মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী :

সারাদেশে করোনার উর্ধ্বমূখী সংক্রামণ প্রতিরোধে করোনার ভ্যাকসিন গ্রহণ ও স্বাস্থ্য বিধি প্রতিপালনের কোন বিকল্প নেই। বিশেষজ্ঞগণ বার বার গুরুত্বের সাথে এ মতামতই দিয়ে যাচ্ছেন। তাই সরকার নাগরিকদের করোনা ভ্যাকসিনের আওতায় আনতে বিভিন্নমূখী উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। নাগরিকদের টিকা গ্রহনে উদ্বুদ্ধ করছেন।

ইতিমধ্যে, জেলা সদর হাসপাতাল, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সমুহ, সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল, বিভাগীয় শহরে বড় বড় হাসপাতাল সমুহ, মেডিকেল কলেজের হাসপাতাল সমুহে টিকা সেন্টার স্থাপন করে নাগরিকদের টিকা দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু টিকা গ্রহনে নাগরিকদের আগ্রহ বেড়ে যাওয়ায় কক্সবাজারে টিকা নিতে প্রতিদিন প্রচুর রেজিষ্ট্রেশন হচ্ছে। এটা নিঃসন্দেহে নাগরিকদের ইতিবাচক মনোভাব। কিন্তু টিকা সেন্টার গুলোতে সংশ্লিষ্ঠ কর্তৃপক্ষের প্রচেষ্টা থাকা সত্বেও রেজিষ্ট্রেশনের তুলনায় টিকা গ্রহনে আগ্রহীদের পর্যাপ্ত সেবা দেওয়া যাচ্ছেনা। কারণ জনবল, জায়গা, আসবাবপত্র সহ প্রয়োজনীয় সবকিছুর প্রকট সংকট রয়েছে টিকা সেন্টার গুলোতে। টিকা কেন্দ্র গুলোর জন্য এটা একটা নতুন কাজ। পূর্ব থেকে চালু থাকা নিয়মিত কাজ নয়।

এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতাল টিকা সেন্টারে টিকা গ্রহনের জন্য প্রতিদিন গড়ে দুই হাজার থেকে তিন হাজার নাগরিক রেজিষ্ট্রেশন করছেন। কিন্তু কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ প্রতিদিন সর্বোচ্চ ৮ শত এর বেশি রেজিষ্ট্রেশনকারীকে টিকা দিতে পারছেননা। অবশিষ্ট প্রতিদিন প্রায় দেড় হাজার টিকা গ্রহণে আগ্রহী রেজিষ্ট্রেশনকারী প্রায় ২২/২৩ দিন পরে টিকা গ্রহনের জন্য সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান থেকে ক্ষুদে বার্তা (এসএমএস) পান। এ বিলম্ব দিন দিন আরো বাড়ছে। এটা সরকারের নীতির বিপরীত। কারণ সরকার নাগরিকদের বলছে, সুরক্ষিত থাকার জন্য দ্রুত টিকা নিতে। কিন্তু টিকা কেন্দ্র গুলোতে রেজিষ্ট্রেশনকারীদের জট দিন দিন প্রকট থেকে প্রকট আকার ধারণ করছে।

কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে টিকা গ্রহনকারীদের অতিরিক্ত চাপের কারণে স্বাভাবিক চিকিৎসা সেবা ব্যাহত হওয়ার আশংকায় এবং অধিক মানুষের টিকা গ্রহনের সুবিধার্থে গত ২৪ জুলাই থেকে টিকা কেন্দ্র হাসপাতালের তৃতীয় তলা থেকে হাসপাতালের পশ্চিম গেইটে নার্সিং ইনস্টিটিউটে স্থানান্তর করা হয়েছে। কক্সবাজার জেলা সদরে দ্বিতীয় টিকা কেন্দ্র হিসাবে কক্সবাজার সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়-কে (বক্ষব্যাধি ক্লিনিক সংলগ্ন) গত ২ আগস্ট থেকে চালু করা হয়েছে।

কক্সবাজার নার্সিং ইনস্টিটিউট টিকা কেন্দ্রে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, টিকা গ্রহণকারীদের অস্বাভাবিক ভীড়। টিকা গ্রহনকারীদের ভীড়ে সেখানে তিল পরিমাণ জায়গা নেই। কোন স্বাস্থ্য বিধি’র বালাই নেই। খুব একটা শৃংখলা নেই। জনসমাগম নয়, যেন জনজট। কক্সবাজারের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সমুহেও প্রায় একই অবস্থা বলে খবর নিয়ে জানা গেছে। করোনা সংক্রামণ থেকে বাঁচতে টিকা নিতে টিকা কেন্দ্রে গিয়ে করোনা সংক্রামিত হওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে খুব বেশি। টিকা কেন্দ্রে যাওয়া ভুক্তভোগীরা এরকমই বলছেন।

