‘অন্তর্ভুক্তিমূলক সরকার’ সেরা রাজনৈতিক সমাধানঃ ইমরান খান

-আবদুর রহমান খান

ঢাকা ( ০১ আগস্ট)

দীর্ঘ টানা ২০ বছর ধরে দখলে রাখার পর আফগানিস্তান থেকে পরাজয়ের গ্লানি নিয়ে লেজ গুঁটিয়ে পালিয়ে যাচ্ছে বিশ্বের বলদর্পি সামরিক শক্তি আমেরিকা এবং তাদের ইউরোপী সহযোগী বাহিনী ।

চলতি আগস্টের ৩১ তারিখের মধ্যে আফগানিস্তান থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সব সেনা প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। আফগানিস্তান থেকে যুক্তরাষ্ট্র তার সব সেনা সরিয়ে নেওয়ার ঘোষণা দেওয়ার পর গত মে মাসের শুরু থেকে আফগান সেনাদের বিরুদ্ধে অভিযান জোরদার করেছে তালেবান যোদ্ধারা । একই সঙ্গে বেড়েছে দুই পক্ষের মধ্যে লড়াই এবং সহিংসতা। এরই মধ্যে পাকিস্তান এবং ইরান সীমান্তবর্তী অঞ্চল এবং গুরুত্বপূর্ণ সীমান্ত সন যোগ পথ নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে তালেবানরা। দেশটির প্রায় ৪০০ জেলার অর্ধেক এলাকা এখন তালেবানের নিয়ন্ত্রণে। ইতিমধ্যে তালেবানরা বিশেষ করে আফগানিস্তানের গ্রামীণ এলাকায় নিজেদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে। তারা এখন গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলো দখলের চেষ্টা করছে। তবে তালেবান এখন পর্যন্ত কোনো প্রাদেশিক রাজধানী দখল করতে পারেনি। এখন তারা সেই লক্ষ্যে অগ্রসর হচ্ছে।

একইসাথে পলায়নপর দখলদার বাহিনীর পশ্চাদধাবন করছে তালেবানরা। একের পর এক এলাকা দখলে নিয়ে চারিদিক থেকে ঘিরে ফেলছে রাজধানী কাবুল। তালেবানের অগ্রযাত্রার মুখে আফগান সরকার আসন্ন বিপদ দেখতে পাচ্ছে। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সব বড় শহরে সেনা উপস্থিতি বাড়ানো হয়েছে। তালেবান ঠেকাতে মাসব্যাপী রাত্রিকালীন কারফিউ জারি করা হয়েছে। গজনি, তখর, কান্দাহার, হেলমান্দ ও বাগলনসহ দেশের বিভিন্ন প্রদেশে এখনও তীব্র লড়াই চলছে। মার্কিন সমর্থিত আফগান বাহিনী অগ্রসরমান তালেবানদের ওপর স্থল ও বিমান হামলা চালিয়ে উভয় পক্ষের জীবনহানি খানিকটা বাড়িয়ে দিতে চেষ্টা করছে।

তবে যুদ্ধের পরিস্থিতি যে পর্যায়ে পৌঁছেছে তাতে এটা সুনিশ্চিত করে বলা যায় যে আফগানিস্তানে মার্কিন সমর্থিত প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি’র সরকারের পতন এখন সময়ের অপেক্ষা মাত্র ।

 

সন্ত্রস্ত মার্কিন প্রশাসন: উদ্বিগ্ন জাতিসঙ্ঘ

গত সপ্তাহে জাতিসঙ্ঘ আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছে আফগানিস্তানে তালেবানের চলমান অভিযানকে আটকানো না গেলে এক দশকের বেশি সময়ের মধ্যে দেশটিতে সবচেয়ে বেশি বেসামরিক মানুষের প্রাণহানি ঘটতে পারে

