিলো। যে যার অবস্থান থেকে সহযোগিতা করেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে প্রচুর কাজে লাগানো হয়েছে। বিশেষ করে ফেসবুককেন্দ্রিক সতর্কতামূলক সংকেত ব্যাপক প্রচার হয়েছে। অনেকে ফেসবুকে আপডেট জানিয়েছে। প্রশাসনের ব্যাপক প্রস্তুতি ও মানুষের সতর্কতায় সংকেত অনুপাতে ক্ষয়ক্ষতি বেশী নয় বলে মন্তব্য করেন জেলা ত্রাণ কর্মকর্তা।
তিনি আরো বলেন, ঘূর্ণিঝড়ে মারা যাওয়া ব্যক্তির স্বজনদের নগদ ২০ হাজার টাকা এবং আহতদের চিকিৎসার জন্য ন্যুনতম ৫ হাজার টাকা করে আর্থিক সহায়তা দেয়া হয়েছে। ত্রাণ তৎপরতা অব্যাহত আছে।