বিশ্বস্থ সুত্র মতে, শুধুমাত্র কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে টিকা গ্রহনের জন্য ২০ হাজারেরও বেশি রেজিষ্ট্রেশনকারী টিকা নিতে ক্ষুদেবার্তা (এসএমএস) এর অপেক্ষায় রয়েছে। এ সংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। প্রথম ডোজ ও দ্বিতীয় ডোজ গ্রহণের কার্যক্রম একসাথে চলায় এই জট আরো বৃদ্ধি পাচ্ছে।

আবার আগামী ৭ আগস্ট থেকে ১৮ বছর বয়সী ও তদুর্ধ বয়সী এক কোটি প্রান্তিক জনগোষ্ঠি’কে এক সপ্তাহের মধ্যে সারাদেশে টিকা দেওয়ার লক্ষমাত্রা নিয়েছে সরকার। সারাদেশের মতো কক্সবাজার জেলার সকল ইউনিয়ন পরিষদ এবং পৌরসভার ওয়ার্ড গুলোতে টিকা কেন্দ্র স্থাপন করে টিকা দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এনিয়ে প্রস্তুতি চলছে। এসব টিকা কেন্দ্র গুলো ও বর্তমান চালুথাকা কেন্দ্র সমুহে টিকা গ্রহনকারীদের সর্বোচ্চ সতর্কতা ও কঠোর স্বাস্থ্য বিধি প্রতিপালন করে টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা করা দরকার। না হয় যেখানে জীবন সুরক্ষার জন্য টিকা নিতে যাবে, সেই জায়গাটায় করোনা ভাইরাসের প্রজনন কেন্দ্রে পরিণত হবার আশংকা রয়েছে।

এজন্য চালু থাকা টিকা কেন্দ্র ও যেসব টিকা কেন্দ্র নিকট ভবিষ্যতে হবে সকল টিকা কেন্দ্রই টিকা গ্রহনকারী ও সংশ্লিষ্ট সকলের জন্য সুরক্ষিত ও নিরাপদ থাকতে হবে। টিকা কেন্দ্র গুলো টিকা গ্রহনকারীদের জন্য হতে হবে, সর্বোচ্চ আস্থার জায়গা।

কক্সবাজার জেলার কোভিড-১৯ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে কক্সবাজারের করোনা সংক্রামণ বিষয়ে সার্বিক সমন্বয়কারী স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ, জেলা প্রশাসক মোঃ মামুনুর রশীদ, সিভিল সার্জন ডা. মাহবুবুর রহমান, কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র মুজিবুর রহমান, কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ডা. অনুপম বড়ুয়া, কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালের সুপার ডা. সুমন বড়ুয়া, জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন করোনা সংক্রামণ প্রতিরোধ কমিটি, জেলার সকল ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান, অন্যান্য পৌরসভার মেয়র সহ সংশ্লিষ্ট সকলকে এ বিষয়ে গুরুত্বের সাথে ভাবতে হবে। টিকা কেন্দ্রে শৃংখলা ও স্বাস্থ্য বিধি প্রতিপালনে প্রয়োজনে রেডক্রিসেন্ট, স্কাউট সদস্য, স্বেচ্ছাসেবকের পাশাপাশি আনসার, পুলিশ, বিজিবি, সেনাবাহিনীর সদস্যও মোতায়েন করা যেতে পারে। টিকা কেন্দ্র সমুহ সবসময় জীবাণুমুক্ত রাখতে স্যানিটাইজ সহ অন্যান্য ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। রেজিষ্ট্রেশন জট কমাতে টিকা কেন্দ্র গুলোতে প্রশিক্ষিত টিকা কর্মী দিয়ে টিকা বুথ বাড়ানো যেতে পারে। টিকা কেন্দ্রের জন্য আরো প্রশস্ত স্থানও নির্বাচন করা যেতে পারে। পুরো দেশের অবস্থা নয়, জাতীয়ভাবে কি উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে-সেটা মূখ্য বিষয় নয়, কক্সবাজারের সার্বিক করোনা সংক্রামণ পরিস্থিতি বিবেচনা করে কক্সবাজারের জন্য সময় থাকতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। নাহয়, টিকা কেন্দ্র গুলো করোনা ভাইরাসের উর্বর প্রজনন কেন্দ্রে পরিণত হবার আশংকা রয়েছে।

(লেখক : আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট, ঢাকা।)