এদিকে, ইউএস স্পেশাল ইন্সপেক্টর জেনারেল ফর আফগানিস্তান রিকনস্ট্রাকশন (এসআইজিএআর) জন সপকো গত বৃহস্পতিবার এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে কাতারের রাজধানী দোহায় তালেবানের সঙ্গে চুক্তি সই করার পর থেকে আফগানিস্তানে সশস্ত্র সংগঠনটি সরকারি বাহিনীকে লক্ষ্য করে হামলা ও বিভিন্ন এলাকায় নিজেদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার অভিযান জোরদার করেছে। এ অবস্থায় ‘অস্তিত্বসংকটে’ পড়েছে আফগান সরকার।

স্পেশাল ইন্সপেক্টর জেনারেল জন সপকো বলেছেন,

প্রতিবেদনে বলা হয়, সাম্প্রতিক সময়ে তালেবান যেভাবে তাদের অগ্রযাত্রা এগিয়ে নিচ্ছে, তাতে আফগান নিরাপত্তা বাহিনী দৃশ্যত হতভম্ব ও অপ্রস্তুত অবস্থার মধ্যে পড়ে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে আফগান বাহিনী এখন পশ্চাৎপদ হচ্ছে। আফগানিস্তানের পরিস্থিতি যেদিকে এগোচ্ছে তাতে এটি পরিষ্কার যে পরিস্থিতি না পাল্টালে এ আফগান সরকারের অস্তিত্ব সংকটের মুখে পড়তে পারে।

এদিকে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বুধবার ভারত সফরে এসে ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বলেছেন, আফগানিস্তানে তালেবান যদি জোর করে ক্ষমতা দখল করতে চায় তাহলে তারা কখনোই আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাবে না।

অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বলেন, তালেবান ও আফগান সরকারের মধ্যে শান্তি আলোচনার মধ্যে সমাধান খোঁজাই একমাত্র পথ বলে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বাস করে। গত সপ্তাহে আমরা বেশ কয়েকটি জেলা সদরে তালেবানের অগ্রযাত্রা দেখেছি। প্রাদেশিক কয়েকটি রাজধানীও তারা কব্জা করতে চাইছে। যে সব এলাকা তারা দখল করেছে সেখানে নির্যাতন চালানোরও খবর আসছে – যেগুলো সত্যিই বিচলিত করার মতো। পাশাপাশি আমি এটাও বলব তালেবান কিন্তু বহুদিন ধরেই আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি চাইছে, চাইছে তাদের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হোক এবং তাদের নেতারা যাতে দুনিয়ায় অবাধে ঘুরে বেড়াতে পারেন।

তালেবানদের কূটনৈতিক তৎপরতা জোরদার

সাম্প্রতিক মাসগুলোতে তালেবান তাদের আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক তৎপরতা জোরদার করেছে। এরই অংশ হিসেবে গৎ সপ্তাহে চীন সফর করয়েছে তালেবানের ৯ সদস্যের প্রতিনিধিদলটি। দলের নেতৃত্ব দেন সংগঠনটির সহপ্রতিষ্ঠাতা মোল্লা আবদুল গনি বারাদার। গত বুধবার (২৮ জুলাই) চীনের উপকূলীয় তিয়ানজিন শহরে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই-এর সঙ্গে বৈঠক করেন তালেবান প্রতিনিধিরা।

বৈঠকে তালেবান প্রতিনিধিদল চীনকে এ বলে আশ্বস্ত করেছে যে তারা কাউকে প্রতিবেশী কোনো দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে আফগানিস্তানকে ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করতে দেবে না।

পর্যবেক্ষকগন বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র চলে যাওয়ার পর আফগানিস্তানকে তাদের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বি আর আই) প্রকল্পে যুক্ত করার মোক্ষম সুযোগ পেয়েছে চীন। যুক্তরাষ্ট্রের গবেষণা সংস্থা র‌্যান্ড কর্পোরেশনের প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক ডেরেক গ্রসম্যান এ মাসের গোঁড়ার দিকে তার এক বিশ্লেষণে লিখেছেন, ‘চীন নীরবে আফগানিস্তানে তাদের স্বার্থ রক্ষায় তৎপরতা শুরু করেছে।’

