চট্টগ্রাম প্রতিনিধি:

প্রায় ৯ কোটি লিটার পানি উৎপাদনকারী বহাদ্দারহাটস্থ চট্টগ্রাম ওয়াসার কালুরঘাট আইরন রিমুভাল প্ল্যান্ট (আই আর পি) এর সুরক্ষায় সীমানা প্রাচীর নির্মাণে আর কোন আইনি প্রতিবন্ধকতা নেই। দীর্ঘ ১২ বছর যাবৎ আইনি জটিলতায় আটকে ছিলো উক্ত প্ল্যান্টে সুরক্ষিত সীমানা প্রাচীর নির্মাণ। পানির বিশুদ্ধতা ও নিরাপত্তা রক্ষা করা ছিলো অধিক ঝুঁকিপূর্ণ।

এক যুগ পর বিষয়টি নিষ্পত্তি হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন বিশিষ্ট মানবাধিকার সংগঠনের আইনজীবী জিয়া হাবীব আহ্সান ও মোহাম্মদ জিয়া উদ্দিন (আরমান)।

গতকাল বিজ্ঞ ১ম যুগ্ম জেলা জজ মোঃ খাইরুল আমিনের আদালত চট্টগ্রাম চান্দঁগাও এলাকার মোঃ শওকত ইকবাল চৌধুরী আবেদনের প্রেক্ষিতে ৮৭/২১ মামলায় নিষেধাজ্ঞার এ আবেদন শুনানী শেষে খারিজ করে দেন।

ঘটনা সূত্রে জানা যায়, পানি সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাশন কর্তৃপক্ষ (ওয়াসা) আরসিসি পিলার স্থাপন পূর্বক সীমানা নির্ধারণ করে দখলস্থিত থাকে বহুদিন। অথচ প্রায় ৫২ বছর যাবত ওয়াসা উক্ত প্ল্যান্ট হতে সুপেয় পানি পুরো চট্টগ্রাম শহরে সরবরাহ করে আসছে।

১৯৬৯ সালের একটি মামলায় ওয়াসা ওই সম্পত্তি পেয়ে বিএস ১৩ নম্বর খতিয়ানের মালিকানা ও দখল অর্জন করে।

বিভিন্ন সরকারি সংস্থা প্ল্যান্টটি পরিদর্শন করে প্ল্যান্টের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সীমানা প্রাচীর নির্মাণের উপর গুরুত্ব দিয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে প্রতিবেদন দেয়। কিন্তু স্থানীয় প্রভাবশালী বাদী মোঃ শওকত ইকবাল চৌধুরী ওয়াসার বিরুদ্ধে ইতিপূর্বক ফৌঃ কাঃ বিধির ১৪৫ ধারায় এডিএম আদালতে ফৌজদারী মিছ মামলা নং ৮৭৭/১০ দায়ের করলে উন্নয়ন কাজ বন্ধ হয়ে যায়।

আদালতের নির্দেশে এ.সি ল্যান্ড চান্দগাও সার্কেল সরেজমিন স্কেচ ম্যাপসহ তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করলে তাতে দেখা যায়, সেখানে বাদীর কোন স্বত্ব দখল ও মালিকানা নেই। ওয়াসার উক্ত প্ল্যান্টের পাশে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কতৃপক্ষ এর অধিগ্রহণকৃত রাস্তা বিদ্যমান। ওয়াসা ও সি.ডি.এ-এর রাস্তার মাঝখানে বাদীর কোন জমি না থাকা সত্ত্বেও উক্ত মামলা দায়ের করায় তা খারিজ করা হয়।

বারবার মামলার গ্যাড়াকলে পরে ১২ বছর যাবৎ জনস্বার্থে ওয়াসার উন্নয়ন কাজ বাধাগ্রস্থ হয়। ফলে ৯ একর ২৩ কাঠা জায়গার উপর গড়ে ওঠা বিশাল সুপেয় পানির প্ল্যান্ট নিরাপত্তাহীন হয়ে পড়ে। প্ল্যান্টের পানিতে কেউ নাশকতা চালাতে বিষ প্রয়োগের সম্ভাবনাও কম ছিল না।

সবকিছু বিবেচনায় গত ২৭ অক্টোবর উভয় পক্ষের শুনানী ও আর্জি, আপত্তি, দলিল পত্রাদী পর্যালোচনা পূর্বক আদেশে ওয়াসার বিরুদ্ধে আনীত বাদীর নিষেধাজ্ঞার দরখাস্ত খারিজ করে দেন।

ওয়াসার পক্ষে মামলা পরিচালনা করেন বিশিষ্ট মানবাধিকার আইনজীবী জিয়া হাবীব আহ্সান, অ্যাডভোকেট এ এইচ এম জসিম উদ্দিন, অ্যাডভোকেট মোঃ হাসান আলী, অ্যাডভোকেট শফিউল আলম ও বাদী পক্ষে মামলা পরিচালনা করেন অ্যাডভোকেট জয় ভট্টাচার্য ও তাঁর সহযোগীবৃন্দ প্রমূখ।

ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে এম ফজলুল্লাহ বলেন, ‘যেহেতু বিষয়টি আইনিভাবে মোকাবিলা করার জন্য কর্তৃপক্ষ আইনজীবীদের দায়িত্ব দিয়েছেন, আজ আইনই এর সমাধান করেছে। তিনি আরো বলেন, ‘চট্টগ্রাম নগরের মানুষ যাতে সুপেয় পানি পেতে কোনো ধরনের বেগ পেতে না হয়, আমি সব সময় তাই চেষ্টা করেছি।’