তাওহীদুল ইসলাম নূরী, চট্টগ্রাম থেকে:

হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের সদ্য প্রয়াত আমির আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরীকে নিজ জন্মস্থান ফটিকছড়ির বাবুনগর এলাকায় নাকি দীর্ঘ দিনের কর্মস্থল হাটহাজারী মাদ্রাসায় দাফন করা হবে এ নিয়ে চরম মতানৈক্য দেখা যায় তার আত্নীয়-স্বজন এবং হেফাজত-মাদ্রাসা সংশ্লিষ্টদের মাঝে।

কবরও খনন করা হয়েছিল উভয় জায়গাতে। অবশেষে শুরা কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী হাটহাজারী মাদ্রাসা এলাকাতেই হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের সদ্য প্রয়াত আমির আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরীকে দাফন করা হয়েছে আল্লামা শাহ আহমদ শফির কবরের পাশে। যদিও জানাযার পরও নিজ জন্মস্থান ফটিকছড়িস্থ পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করতে চেয়েছিলেন অনেকেই।

বৃহস্পতিবার (১৯ আগস্ট) রাত ১১টা ২০ মিনিটে আল-জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলুম মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদ্রাসায় তাঁর জানাযা অনুষ্ঠিত হয়।

মৃত্যুর দিন বিকাল পাঁচটার দিকে জুনায়েদ বাবুনগরীর লাশ তার গ্রামের বাড়িতে নেওয়া হয়। রাত সাড়ে আটটায় জানাযার জন্য কর্মস্থল হাটহাজারী মাদ্রাসায় তার বাড়ি ফটিকছড়ির বাবুনগর গ্রাম থেকে তাঁর মরদেহ নিয়ে আসা হয়।

দেশের শীর্ষ স্থানীয় বিভিন্ন আলেম-ওলামা, রাজনীতিবীদসহ নানান শ্রেণিপেশার প্রায় লক্ষাধিক মানুষ অংশ নেয় আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরীর জানাযায়। হাটহাজারী মাদ্রাসা মাঠে জায়গা সংকুলান না হওয়ায় পরবর্তীতে আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরীর মরদেহ পাশে অবস্থিত ডাকবাংলোতে নেয়া হয়।

হুজুরের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে সারাদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে তাঁর ভক্ত, শিষ্যরা জানাযায় অংশ নিতে হাটহাজারী ভীড় জমান। আছরের আগে থেকেই হাটহাজারী মাদ্রাসাসহ আশেপাশের এলাকায় শোকার্ত মানুষের ঢল নামে। জানাযার পূর্বে লোকে লোকারণ্য হয়ে যায় হাটহাজারি। তাইতো, ভারী যানজট দেখা যায় সম্পূর্ণ এলাকাজুড়ে।

সন্ধ্যা থেকে হাটহাজারী-নাজিরহাট মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কড়া নজরদারি ছিল লক্ষ্যণীয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য চট্টগ্রাম থেকে অতিরিক্ত পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উর্ধতন কর্মকর্তারা হাটহাজারীতে অবস্থান করেন। রাত ১১টায় জানাযার জন্য রাত পৌনে নয়টা থেকে হাটহাজারী বাস স্টেশন, কলেজ গেইট, উত্তরে মীরেরহাট পর্যন্ত হাটহাজারী-নাজিরহাট মহাসড়কে গাড়ি চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়।

উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার (১৯ আগষ্ট) বেলা ১২ঃ৩০ এর দিকে হেফাজত ইসলাম বাংলাদেশের আমির আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী ইন্তেকাল করেন।
জানা যায়, বুধবার সন্ধ্যার পর থেকে বাবুনগরীর শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটতে থাকে। বৃহস্পতিবার সকাল ১১ টার দিকে হাটহাজারি মাদরাসায় তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে তাকে দ্রুত অক্সিজেন লাগিয়ে ফায়ার সার্ভিসের অ্যাম্বুলেন্সযোগে জরুরি চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রামের সিএসসিআর হাসপাতালে নেয়া হয়। হাসপাতালে পৌঁছালে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

৬৭ বছর বয়সি দেশের অন্যতম শীর্ষ আলেমে দ্বীন আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী দীর্ঘদিন ধরে হৃদরোগ, কিডনি ও ডায়াবেটিসসহ বার্ধক্যজনিত নানা রোগে ভুগছিলেন। তিনি ২০১৩ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ সাত হেফাজত ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব ছিলেন। আল্লামা আহমদ শফির মৃত্যুর পর ২০২০ সালের ১৫ নভেম্বর থেকে নিজের মৃত্যু পর্যন্ত আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী সংগঠনটির আমির পদে ছিলেন। হেফাজত আমিরের পাশাপাশি চট্টগ্রামের মঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদ্রাসার শিক্ষা পরিচালক পদেও ছিলেন আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী । তিনি বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশের সহ-সভাপতি, চট্টগ্রাম নুরানি তালিমুল কুরআন বোর্ডের চেয়ারম্যান এবং মাসিক মুঈনুল ইসলামের প্রধান সম্পাদক ছিলেন।