জালাল আহমদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি:
ক্ষমতাসীন দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ৩০তম জাতীয় সম্মেলন আজ।
আজ ৬ ডিসেম্বর(২০২২) মঙ্গলবার সকাল সাড়ে দশটায় ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সহ দলের শীর্ষ নেতারা উপস্থিত থাকবেন বলে জানা গেছে।

১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলের এসেম্বেলি হলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে গড়া এই সংগঠনটি আওয়ামী লীগের “আদর্শিক কর্মী” উৎপাদনের কারখানা হিসেবে পরিচিত। ঐতিহাসিক ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমেই ছাত্রলীগ ইতিহাসের পাতায় স্থান করে নিয়েছে। ভাষা আন্দোলনের পর দেশের বিভিন্ন আন্দোলন -সংগ্রামের সাথে জড়িত ছিলেন এই সংগঠনটির নেতাকর্মীরা। এই সংগঠনের সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়ে অতীতে কেন্দ্রীয় রাজনীতি জায়গা করে নিয়েছেন অনেকেই।

ছাত্রলীগের ৩০তম সম্মেলনের জন্য গঠিত নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে , ছাত্রলীগের দুই শীর্ষ পদ সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদকের জন্য মোট মনোনয়ন পত্র জমা দিয়েছেন ২৫৪ জন। তাদের মধ্যে সভাপতি পদে ৯৬ জন এবং সাধারণ সম্পাদক পদে ১৫৮ জন। তবে কয়েকজন সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক উভয় পদে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।

ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সংগঠনের নেতাদের বয়স হবে অনুর্ধ্ব ২৭ বছর। কিন্তু যথাসময়ে সম্মেলন না হওয়ায় বিগত কয়েকটি সম্মেলনে বয়স দুই বছর ছাড় দেওয়া হয়।
ছাত্রলীগের সর্বশেষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২০১৮ সালের ১১ এবং ১২ মে ।২০১৮ সালের ৩১ জুলাই রেজোয়ানুল হক চৌধুরী শোভন কে সভাপতি এবং গোলাম রাব্বানী কে সাধারণ সম্পাদক করে কমিটি ঘোষণা করা হয়। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে টেন্ডারবাজিতে জড়িয়ে পড়ায় ২০১৯ সালে সেপ্টেম্বর মাসের শুরুতে তাদের কে বাদ সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট আল নাহিয়ান খান জয় কে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এবং সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য কে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয়।২০২০ সালে জানুয়ারী মাসে ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাদের কে ভারমুক্ত করেন।
করোনা মহামারীর কারণে দীর্ঘ সাড়ে চার বছরে অনুষ্ঠিত হয় নি ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সম্মেলন। তাই এবারের সম্মেলনে ছাত্রলীগের নেতাদের বয়স অনুর্ধ্ব ৩০ বছর করার দাবি নেতাকর্মীদের। ছাত্রলীগের দায়িত্ব প্রাপ্ত চার নেতা আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবীর নানক,আবদুর রহমান ,যুগ্ন সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম ও সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক বয়স বৃদ্ধির বিষয়টি নিয়ে একমত পোষণ করতে পারে নি। বিষয়টি তারা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক অভিভাবক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপর ছেড়ে দিয়েছেন।

ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে শীর্ষ পদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অগ্রাধিকার দেয়া হয়। বিগত দুই দশকের ইতিহাসে শুধুমাত্র ২০০২ সালে গঠিত লিয়াকত শিকদার এবং নজরুল ইসলাম বাবু কমিটি ছিল ব্যতিক্রম।লিয়াকত শিকদার এবং নজরুল ইসলাম বাবু (বর্তমানে নারায়ণগঞ্জ জেলার আড়াইহাজার উপজেলার এমপি) কেউই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন না।। লিয়াকত শিকদার ঢাকা কলেজের ছাত্র ছিলেন এবং নজরুল ইসলাম বাবু জগন্নাথ কলেজের (তখনো জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় আইন পাস হয় নি) ছাত্র ছিলেন।
২০০৬ সালের মার্চ পর্যন্ত তারা দায়িত্ব পালন করেছেন। তাদের পর থেকে আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাহির থেকে নেতা নির্বাচিত করা হয় নি।
২০০৬ সালে রিপন -রোটন কমিটির পরে ২০১৫ সালে কাউন্সিলের মাধ্যমে প্রত্যক্ষ ভোটে সাইফুর রহমান সোহাগ কে সভাপতি এবং জাকির হোসেন কে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়। তবে ২০১৫ সালের কাউন্সিলে ভোট জালিয়াতির অভিযোগ করেন অনেকেই।২০১৫ সালে গঠিত সোহাগ- জাকির কমিটি ২০১৮ সালে ঐতিহাসিক কোটা সংস্কার আন্দোলন দমনে কার্যকর ভূমিকা রাখতে না পারলে তড়িঘড়ি করেই ২০১৮ সালের ১১ এবং ১২ মে ২৯তম জাতীয় সম্মেলন আয়োজন করে আওয়ামী লীগ।
করোনা মহামারীর কারণে দীর্ঘ সাড়ে চার বছর পর ছাত্রলীগের সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করার জন্য ৩০তম জাতীয় সম্মেলন আয়োজন করায় তৃণমূল নেতাকর্মীরা উজ্জীবিত হয়ে উঠেছে।
এবারের সম্মেলনে কমিটি গঠন করার ক্ষেত্রে করোনা মহামারীর সময় সাধারণ শিক্ষার্থীদের পাশে থাকা নেতাকর্মীদের অগ্রাধিকার দেয়া হয় বলে জানা গেছে। সেই হিসেবে করোনা মহামারীর সময় মানবিক কাজে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করা সাদ বিন কাদের চৌধুরী, তানভীর হাসান সৈকত এর মতো মানবিক নেতারা এগিয়ে আছেন।

