আলমগীর মানিক,রাঙামাটি:
কোনো প্রকার অনৈতিক আর্থিক লেনদেন ছাড়াই মেধা যোগ্যতায় পার্বত্য জেলা রাঙামাটিতে ২ নারীসহ মোট ১২জন বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীতে চাকুরির সুযোগ পেয়েছে। মাত্র একশো টাকার ব্যাংক ড্রাফট এর বিনিময়ে চাকুরি পাওয়া এই ১২জনের প্রায় সকলেই অত্যন্ত দরিদ্র পরিবারের সন্তান।

রোববার বিকেলে রাঙামাটির সুখী নীলগঞ্জের নতুন পুলিশ লাইনে রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি) পদে প্রাথমিকভাবে উত্তীর্ণ হওয়া এই ১২জনকে ফুল দিয়ে ও মিষ্টিমুখ করিয়ে বরণ করে নেন রাঙামাটির পুলিশ সুপার মীর মোদদাছছের হোসেন। এসময় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাহমুদা বেগম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) মারুফ আহমেদ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অশোক, কোতয়ালী থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ কবির হোসেনসহ পুলিশে উদ্বর্তন কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন। চাকুরি প্রাপ্তদের মধ্যে রাঙামাটি সদর উপজেলা থেকে ৪ জন, লংগদু উপজেলা থেকে একজন নারীসহ মোট ৫জন, নানিয়ারচর উপজেলা থেকে একজন নারী ও একজন পুরুষ ও চন্দ্রঘোণা থেকে একজন রয়েছে বলে জানাগেছে। এসময় সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে পুলিশ সুপার মীর মোদদাছছের হোসেন বলেন, এবারের মতো স্বচ্ছতা বিগত দিনে আর হয়েছে বলে আমার জানা নেই। আমরা আল্লাহকে হাজির-নাজির করে বলতে চাই, আমরা নূন্যতম কোনো প্রকার আর্থিক লেনদেন এর সাথে আমাদের কোনো পুলিশ সদস্য বা কর্মকর্তা জড়িত ছিলোনা বা থাকার কোনো সুযোগও রাখা হয়নি। রাঙামাটিতে চাকুরি প্রার্থীদের খাতা ঢাকায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে এবং সেখান থেকে উদ্বর্তন কর্মকর্তাগণ সেই খাতা দেখে একটি নাম্বার দিয়েছেন সেই নাম্বারের আলোকে নির্বাচিতদের আজ মৌখিক পরীক্ষা নিয়ে চুড়ান্তভাবে চাকুরির জন্য প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত করা হয়েছে। আজ যারা চাকরি পেয়েছে তারা নিজেদের যোগ্যতার পরিচয় দিয়েই পেয়েছে। এখানে অন্যকিছু ভাবার অবকাশ নেই। তিনি বলেন, পুলিশের নিয়োগ স্বচ্ছতার বিকল্প নেই। সামনে পুলিশের যেসব নিয়োগ হবে, সেগুলো অতীতের তুলনায় কঠিন থেকে কঠিনতর হবে। পুলিশে সদস্যদের নিয়োগগুলো পুলিশ সদর দপ্তর নিয়ন্ত্রণ ও মনিটরিং করবে। নতুন নিয়োগপ্রাপ্তদের ছয় মাসের প্রশিক্ষণ শেষে দুই বছরের জন্য শিক্ষানবিশ হিসাবে কাজ করতে হবে কনস্টেবল বা এসআই-সার্জেন্টদের। দুই বছর সাফল্যের সঙ্গে দায়িত্ব পালনের পর তাদের চাকুরী স্থায়ী হবে। চাকরি পাওয়া নবাগত পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশ্যে পুলিশ সুপার বলেন, তোমরা সততা বজায় রেখে দেশ ও দেশের মানুষের কল্যাণের জন্য কাজ করবে।

এদিকে, নারী পুলিশ সদস্যপদে চাকুরি পাওয়া লংগদু উপজেলাধীন সোনাই এলাকার বাসিন্দা নাসরিন আক্তার তার অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে জানান, অত্যন্ত দরিদ্র পরিবারের সন্তান আমি। আমার বাবা গ্রামে একটি ছোট্ট পানের দোকান চালিয়ে আমাদের সংসার চালান। অভাব অনটনের কারনে সংসারে প্রায় সময় অশান্তি বিরাজ করতো।তারপরও অনেক কষ্ট করে আমি পড়াশোনা চালিয়ে এসেছি। বর্তমান সময়ে রাঙামাটিতে একটি সরকারী চাকুরি পেতে নিন্মে ৬ থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত লাগে এমতাবস্থায় আমি চাকুরি পাবো এটা কল্পনাতেও ছিলোনা। কিন্তু পরিবারের কথা চিন্তা করে পুলিশ বাহিনীর বিজ্ঞপ্তি দেখে কিছুটা আশান্বিত হয়ে নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করি। এতে আমার ১০০টাকার ব্যাংক ড্রাফট-ই খরছ হয়েছে। মহান আল্লাহকে স্মরণে রেখে সময়মতো সবগুলো পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছি। আল্লাহর রহমতে শেষ পর্যন্ত আমাকে উত্তীর্ণ ঘোষণা করা হয়েছে। এতে করে আমি পুলিশের আইজীপি, রাঙামাটির পুলিশ সুপারসহ সর্বোপরী সকলের নিকট কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। আমি নারী হলেও বাংলাদেশ পুলিশের স্বচ্ছ নিয়োগ পদ্ধতির কারনে আমি আমার মেধার স্বীকৃতি পেয়েছি। এখন আমার অভাবী পিতা-মাতাকে আমি কিছুটা হলেও সুখ দিতে পারবো ইনশাআল্লাহ। এদিকে চাকুরি প্রার্থীরে সাথে কথা বলে জানাগেছে এবার পুলিশে চাকুরি পাওয়াদের মধ্যে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় একজন, উপজাতীয় কোটায় একজন, পোষ্যকোটায় একজন ছাড়া বাকি প্রায় সকলেই অত্যন্ত দরিদ্র পরিবারের সন্তান। তারমধ্যে দু’জনের বাবা রাজমিস্ত্রি বলেও জানাগেছে। চাকুরি প্রাপ্তদের অভিভাবকরা জানিয়েছেন, আসলে বর্তমান সময়ে এই চুড়ান্ত মুহুর্তে নিজ চোখে দেখে এবং কানে শুনেই বিশ্বাস হচ্ছে যে আমাদের সন্তানরা ঘুষ ছাড়াই চাকুরি পেয়েছে। এটা সম্ভব হয়েছে পুলিশ প্রদানের কঠোর অবস্থানসহ রাঙামাটির পুলিশ সুপারের ঐকান্তিক প্রচেষ্ঠার ফলেই।