আবদুর রহমান খান

 

ভারতের স্বাধীনতা দিবস ১৫ আগষ্টকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে ভারত জম্মু-কাশ্মীর। ভারত অধিকৃত জম্মু-কাশ্মিরে সর্বদলীয় হুররিয়াত কনফাeন্স দিনটিকে কালদিবস অভিহিত করে আজ সর্বাত্মক বনদ পালন করেছে।

কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণ রেখার উভয় অংশে এ উপলক্ষ্যে দোকানপাটর বন্ধ রাখা এবং নাগরিকগণ নিজেদের ঘরে অবস্থান করে “নাগরিক কারফিউ” পালন করার আহবান জানিয়েছে সর্বদলীয় হুররিয়াত কনফারেন্স। তবে সরকারি কর্মচারিদের বাধ্যতামূলকভাবে স্বাধীনতা দিবসের সরকারি কর্মসুচীতে অংশ গ্রহণ এবং শিক্ষা প্রতিষ্টানে ভারতের পতাকা উড়াতে নির্দেশ দিয়য়েছে প্রশাসন। অন্যথায় চাকরী হারাবার হুমকি দেওয়া হয়।

গোটা কাশ্মীর জুড়ে ব্যাপক নিরপত্তার মাঝেও আজ সকালে শ্রীনগরের কিস্তওয়ান-কেশওয়াণ সড়কে পেতে রাখা একটি দেশীয় বিস্ফোরক ডিভাইস সনাক্ত করে তা ডিফিউজ করে দিয়েছে নিরাপত্তা বাহিনী । এ ছাড়া একটি গাড়িতে বিস্ফোরক বোঝাই করে বড় রকমের নাশকতা প্রচেষ্টাও আজ সকালে বানচাল করে দেওয়া হয়েছে । এ সময় জয়েস মুহাম্মদ গ্রুপের চার জঙ্গিকে পিস্তল-গ্রেনেড সহ গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। পুলিশের কর্তারা জানিয়েছে, আকাশ থেকে ড্রোনের সাহায্যে নিক্ষিপ্ত অস্ত্র সংগ্রহ করে কাশ্মীর উপত্যকায় তাদের সহযোদ্ধাদের কাছে পৌঁছে দেবার জন্য অপেক্ষা করছিল আটককৃত এ যুবকরা ।

এর আগে গতকাল শুক্রবার বিকেলে শপুরে জেলার মেইন চক এলাকর সেন্ট্রাল রিজার্ভ পুলিশের ক্যাম্প লক্ষ্য করে গ্রেনেড বিস্ফোরণ ঘটায় জঙ্গিরা । এতে দু’জন বেসামরিক নাগরিক আহত হন।

দু’দিন আগে (বৃহস্পতিবার) পুলওয়ামায় বিএসএফ -এর কনভয়কে লক্ষ্য করে গুলি ছোঁড়ে লস্কর-ই-তইবা জঙ্গিরা। ঘটনায় একাধিক বাসিন্দা এবং দু’জন নিরাপত্তা কর্মী আহত হন। পালটা জবাব দেয় বাহিনী। রাতভর চলে গুলির লড়াই। শুক্রবার সকালে গুলির লড়াইয়ে সাফল্য পায় সেনাবাহিনী। উদ্ধার হয়েছে প্রচুর অস্ত্রও।

এছাড়া গত মঙ্গলবার শ্রীনগরের লালচক এলাকা থেকে আদিল ফারুক নামক একজন সাংবাদিককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ জানয়েছে তার কাছে দু’টি গ্রেনেড প্সাওয়ান গেছে। আদিল ফারুক সিএনএস নিউজ এজেন্সিতে সাব- এডিটর হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

এদিকে, কাশ্মীরের ব্যাপক মানবাধিকার লংঘন পরিস্থিতি সম্পর্কে তথ্য অনুসন্ধানে ইসলামি সংস্থা ওয়াইসি’র মানবাধিকার টীম গত সপ্তাহে আজাদ কাশ্মীরে সফর করেছে । কাশ্মীরের বিশেষ মার্যাদা হরণের দ্বিতীয় বার্ষিকী উপলক্ষ্যে এ সফরে আসেন ইনডেপেন্ডেন্ট পারমানেন্ট হিউম্যান রাইটস কমিশন(আইপিএইচআরসি)- এর পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট প্রতিনিধিদল । এ দলে ছিলেন তুরস্ক , মরক্কো , মালয়েশিয়া, আজারবাইজান এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রতিনিধি।

এর আগে ওআইসি কাশ্মীরে তাদের প্রতিনিধিদের সফরের জন্য প্রায় একবছর ধরে ভারতের কাছে অনুমতি চাইলেও ভারত নিরাপত্তার অজুহাতে অনুমোদন দেয়নি। এ অবস্থায় আজাদ কাশ্মীর সফরের উদ্যোগ নেয় ওআইসি’র মানবাধিকার প্রতিনিধিদল । সে অনুযায়ী পাকিস্তান তাদের স্বাগত জানায় এবং আজাদ কাশ্মীরে একসপ্তাহের জন্য সফরের ব্যাবস্থা করে। আগষ্ট 0৪ থেকে 0৯ আগস্ট পর্যন্ত পরিচলিত এ সফরে ওআইসি’র মানবাধিকার প্রতিনিধিদল লাইন অফ কন্ট্রোল বরারও এলাকায় ভারতীয় নিরাপত্তবাহীনের হামলা ও নির্যাতনের শিকার নারীপুরুষদের সাথে আলাপ করে তাদের দুরবস্থার শোনেন। তারা সীমান্ত এলাকায় সম্ভাব্য গুরুতর সংঘর্ষের সময় বেসামরিক নাগরিকদের আশ্রয়ের জন্য নিমিত বাঙ্কারও সম্পর্কেও অবহিত হন।

ফেরার পথে তারা ইসলামাবাদে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রামন্ত্রীর সাথে দেখা করেন।

এ সময় ইনডেপেন্ডেন্ট পারমানেন্ট হিউম্যান রাইটস কমিশন (আইপিএইচআরসি) -এর চেয়ারম্যান সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রতিনিধি ডঃ সায়েদ মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ বলেছেন, জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ অধিকার কেড়ে নেবার মাধ্যমে নতুন দিল্লী একটা বিপদজনক পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। এর ফলে এ অঞ্চলে জনবসতির চেহারাটাই বদলে যাবে। ২০১৯ সালের ০৫ আগস্টের পর “জম্মু-কাশ্মীরে আমাদের ভাই-বোনদের” মানবাধিকার মারাত্মকভাবে লঙ্ঘিত হচ্ছে।

সংস্থার ভাইস-চেয়ারম্যান ডঃ হাচি আলী আচিকগুল কাশ্মীরের বিষয়ে গৃহীত জাতিসঙ্ঘ নিরপত্তা কাউন্সিলের প্রস্তাব বাস্তবায়নের মাধ্যমে দীর্ঘ-দিনের সংকট সমাধানের দাবী করেন।

(আগস্ট ১৪ )