মোঃ কামরুজ্জামান, ফ্রান্স :

 শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতির তীর্থভূমি ফ্রান্সে প্রায় পঞ্চাশ হাজার এর অধিক বাংলাদেশী বসবাস করে। এই বসবাস শুরু হয়েছে দীর্ঘ সময় পূর্ব  হইতে। ফ্রান্সের স্থানীয় প্রশাসন ও জনগোষ্ঠীর কাছে  বাংলাদেশীরা ফরাসী আইনের প্রতি আনুগত্য, নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতি, ব্যবসা বাণিজ্য, ভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর প্রতি সম্মান প্রদর্শন সহ বিভিন্ন কারণে বাংলাদেশ নামটা বেশ পরিচিতি লাভ করেছে। ফ্রান্সে বাংলাদেশীদের ফরাসী প্রশাসনে রেজিস্ট্রেশনকৃত প্রায় একশত চল্লিশ এর অধিক সংগঠন রয়েছে। ফ্রান্সে অনেকে ব্যক্তিগতভাবে বা সংগঠনের নেতৃত্ব থেকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে বাংলাদেশীদের সহযোগিতা করে যাচ্ছেন। কিন্তু এত বড় বাংলাদেশী একটা জনগোষ্ঠী থাকার পরও ফরাসী রাজনীতিতে বা জনপ্রতিনিধি হিসেবে কেউ নাই। অথচ ব্রিটেনে বৃটিশ বাংলাদেশীদের মধ্যে রাজনৈতিকভাবে স্থানীয় পর্যায়ে অবদান বেশি রাখলেও অনেকে জাতীয়ভাবেও বিশেষ অবদান রেখে চলেছেন। ২০১৫ সালের ব্রিটেনের পার্লামেন্টের হাউস অব কমন্সে এমপি পদে প্রধান তিনটি দল থেকে ছয় জন নির্বাচন করেছিলেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত রুশনারা আলী, টিউলিপ রিজওয়ানা সিদ্দিক, রূপা আশা হক, আনোয়ার বাবুল মিয়া, মিনা সাবেরা রহমান ও প্রিন্স সাদিক চৌধুরী। এর মধ্যে রোশনারা আলী আলী,রূপা হক ও টিউলিপ সিদ্দিক জয়লাভ করেছিলেন। এছাড়া টাওয়ার হ্যামলেটের মেয়র নির্বাচিত  হয়েছিলেন লুৎফর রহমান । মেয়র নির্বাচনে লেবার পার্টির প্রার্থী হয়েছিলেন কাউন্সিলর হেলাল আব্বাস।খালেস উদ্দিন আহমেদ এবং হেলাল রহমান কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছিলেন। মুরাদ কুরেইশি লেবার রাজনীতিবিদ হিসেবে গ্রেটার লন্ডন এসেম্বলিতে দায়িত্ব পালন করেছেন।ব্রিটেনে লর্ড সভার সদস্য,পার্লামেন্ট মেম্বার,মেয়র,কাউন্সিলর,জজ,প্রশাসনিক কর্মকর্তা সব বাংলাদেশীরা অর্জন করেছেন।নরওয়েতে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত সায়রা খান  এবং আখতার চৌধুরী নামে আরেক বাংলাদেশী পার্লামেন্ট সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন কিন্তু ফ্রান্সে  বাংলাদেশীদের ফরাসী রাজনীতিতে কোন অবস্থানই নাই।

ফ্রান্সে বাংলাদেশী কমিউনিটিতে অনেক যোগ্যতা সম্পন্ন ব্যক্তি আছেন ফরাসী রাজনীতিতে প্রতিনিধিত্ব করা এবং জনপ্রতিনিধি হওয়ার।উদাহরণ সরূপ ফ্রান্সের তুলুজের ফখরুল আকম সেলিম।তিনি দীর্ঘদিন যাবত বাংলাদেশীদের ব্যক্তিগতভাবে বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ বা আর্থিক সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়ে বাংলাদেশীদের ফরাসী সমাজে প্রতিষ্ঠিত করার অবদান রেখেছেন। তুলুজে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ার পেছনে তার প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে অবদান রয়েছে।তিনি ফরাসী ভাষায়ও পারদর্শী, স্থানীয় প্রশাসনিক পর্যায়েও তার পরিচিতি রয়েছে এবং দীর্ঘদিন ধরে তুলুজ এবং ইউরোপের বাংলাদেশী সংগঠনের নেতৃত্ব দিয়ে আসিতেছেন। এই সকল ব্যক্তি ফরাসী রাজনীতিতে আসলে বা ভবিষ্যতে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হলে বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি অনেক উজ্জ্বল হবে।পাশাপাশি ফ্রান্সে বসাসরত বাংলাদেশীরাও বিভিন্নভাবে লাভবান সহ ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ফ্রান্সের মূলধারার  রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হওয়ার পথ খুলে যাবে।তাই এর জন্য প্রয়োজন তুলুজে বসবাসরত বাংলাদেশীদের সম্মিলিত বা ঐক্যজোট হয়ে ফখরুল আকম সেলিমকে রাজনীতিতে যোগদান এবং স্থানীয় বা জাতীয় নির্বাচনে প্রার্থীতা হওয়ার উদ্বুদ্ধ করা। প্রকৃত পক্ষে বর্তমান সহ ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে মূলধারার এ রাজনীতিতে সম্পৃক্ত রাখতে আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস এর বিকল্প  নেই। একইভাবে প্যারিস, লিল, লিয়ন, বজাঞ্ছঅ এবং মারশাই সহ যেসব জায়গায় যোগ্য বাংলাদেশী রয়েছেন তাদেরকেও উদ্বুদ্ধ করতে হবে, তাহলে অদূর ভবিষ্যতে ব্রিটেনের মত ফ্রান্সেও বাংলাদেশীরা সুনাম অর্জন করতে পারবে।

এখন বাংলাদেশীরা স্বপ্নের দিন গুণতে শুরু দেখতে চায় যে, কবে সেই সুদিন আসবে, যেদিন ফ্রান্সে ব্রিটেন এবং নরওয়ের মত ফ্রান্সের মূলধারার রাজনীতিতে বাংলাদেশীরা সম্পৃক্ত হয়ে লাল সবুজের বাংলাদেশকে ফ্রান্সের ইতিহাসের সাথে সম্পৃক্ত করবে।