আলমগীর মানিক, রাঙামাটি:
রাঙামাটি খাদ্য বিভাগে পরিবহন ঠিকাদারদের নিয়োগের চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরের ৩০ জুন মাসে। এরপর গত হতে চলেছে প্রায় দুই বছর। তবে পাবলিক প্রকিউরমেন্ট বিধিমালা (পিপিআর) অনুযায়ি নতুন পরিবহন ঠিকাদার নিয়োগে দরপত্র আহবান না করেই সরকারের লাখ লাখ টাকা ব্যয় করার অভিযোগ উঠেছে। আর এতে সরকার বিপুল পরিমান রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

এই বিষয়ে জানতে চাইলে রাঙামাটি জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক সুমাইয়া নাজনীন সংবাদ মাধ্যমকে জানান, আমার এখানে দুই ভাগে ঠিকাদার নিয়োগ করা হয়, একটা নদী পথে আরেকটা সড়ক পথে। আমি নদী পথের ঠিকাকাদার নিয়োগ দিয়ে দিয়েছি, তবে সড়ক পথেরটা বিভাগীয় খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ের সাথে লিঙ্কাপ, তাই দেওয়া সম্ভব হয়নি। সড়ক পথেরটা কেন হচ্ছে না এই বিষয়ে বিভাগীয় খাদ্য নিয়ন্ত্রক মহোদয় ভালো বলতে পারবেন।

সংশ্লিষ্টরা জানান, শুধু রাঙামাটিই নয়! গত প্রায় দুই বছর ধরে চট্টগ্রাম আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রকের নিয়ন্ত্রনাধীন ১১টি জেলার নতুন ঠিকাদার নিয়োগের দরপত্র আহবান আটকে রাখা হয়েছে। খাদ্য মন্ত্রণালয় ও খাদ্য অধিদপ্তরে চিঠি চালাচালিতে তিন মাস অন্তর সময় বাড়িয়েই সংঘবব্ধ সি-িকেটের মাধ্যমে পরিবহনে সরকারের কোটি কোটি টাকা ব্যয় করা হচ্ছে।

নাম প্রকাশ না করা শর্তে চট্টগ্রাম আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক কার্যালয়ের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, ২০১৮-২০১৯ ও ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরে ৪৬৯ প্রতিষ্ঠান পরিবহন ঠিকাদার হিসেবে অর্ন্তভুক্ত হয়েছে। এর চল্লিশ শতাংশ ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান বিভাগীয়, জেলা ও উপজেলা খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তাদের স্ত্রী, ছেলে-মেয়ে, ভাই বা অন্যান্য স্বজন। বিভিন্ন স্বায়ত্ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারাও ঠিকাদার হিসেবে অর্ন্তভুক্ত হয়েছেন। আর এসব নিয়ন্ত্রণ করছেন চট্টগ্রামের আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক এবং চলাচল ও সংরক্ষক কার্যালয়ের একাধিক কর্মকর্তা।
খাদ্য বিভাগের তথ্যমতে, দেশে সরকারি ভাবে আমদানি করা খাদ্যশস্যের বেশির ভাগই আসে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে।

এছাড়া দেশের অভ্যন্তরে প্রান্তিক কৃষক ও চালকল মালিকদের কাছ থেকেও খাদ্যশস্য ক্রয় করে সরকার। এসব খাদ্যশস্য সংরক্ষণে চট্টগ্রামের হালিশহর ও দেওয়ানহাটে রয়েছে কেন্দ্রীয় খাদ্যগুদাম। গম মজুদে রয়েছে পতেঙ্গায় সাইলো। সরকারের বিভিন্ন বাহিনীর রেশনের চাল, গম এবং সরকারি খাদ্যবান্ধব প্রকল্পের খাদ্যসহায়তা চট্টগ্রাম বিভাগের ১১টি জেলার বিভিন্ন খাদ্যগুদামে পৌঁছানোর জন্য এসব ঠিকাদার নিয়োগ করা হয়।

অভিযোগ রয়েছে, এরআগে ২০১৪-২০১৫ ও ২০১৫-২০১৬ দুই অর্থ বছরের জন্য খাদ্য পরিবহন ঠিকাদার নিয়োগ করা হলেও ২০১৬-২০১৭ ও ২০১৭-২০১৮ অর্থ বছর দরপত্র আহবান ঠেকিয়ে রাখে অতিরিক্ত দুই বছর ভোগ করে এই সি-িকেট। পরে বিষয়টি সরকারের উচ্চ মহলে জানাজানি হওয়ায় সর্বশেষ ২০১৮-২০১৯ ও ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে দরপত্রের মাধ্যমে পরিবহন ঠিকাদার নিয়োগ দেয় সংস্থাটি।

ব্যবসায়ী জাহেদুল হক জানান, একটু খোঁজ নিলেই জানতে পারবেন খাদ্য বিভাগের ঠিকাদার ওই প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের কোনো না কোনো স্বজন। এদের কারণে কারণে নতুনরা সুযোগই পাচ্ছেন না। একই কথা বলেন নগরের অক্সিজেন এলাকার রুম্মান সিকদার। তিনি বলেন, স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানের অনেক কর্মকর্তাও এখানকার ঠিকাদার। একই অভিযোগ রাঙামাটির ব্যবসায়ী আলমগীর মানিক, মঈন উদ্দিন বাপ্পী, খাগড়াছড়ির সাইফুল ইসলাম ও বান্দরবানের ইসমাইল হাসানের।
চট্টগ্রামের আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. জহিরুল ইসলাম খান এই বিষয়ে কোনো কথা বলতে রাজি হননি। তিনি বলেন, খাদ্য অধিদপ্তরের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ব্যতীত কথা বলা যাবে না।