মোঃ নাজিম উদ্দিন, দক্ষিণ চট্টগ্রাম :
দক্ষিণ চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার মাদার্শা ইউনিয়নে পাহাড়ঘেরা সমতল ভূমিতে জমজমাট মক্কার বলীখেলা দেখতে গত ২০ এপ্রিল বৃহস্পতিবার জড়ো হয়েছিল হাজারো মানুষ। উপজেলার ঐতিহ্যবাহী মক্কার বাড়ির পাহাড় ঘেরা মাঠে এ বলীখেলার ১৩৮তম আসর বসেছিল এবার। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে আসা বলীদের শ্বাসরুদ্ধকর লড়াই চলছিল। অন্যদিকে জমে উঠেছিল হস্তশিল্প আর গ্রামীন খাবারদাবারের বেচাকেনা। জুঁয়ার আসরও থেমে ছিলনা। এ রকম উৎসব উপলক্ষে উপজেলার আশপাশের কয়েক গ্রামের মানুষের বছরে হাতেগোনা দুয়েকবারই আসে। কক্সাবাজার, উখিয়া, চকরিয়া, বাঁশখালি, খুলনা ও মহেশখালী থেকে বলী এসেছিল এবারের আসরে। খেলার মূল আকর্ষন ছিল খুলনার ব্যাটালীয়ন আনসার সদস্য মো. আব্দুর রাকিব বলী ও মহেশখালীর মো. হোসেন বলী। দু’জনের মধ্যে তুমূল মল্ল যুদ্ধ চলে অনেক্ষন। অবশেষে মক্কার বলী খেলায় কক্সবাজার মহেশখালীর মো. হোসেন বলীকে পরাজিত করে চ্যাম্পিয়ন হন খুলনার ব্যাটালীয়ন আনসার সদস্য মো. আব্দুর রাকিব বলী। মক্কার বলীখেলা উপলেক্ষ সপ্তাহব্যাপী চলছে গ্রামীন পন্যের মেলা। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে মৃৎশিল্পীরা এসেছিল পসরা নিয়ে। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস পত্র, খাবার ও নানা ধরনের খেলনা বিকিকিনি হয়েছে এ মেলায়। বলীখেলা ছিল মেলার মূল আকর্ষণ বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় আয়োজকরা ঢোল-বাজনার তালে তালে বলীদের সঙ্গে নিয়ে মাঠে নামেন। মুহুর্তের মধ্যে মক্কার বাড়ির মাঠ কানায় কানায় ভরে উঠে। দেখতে দেখতে লোকে লোকারণ্য হয়ে যায় মাঠ। জায়গা সংকুলান না হয়ে পাশের উচু পাহাড়ে এবং গাছের ডালে উঠে বসেছে অনেকে বলীখেলা উপেভাগ করার জন্য।

খেলায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন খুলনার ব্যাটালীয়ান আনসার সদস্য শেখ শিপন বলী ও চকরিয়ার তারেকুল ইসলাম জীবন বলী। উখিয়ার কলিম উল্লাহ বলী, ছিদ্দিক বলী, জয়নাল বলী, জসিম বলী, হাসান বলী, আকতার বলী ও মামুন বলী। খেলার আয়োজক মাদার্শা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান নাজমুল আলম বলেন, ১৩৭ বছর আগে তাঁর দাদা মোহাম্মদ আবদুল কাদের বক্স চৌধুরী বাঙ্গালী ঐতিহ্য আর কৃষ্টি ধরে রাখার জন্য এ খেলার আয়োজন করেছিলেন। তাঁর ধারাবাহিকতায় প্রতিবছর ৭ বৈশাখ এ খেলা অনুষ্ঠিত হয়। সাতকানিয়া, বাঁশখালি, লোহাগাড়া, চন্দনাইশ, পটিয়া, আনোয়ারা ও বোয়ালখালিসহ আশপাশের গ্রামে বাঁশবেত, মৃৎশিল্প, কৃষিপণ্য ও গৃহস্থালির নানা সামগ্রি বিক্রি হয় বলীখেলা উপলক্ষে বসা এ মেলায়। অনেকে মেলায় আসেন সারা বছরের ব্যবহার্য জিনিসপত্র সংগ্রহ করতে। কেরানীহাট নিউ মার্কেটের ব্যবসায়ী মো. সোলাইমান বলেন, ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সবার মিলন মেলায় পরিনত হয় এ মেলা। আমি প্রতি বছরের মতো এবার ছেলে-মেয়ে নিয়ে মেলায় এসে কিছু নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস ক্রয় করি। বলী খেলায় প্রধান অতিথি হিসাবে খেলা উদ্বোধন করেন সাতকানিয়া উপজেলা নির্র্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ উল্যাহ। এ সময় উপস্থিত ছিলেন, মাদার্শার চেয়ারম্যান আ. ন. ম. সেলিম উদ্দিন চৌধূরী, সোনাকানিয়ার সাবেক ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মাষ্টার আবু তাহের, বশির আহমদ, ইউপি সদস্য মনু ও কায়েস উদ্দিন চৌধুরী।