আমাদের দয়াল

প্রকাশ: ২০ জানুয়ারী, ২০২২ ০৮:০৯

পড়া যাবে: [rt_reading_time] মিনিটে



আবুল মনজুর মো. সাদেক


দয়াময় চক্রবর্তী আজ ভোর তিনটায় মারা গেছে । দয়াল আর আমি ককসবাজার পিটিআই ষ্কুলে একসাথে পড়েছি । তারপর ককসবাজার সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ে । অষ্টম শ্রেণী থেকে আমি চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুলে চলে আসলাম । দয়ালের সাথে বাড়ী গেলে দেখা হতো।

স্কুলে থাকতে আমরা প্রথম দ্বিতীয় তৃতীয় হতাম । স্কুলের আগে পরে পিটিআই স্কুলের বিশাল মাঠে খেলতাম আর গড়াগড়ি দিতাম । সবুজ মাঠে গড়াগড়ি দিতে দিতে আমরা প্রতিযোগিতার কঠিন পরীক্ষায় ঢুকে গেলাম।

উচ্চ মাধ্যমিকে দয়াল ককসবাজার কলেজে পড়ল, আমি চট্টগ্রাম কলেজে । উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করার পর দয়াল প্রতিযোগিতার ইঁদুর দৌড়ে হেরে গেল। তাঁর ভাল কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে জায়গা হলোনা।

দয়ালের সহজ সরল মস্তিস্ক আর চাপ নিতে পারলনা। সে সিজোফ্রেনিয়ায় ভুগতে লাগল। কখনো ভালো, কখনো খারাপ এ ভাবে দিন যেতে থাকল।

যখন ভালো থাকত, বন্ধুদের সাথে ফোনে কথা বলত। বন্ধুদের জীবনের সাফল্যগুলো সে খুব উপভোগ করত।

২০১১-১২ সালে আমার চাকরীর ১৭ বছর । সিনিয়র সহকারী প্রকৌশলীতে আটকে আছি । দয়াল আমাকে নিয়মিত ফোন করত – তোর নির্বাহী প্রকৌশলী হতে আর কত বাকি ! তোর কোন মামলা নাইতো?

একই ভাবে আমিন, শারমিন, হাসিনা কখন সহযোগী অধ্যাপক হবে? ডা. বিনয়,পারভেজের কেন এমডি হচ্ছেনা? বশির কি এমডি করবেনা – শুধু প্রাকটিস করেই যাবে? ডা.কফিলের কি হয়েছে,তার বিশেষজ্ঞ ডাক্তার হতে আর কত দেরি!

আমার মেয়ে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করল। দয়াল বলল- দোস্ত, তোকে একটা কথা বলি।আমি আমার সব ডাক্তার ইন্জিনিয়ার বন্ধুদের জীবন দেখলাম। এদের জীবনে সুখ নাই। তুই মেয়েকে ডাক্তার প্রকৌশলী বানাবিনা। দয়ালের কথামত আমি মেয়েকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করে দিলাম।

জীবন নিয়ে আমরা বন্ধুরা পরিকল্পনা,বাস্তবায়ন করছি।দয়াল ছিল আমাদের মনিটরিং, ইভালুয়েশন বিভাগের প্রধান। সে নিজের জীবনে কিছুই পায়নি। তাই,বন্ধুদের জীবনের কোন সাফল্য কোন সময়ের মধ্যে অর্জন হওয়া উচিত, সে নিয়মিত তদারকি করত। সবচেয়ে সৎ, নির্মোহ পরামর্শটা দয়ালই দিতো।

আমাদের মস্তিস্কের নিউরনে অনেক অলিগলি। এর মধ্যে দয়াল বিষয়ক একটা বড় জায়গা আছে। জায়গাটা আর বড় হবেনা। আল্লাহ যদি হায়াত দেন, আমাদের আরো কিছু স্মৃতি বাড়বে, কিছু মুছে যাবে।মৃত্যুর পর সকল স্মৃতি কোথায় না কোথায় ও স্থানান্তর হয়ে যাবে ।

এ মহাবিশ্বে কিছুই হারায়না।দয়াল ও মহাবিশ্বের কোথায়ও না কোথায় ও ঠাঁই নিয়েছে।পরম করুণাময় ঈশ্বর তাঁর পারলৌকিক জীবনে সাফল্য দিন।

সে খুব সাফল্যের কাঙ্গাল ছিল !

 


লেখক: প্রকল্প পরিচালক ,আমার গ্রাম-আমার শহর কারিগরি সহায়তা প্রকল্প, এলজিইডি

(সংগ্রহ – ২০১৮ ইংরেজি প্রয়াত দয়াময় চক্রবর্তী’র মৃত্যু পরবর্তী বাল্যবন্ধুর প্রতিক্রিয়া।)