প্রথম আলো:
আগামী নির্বাচন সামনে রেখে ‘ভিশন ২০৩০’ শিরোনামে একটি রূপরেখার খসড়া চূড়ান্ত করেছে বিএনপি। দলটি ক্ষমতায় গেলে কীভাবে দেশ চালাবে, তা এই রূপরেখায় উল্লেখ করা হয়। এর ভিত্তিতেই নির্বাচনের ইশতেহার তৈরি করা হবে বলে বিএনপির দায়িত্বশীল সূত্রগুলো জানিয়েছে।

একই সঙ্গে আন্দোলন ও নির্বাচন সামনে রেখে সাংগঠনিক প্রস্তুতির অংশ হিসেবে সারা দেশে ৭৭টি সাংগঠনিক জেলায় কর্মিসভা করার সিদ্ধান্ত নেয় দলটি। এই কর্মসূচি পালনের যে সময়সীমা ঠিক করা হয়েছে, গতকাল ছিল তার প্রথম দিন। কিন্তু গতকাল শনিবার কোথাও কর্মিসভা হয়নি। বৃহস্পতিবারের আগে কর্মিসভা শুরু করার সম্ভাবনা নেই বলে দলীয় সূত্রগুলো জানায়।

চূড়ান্ত ‘ভিশন ২০৩০’
বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ের একটি সূত্র জানায়, সরাসরি বিএনপির রাজনীতিতে জড়িত নন, এমন একজন সাবেক অধ্যাপকের নেতৃত্বে ‘ভিশন ২০৩০’ শীর্ষক রূপরেখার খসড়া চূড়ান্ত করা হয়েছে। এটি নিয়ে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে কয়েক দফা বৈঠক হয়েছে। স্থায়ী কমিটির পরবর্তী সভায় তা চূড়ান্ত করা হবে।

জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, গত বছরের মার্চে বিএনপির জাতীয় সম্মেলনের দিন দলের চেয়ারপারসন ‘ভিশন ২০৩০’ শিরোনামে যে সংক্ষিপ্ত রূপরেখা দিয়েছিলেন, তা বিস্তারিত আকারে তৈরি করা হয়েছে। যেকোনো সময় খালেদা জিয়া তা জনগণের সামনে তুলে ধরবেন। এটার ভিত্তিতে সময়মতো নির্বাচনের ইশতেহার দেওয়া হবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির একজন জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, আগামী মাসে এই রূপরেখাটি আনুষ্ঠানিকভাবে তুলে ধরা হতে পারে। বিএনপি ক্ষমতায় গেলে কীভাবে দেশ পরিচালনা করবে, তার একটি ধারণা এই রূপরেখায় দেওয়া হবে। নতুন ধারার সরকার ও রাজনীতি প্রতিষ্ঠা করার একটি চিন্তা এই রূপরেখার খসড়ায় তুলে ধরা হয়েছে।

রূপরেখায় প্রধানমন্ত্রীর নির্বাহী ক্ষমতায় ভারসাম্য আনা, রাষ্ট্রের এককেন্দ্রিক চরিত্র ঠিক রেখে বিদ্যমান সংসদীয় ব্যবস্থার সংস্কার ও সংসদ দ্বিকক্ষবিশিষ্ট করা; ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ, সুনীতি, সুশাসন ও সুসরকারের সমন্বয় ঘটানো; গণভোট ফিরিয়ে আনা; নির্বাচন কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন, পাবলিক সার্ভিস কমিশন, মানবাধিকার কমিশনসহ সাংবিধানিক ও আধা সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রয়োজনীয় সংস্কার আনা; উচ্চ আদালতে বিচারক নিয়োগসংক্রান্ত আইন করা; ২০৩০ সালের মধ্যে দেশকে একটি উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করা, মাথাপিছু আয় পাঁচ হাজার মার্কিন ডলার এবং প্রবৃদ্ধি দুই অঙ্কে নেওয়ার জন্য বিএনপির পরিকল্পনায় বিস্তারিত থাকবে।

এ ছাড়া শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি, যোগাযোগ, শিল্প, বাণিজ্য, কর্মসংস্থান সৃষ্টিসহ বিভিন্ন খাতওয়ারি পরিকল্পনাও থাকবে। দলটির নেতারা বলছেন, জনগণ ও আন্তর্জাতিক বন্ধুদের বার্তা দেওয়ার লক্ষ্যে এই রূপরেখা তৈরি করা হচ্ছে।

দেশব্যাপী কর্মিসভায় ৫১ দল

সারা দেশে ৭৭টি সাংগঠনিক জেলায় কর্মিসভা করার জন্য বিএনপি ৫১টি দল গঠন করে। ১৮ এপ্রিল বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এক চিঠিতে ২২ এপ্রিল থেকে আগামী ৭ মের মধ্যে এই কর্মসূচি করার নির্দেশ দেন। কর্মিসভার একটি প্রতিবেদন কেন্দ্রীয় দপ্তরে দিতে বলা হয়। দলের উচ্চপর্যায়ের সূত্রগুলো বলছে, আগামী বৃহস্পতি বা শুক্রবার থেকে কর্মিসভা শুরু হতে পারে।

এই বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ (প্রিন্স) প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের প্রতিকূল পরিবেশের সঙ্গে লড়াই করে এগোতে হচ্ছে। স্থান, পুলিশের অনুমতি পাওয়াই মুশকিল। পরিস্থিতি বিবেচনা করে নির্ধারিত সময়ে সব জায়গায় কর্মসূচি করার উদ্যোগ থাকবে।’

মির্জা ফখরুল ইসলামের সই করা চিঠিতে কর্মিসভায় বর্তমান রাজনীতি, দলের অবস্থান ও দলের ঐক্য নিয়ে বক্তব্য রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও যশোরের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন (আলাল) প্রথম আলোকে বলেন, সর্বশেষ সাংগঠনিক অবস্থা পর্যালোচনা ও নেতা-কর্মীদের চাঙা করা, নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি আদায়ে আন্দোলন গড়ে তোলা এবং সেটাকে পুঁজি করে নির্বাচনের সঙ্গে সংযোগ ঘটানোর লক্ষ্যে এই কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে।