সংবাদ বিজ্ঞপ্তি:
কক্সবাজার, ২৭ নভেম্বর, ২০২৫: ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব এডুকেশনাল ডেভেলপমেন্ট (BRAC IED) পরিচালিত ক্রিয়েটিভ ক্লাব–এর মূল্যায়নে দেখা গেছে, এই স্কুল–পরবর্তী কর্মসূচিটি কক্সবাজারের স্থানীয় কিশোর-কিশোরীদের মানসিক সুস্থতা ও সামাজিক বিকাশে ইতিবাচক পরিবর্তন আনছে।
২০১৭ সাল থেকে কক্সবাজারে ১১ লক্ষেরও বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থী আসার ফলে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর ওপর বড় ধরনের চাপ তৈরি হয়েছে। স্থানীয় মানুষজন সামাজিক ও অর্থনৈতিক নানা সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে এবং একটি অস্থির পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে। এই পরিবর্তন স্থানীয় কিশোর-কিশোরীদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর বড় ধরনের প্রভাব ফেলেছে, তবে বিষয়টি প্রায়শই উপেক্ষিত থেকেছে।
এই ঘাটতি পূরণের জন্য ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব এডুকেশনাল ডেভেলপমেন্ট (BRAC IED) চালু করেছে ক্রিয়েটিভ ক্লাব কর্মসূচি। এই কর্মসূচিটি ১২ মাস ধরে স্কুলের ক্লাসের পর পরিচালিত হয়, যার মূল উদ্দেশ্য সৃজনশীল কাজ, খেলাধুলা, ও পরিবেশবান্ধব আচরণের মাধ্যমে কিশোর-কিশোরীদের আত্মবিশ্বাস, মানসিক সুস্থতা ও প্রতিকূলতা মোকাবিলার ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করা।
ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অফ গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (BIGD)-এর মূল্যায়ন অনুযায়ী, ক্রিয়েটিভ ক্লাব কর্মসূচি মেয়েদের মানসিক সুস্থতায় উল্লেখযোগ্য ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। Stirling Children’s Well-being Scale অনুযায়ী কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া মেয়েদের মানসিক সুস্থতার স্কোর ৫৯ থেকে বেড়ে ৬৩ হয়েছে। তাছাড়া, শিশুদের মধ্যে অন্তত একটি ঘরোয়া বা বাইরের খেলায় অংশগ্রহণকারীর হার ২৩% পয়েন্ট বৃদ্ধি পেয়েছে (কন্ট্রোল দলের মধ্যে এই হার ৩৪% যা ট্রিটমেন্ট দলে ৫৭%), যা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।
কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া শিশুদের সামাজিক দক্ষতায়ও ইতিবাচক প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে। ট্রিটমেন্ট দলে কন্ট্রোল দলের তুলনায় বেশি শিশু নতুন বন্ধু বানাতে উদ্যোগ নেয় (৫০% বনাম ৩৭%), সম্পর্ক ভালো রাখা বিষয়ে জানে (৫৪% বনাম ৪৪%) এবং নিজের সমস্যা অন্যের সাথে ভাগ করে নেয় (৬৮% বনাম ৬০%)।
গবেষণার ফলাফলগুলি একটি নলেজ-শেয়ারিং অনুষ্ঠানে উপস্থাপন করা হয়, যা যৌথভাবে BRAC IED, BIGD, এবং Swansea University আয়োজন করেছিল। অনুষ্ঠানে ক্রিয়েটিভ ক্লাব কর্মসূচির প্রভাব মূল্যায়নের বিষয়টি তুলে ধরা হয়, পাশাপাশি কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার হ্নীলা ও বাহারছড়া ইউনিয়নে পরিচালিত ইয়ুথ সেনসাস-এর ফলাফলও উপস্থাপন করা হয়। এছাড়া Swansea University-এর নেতৃত্বে ব্রিটিশ একাডেমির বাই-ল্যাটারাল চেয়ার (BRC) প্রকল্পের অধীনে পরিচালিত কিশোর-কিশোরী ক্লাব এবং গ্রিন প্লে ল্যাব-এর মূল্যায়নের ফলাফলও উপস্থাপন করা হয়।
২০২৪ সালের আগস্ট থেকে নভেম্বর পর্যন্ত, ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অফ গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (BIGD) হ্নীলা ও বাহারছড়া ইউনিয়নের স্থানীয় জনগোষ্ঠী এবং জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মায়ানমারের নাগরিক (FDMN)-দের মধ্যে একটি ইউথ সেনসাস পরিচালনা করে। এই জরিপে যুবকদের জনতাত্ত্বিক তথ্য, পরিবারের জ্বালানি ব্যবহার এবং প্রশিক্ষণ অংশগ্রহণের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। ফলাফলগুলো দেখায় যে, নবায়নযোগ্য জ্বালানির প্রতি উচ্চ আগ্রহ রয়েছে, তবে টেকসই কর্মসংস্থানের বিষয়ে সচেতনতা কম; কেবল ২৪.৬% তরুণ-তরুণী এই ধরনের সুযোগ সম্পর্কে পরিচিত। তবুও, ৬৮.৬% তরুণ-তরুণী বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, জৈব কৃষি, এবং সৌরশক্তি মত টেকসই কর্মক্ষেত্র নিয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। তবে আর্থিক সীমাবদ্ধতা একটি বড় প্রতিবন্ধকতা: ৯৪.২% পরিবার জানিয়েছে যে, তারা সৌরবিদ্যুৎ গ্রহণের জন্য মাসিক কিস্তিতে মূল্য পরিশোধের সুবিধা পছন্দ করবে। এই ফলাফলগুলো দেখায় যে, নবায়নযোগ্য জ্বালানি গ্রহণ বৃদ্ধির জন্য উন্নত অর্থায়ন ব্যবস্থা এবং শক্তিশালী সরকারী–বেসরকারি অংশীদারিত্বের প্রয়োজন।

গবেষণায় দেখা গেছে যে, মোট ৫৩.৯% তরুণ-তরুণী এখন কোনো শিক্ষা, চাকরি বা প্রশিক্ষণে যুক্ত নয় (NEET)। এর মধ্যে FDMN নারীদের হার সবচেয়ে বেশি—৮৭.২%, যেখানে স্থানীয় নারীদের মধ্যে এই হার ৬০.৭%। স্থানীয় পুরুষদের মধ্যে NEET হার সবচেয়ে কম, মাত্র ১৪.৩%, FDMN পুরুষদের মধ্যে এই হার ২৬.৫%। এই তথ্য প্রমাণ করে যে, NEET হ্রাস করতে বিশেষভাবে নারীদের জন্য লক্ষ্যভিত্তিক বিনিয়োগ, মানসম্মত শিক্ষাব্যবস্থা ও বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণের প্রয়োজন, এবং বিদ্যমান লিঙ্গভিত্তিক পার্থক্যও কমাতে হবে।
অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট অতিথিবৃন্দ ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন জনাব মোঃ শামসুদ দৌজা, অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (যুগ্ম সচিব), আরআরআরসি কার্যালয়, কক্সবাজার। তিনি তাঁর বক্তব্যে বলেন: “কক্সবাজারের যুবকদের, অন্য যেকোনো কিছুর চেয়ে বেশি, তাদের সহকর্মীদের এবং বৃহত্তর সমাজের সাথে আরও বেশি সংযুক্ত বোধ করার জন্য স্কুল-পরবর্তী কার্যক্রমে যুক্ত হওয়া প্রয়োজন।”
বিআইজিডি-এর রিসার্চ ফেলো ড. প্রলয় বড়ুয়া, গবেষণার গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলো তুলে ধরে বলেন: “তরুণরা এমন লক্ষ্যভিত্তিক প্রশিক্ষণ খুঁজছে যা তাদের আকাঙ্ক্ষার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। এই আকাঙ্ক্ষা নারী ও পুরুষদের ক্ষেত্রে ভিন্ন হয়ে থাকে। মহিলাদের ফ্রিল্যান্সিং-এর সুযোগ দেওয়া হলে এবং নিয়োগকারীদের সাথে তাদের যুক্ত করা হলে তরুণীদের মধ্যে বিদ্যমান বেকারত্ব কমবে।”
ব্র্যাক আইইডি-এর সিনিয়র লেকচারার ও গবেষক শাকিলা ইয়াসমিন মন্তব্য করেন, ” প্লে ল্যাব এবং ক্রিয়েটিভ ক্লাবগুলোর জন্য অতিরিক্ত কোনকিছুর প্রয়োজন হয় না; তাই প্রোগ্রামগুলো বড় পরিসরে বাস্তবায়ন করার সময় আমাদের এটি মনে রেখে আরও ভালোভাবে কাজ করা প্রয়োজন।”
বিআইজিডি-এর রিসার্চ ডিরেক্টর অধ্যাপক মুনশি সুলায়মান বলেন: “তরুণরা কাজ করার জন্য প্রকৃত সুযোগ চায়, এবং নিয়োগকর্তারা নির্ভরযোগ্য কর্মী চান। আমাদের উচিত সেই ব্যবধান পূরণের দিকে মনোযোগ দেওয়া এবং এমন পথ তৈরি করা যা মানুষকে টেকসই জীবিকা সুরক্ষিত করতে সহায়তা করে।”
সমাপনী বক্তব্যে বিআইজিডি-এর সহকারী অধ্যাপক, রিসার্চ ফেলো এবং জেন্ডার ও সামাজিক উন্নয়ন ক্লাস্টারের প্রধান ড. শায়লা আহমেদ উপস্থিত সকলকে ধন্যবাদ জানান। তিনি এ ধরনের গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা পরিচালনা এবং প্রসারের জন্য সম্মিলিত প্রচেষ্টা, সহযোগিতা এবং সম্ভাব্য সব সুযোগ সক্রিয়ভাবে চিহ্নিত করার উপর গুরুত্ব আরোপ করে তাঁর বক্তব্য শেষ করেন।