এবারের ছাত্রলীগের সম্মেলনে শীর্ষ পদে আসীন হওয়ার জন্য অনেকেই অঞ্চলভিত্তিক নেতাদের পাশাপাশি কেন্দ্রীয় নেতাদের সাথে তদবিরে ব্যস্ত সময় পার করেছেন।
চট্টগ্রাম বিভাগ:
চট্টগ্রাম বিভাগ থেকে এগিয়ে আছেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির বর্তমান সাংগঠনিক সম্পাদক সাদ বিন কাদের চৌধুরী, যুগ্ন সম্পাদক তাহসান আহমদ রাসেল, উপ -সমাজ সেবা বিষয়ক সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত‌‌‌,সহ সম্পাদক
আবছার হাসান রানা, স্কুল ছাত্র বিষয়ক উপ- সম্পাদক আবদুল কাইয়ুম হীরা, শিক্ষা ও পাঠচক্র বিষয়ক সম্পাদক আবদুল্লাহ আল মাসুদ লিমন প্রমুখ।

ছাত্রলীগে অতীতে এই অঞ্চল থেকে আওয়ামী লীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, মনিরুল হক চৌধুরী, মাইনুদ্দিন হাসান শাহেদ সভাপতি এবং মাহফুজুল হায়দার চৌধুরী রোটন সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন।

রাজশাহী এবং রংপুর বিভাগ:
রাজশাহী এবং রংপুর মিলে উত্তরবঙ্গ গ্রুপ হিসাব করা হয়। উত্তরবঙ্গ গ্রুপ থেকে এগিয়ে আছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সদ্য সাবেক সাধারণ সম্পাদক এবং ডাকসুর সাবেক এজিএস সাদ্দাম হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ হলের সভাপতি জাহিদুল ইসলাম জাহিদ, কেন্দ্রীয় কমিটির সহ- সভাপতি রাকিব হোসেন, প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক হায়দার মোহাম্মদ জিতু প্রমুখ।
অতীতে উত্তরবঙ্গ থেকে রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন সভাপতি,খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এবং ইকবালুর রহিম সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন।

বরিশাল:
বরিশাল বিভাগ থেকে এগিয়ে আছেন কেন্দ্রীয় কমিটির সহ সভাপতি তিলোত্তমা শিকদার, সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান, সহ সভাপতি সৈয়দ আরিফ হোসেন প্রমুখ।
অতীতে এই অঞ্চল থেকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন জাহাঙ্গীর কবির নানক, আ ক ম জাহাঙ্গীর, ইসহাক আলী খান পান্না।একসময় ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ছিলেন মোঃ শাহ আলম।

খুলনা বিভাগ:খুলনা বিভাগ থেকে এগিয়ে আছেন
কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক বরিকুল ইসলাম বাঁধন, মানব সম্পদ বিষয়ক সম্পাদক নাহিদ হাসান শাহীন প্রমুখ।
অতীতে এই অঞ্চল থেকে বদিউজ্জামান সোহাগ সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন। বর্তমান সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য এর বাড়িও এই অঞ্চলের যশোরে।
ময়মনসিংহ বিভাগ:
ময়মনসিংহ থেকে এগিয়ে আছেন কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি সোহান খান, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক মেহেদী হাসান তাপস,সহ সম্পাদক মোঃ রিপন মিয়া,এস এম রাকির সিরাজী, সাইদ আনোয়ার সিজার প্রমুখ।
ছাত্রলীগে অতীতে এই বিভাগ থেকে অসীম কুমার উকিল এবং সিদ্দিকী নাজমুল আলম সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন।

ঢাকা বিভাগ:
ফরিদপুর অঞ্চল থেকে এগিয়ে আছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজী মুহাম্মদ মুহসীন হল এর সাবেক ভিপি এবং বর্তমান সভাপতি শহীদুল হক শিশির , কর্মসংস্থান সম্পাদক রনি মোহাম্মদ, আইন বিষয়ক সম্পাদক ফুয়াদ হোসেন সাহাদাত প্রমুখ।
অতীতে এই অঞ্চল থেকে সাইফুর রহমান সোহাগ এবং লিয়াকত শিকদার সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন। সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন গোলাম রব্বানী আব্দুর রহমান, শাহ মুহাম্মদ আবু জাফর সহ অনেকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন।

ঢাকা বিভাগের ঢাকা অঞ্চলে এগিয়ে আছেন কেন্দ্রীয় কমিটির যোগাযোগ ও উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক শেখ শামীম তূর্য ।

সিলেট বিভাগ:
সিলেট বিভাগ থেকে এগিয়ে আছেন কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সম্পাদক মাহবুব খান, বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় বিষয়ক সম্পাদক আল আমিন রহমান,ঢাবি শাখার সাবেক সহ-সভাপতি আরিফ আল হাসান, কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক উপ আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক জামশেদ আহমদ,সহ সম্পাদক মোঃ মিজানুর রহমান রনি, ওয়াসিম আকরাম প্রমুখ।
অতীতে এই অঞ্চল থেকে সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন ডাকসুর সাবেক ভিপি সুলতান মনসুর এবং সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন জাকির হোসেন।

পদ প্রত্যাশীদের প্রত্যাশা ছাত্রলীগের কমিটি দেওয়ার ক্ষেত্রে যারা স্কুল থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত এবং ওয়ার্ড থেকে উপজেলা, জেলা কিংবা মহানগর পর্যায়ে বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেছেন এমন নেতাদের কমিটিতে শীর্ষ পদে আসীন করবে ছাত্রলীগের সাংগঠনিক অভিভাবক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।