আবদুল নবী

একদিন রাস্তা দিয়ে হাঁটছিলাম। তখন পিছন থেকে কেউ একজন বলে “এখনও বয়স কম। সাইডে গিয়ে হাঁট।”
এই জায়গায় একটা শিক্ষা পাবেন। সেটা হলো আপনার বয়সের অজুহাত দেখিয়ে অনেক এলিট আপনাকে আপনার রাস্তা থেকে দুরে সরিয়ে রাখবে। কারণ আপনি যা করতেছেন তার সুফল যদি তাদের কাঁধে না আসে তাহলে আপনাকে কখনও ঐ পথে হাঁটতে দিবে না।
তাই বলে কি হাঁটা বন্ধ করে দিবেন? না, কোনভাবে হাঁটা বন্ধ করা চলবে না। কারণ আপনি যখন সকালে ঘুম থেকে উঠে হাতমুখ ধুয়ে প্রস্তুত হয়ে রাস্তায় বের হলেন তখন মাথায় পরিকল্পনা ছিলো আজ এই পথ দিয়ে হেঁটে আপনার গন্তব্যে যাবেন। সে পথে অনেক বাঁধা আসবে। অঘটন ঘটবে। তবুও গন্তব্য থেকে বিচ্যুত হওয়া যায় না। মনে করেন একটা রাস্তা দিয়ে হাঁটা শুরু করলেন। হাঁটতে হাঁটতে মাঝপথে দেখলেন রাস্তা ভাঙ্গা। তাই বলে কি ওপারে যে আপনার গন্তব্য আছে সেটার দিকে না গিয়ে অন্যদিকে যাবেন? না, কখনও না। দরকার হলে ভাঙ্গা দিয়ে যাবেন, না হয় অন্য একটা পথ দিয়ে হলেও সেখানে যেতে হবে। এটাই হলো মূল কথা।
এখন আপনার বাস্তব জীবনে যখন চারপাশে তাকিয়ে দেখবেন এরকম অনেক উদাহরণ পাবেন। যেমনঃ আপনি স্কুলে পড়েন। অথচ আপনি এমন কিছু মানুষের সাথে আলাপআলোচনা করেন যারা কলেজে পড়ে। তখন পাড়ার বয়স্করা অন্যকিছু মনে করে আপনাকে অনেক কিছু বলবে। দেশের ভিতরে কাজ করার পাশাপাশি যখন দেশের ভৌগোলিক সীমারেখা অতিক্রম করে কাজ করবেন তখনও কিছু লোক বলবে এই বয়সে এসব করা মানে তো আত্ম উন্নয়ন। তার চেয়ে বরং সামষ্টিক উন্নয়নে মন দাও। তখন ধরে নিবেন এই মানুষগুলো আপনাকে তাদের পিছনে গাদার মতো ব্যবহার করবে। ভাবতেছেন আমার কথা ভুল। হয়তো আপনার দৃষ্টিতে ভুল। কিন্তু আমার দৃষ্টিতে সঠিক। কেননা আমি যদি নিজেকে শক্ত করতে না পারি তাহলে আমার আশেপাশের বাকি ৫ জনের দায়িত্ব কাঁধে নিব কোন সাহসে?
আপনি ভাবুনতো, আপনি যদি হাঁটতে না পারেন তাহলে অন্যজনকে হাঁটা শিখাবেন কি করে? পারবেন না। যদি নিজেকে শক্ত করতে পারেন তাহলে বুকে সাহস নিয়ে ৫ জনের জায়গায় ১০ জনের দায়িত্ব নিতেও বিবেকে বাঁধা দিবে না।
সামাজিক দায়বদ্ধতা আমাদের ভিতরে কম বেশি সবারই আছে। সেই সামাজিক দায়বদ্ধতা নিয়ে তরুণদের মধ্যে চিন্তাভাবনা কাজ করে। সেখানে সবাই অন্যদেরকে শক্ত করার আগে নিজেক শক্ত করে তারপর আশেপাশের মানুষগুলোকে শক্ত করে। আর সেই শক্ত হওয়া লোকটা তখনই ভুলে যায় যে সেও একসময় নিজেকে শক্ত করতে যুদ্ধ করছিলো সেটা। যখন আপনাকে কেউ শক্ত হওয়ার অনুপ্রেরণা দিলো। সেই অনুপ্রেরণা বুকে নিয়ে আস্তে আস্তে শক্ত হয়ে তার চেয়ে কম হলেও কিছু কাজ নিজ থেকে করবেন ঠিক তখনই আপনি তার কাছে খারাপ হয়ে যাবেন। কারণ এই লোকগুলো পিছনে হাত তালি দেওয়াতে চাই। তবে সবাই না। ৯০% লোক এরকমই পাবেন। হ্যাঁ, এটাই বর্তমান সময়ের দায়বদ্ধতা নামের জালিয়াতি।
একজন রাস্তা দেখালো। সেই রাস্তায় তার ফর্মুলা নিয়ে ততদিন পর্যন্ত হাঁটবেন যতদিন না নিজের ব্রেইন ব্যবহার করে নতুন পথ ও ফর্মুলা তৈরি করতে পারবেন না। ফর্মূলা তৈরি করলেন তো দাসত্ব ছেড়ে নিজের তৈরি পথে পা বাড়িয়ে সমাজের প্রতি যে নিজের একটা দায়বদ্ধতা আছে সেটা পালন করুন। সেখানে আপনার বাবা-মাও যদি বাঁধা দেয় তবুও মন খারাপ না করে হাসিমুখে কাজ করে সমাজ পরিবর্তনে ভুমিকা রাখুন। তবে ভুলে যাবেন না যে এই পথে আসতে কেউ একজনের ফর্মুলা একদিন আপনিও ব্যবহার করছিলেন। তাকে আজীবন মনে রাখবেন।
কেউ কাউকে জায়গা করে দেয় না। কোটি কোটি মানুষের ভিড়ে যুদ্ধ করে জায়গা করে নিতে হবে। তাই শক্ত হয়ে অন্যকে শক্ত করার প্রতিশ্রুতি নিন।

আবদুল নবী, কক্সবাজার সিটি কলেজ, কক্সবাজার।