তিনি লিখেছেন- চীন এরই মধ্যে চীন-পাকিস্তান ইকোনমিক করিডোরের (সিপেক) সঙ্গে আফগানিস্তানকে যুক্ত করার কথা বলছে। পেশোয়ার এবং কাবুলের মধ্যে একটি মহাসড়ক নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়ে কাবুল সরকারের সাথে বছর দুয়েক ধরে কথা বলছে চীন। যদিও যুক্তরাষ্ট্র নাখোশ হবে এই ভয়ে আফগান সরকার তাতে সায় দেয়নি। তা ছাড়া, শিনজিয়াং প্রদেশের ওয়াকান করিডোর দিয়ে আফগানিস্তানের সীমান্ত পর্যন্ত একটি সড়ক নির্মাণ করছে চীন।

এর আগে ২০১৯ সালে তালেবানের একটি প্রতিনিধিদলকে চীন সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছিল বেইজিং। ধারণা করা হয়, মিত্র পাকিস্তানের মাধ্যমে চীন আগে থেকেই তালেবানের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক যোগাযোগ বজায় রেখে আসছে।

তালেবান নেতারা সমর্থন আদায়ের জন্য মস্কোতে গিয়ে রাশিয়ার সঙ্গে কথা বলেছে। এমনকি কট্টর সুন্নী ওয়াহাবীপন্থী হয়েও তালেবান নেতারা শিয়াপন্থী ইরানের সঙ্গে কথা বলেছেন এবং ইরানের সমর্থন সহানুভূতি আদায়ে সক্ষম হয়েছেন । আবার গোপনে ভারতের সঙ্গেও তালেবানের কথা হচ্ছে বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রে একাধিক খবর বেরিয়েছে।

তালেবানরা বুঝতে পারছে যে ক্ষমতায় টিকে থাকতে এবং আফগানিস্তানে পুনর্গঠনে তাদের কাড়ি কাড়ি টাকা দরকার হবে এবং সেই টাকা দেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে একমাত্র চীনের। ফলে এখন চীনের আস্থা অর্জন ছাড়া তাদের সামনে কোনো বিকল্পও নেই।

বিশ্লেষকগণ মনে করেন, আফগানিস্তানের দুই প্রতিবেশী – পাকিস্তান এবং ইরানের স্থিতিশীলতা এবং নিরাপত্তা চীনের কাছে এখন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। চীনের ভয় হলো যে আফগানিস্তানে নতুন কোনও অস্থিতিশীলতার ধাক্কা ও দুই দেশে গিয়ে পড়তে বাধ্য। ১৯৭৯ সালে আফগানিস্তানে সোভিয়েত সেনা অভিযানের পর থেকে গত চার দশকেরও বেশি সময় ধরে সেদেশে যে যুদ্ধ চলছে, তার সরাসরি শিকার হয়েছে পাকিস্তান এবং ইরান। এই দুই দেশে এখনো লাখ লাখ আফগান শরণার্থী রয়েছে, সন্ত্রাসও ঢুকেছে।

এদিকে, আফগানিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মাদ হানিফ আতমার বলেছেন, তার দেশে টেকসই শান্তি প্রতিষ্ঠায় ইরানের ভূমিকাকে যথেষ্ট গুরুত্ব দেয় কাবুল সরকার। তিনি আফগানিস্তান বিষয় ইরানের বিশেষ প্রতিনিধি মোহাম্মাদ ইব্রাহিম তাহেরিয়ানের সঙ্গে তার সাম্প্রতিক সাক্ষাতের বিষয়টি তুলে ধরে এক টুইটার বার্তায় এ মন্তব্য করেন।

সম্প্রতি ওই সাক্ষাতে তাহেরিয়ান আফগান সরকারের সঙ্গে তালেবানের সংলাপের প্রতি তেহরানের সমর্থন ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, আফগানিস্তানের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে বিশেষ করে সীমান্ত নিরপত্তা নিয়ে সহযোগিতা শক্তিশালী করতে চায় ইরান।

সাক্ষাতে আফগানিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী তালেবান নিয়ন্ত্রিত এলাকায় বিচার বহির্ভুত হত্যাকাণ্ড, বেসামরিক নাগরিকদের ওপর নির্যাতন ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে ইরানের বিশেষ প্রতিনিধির সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় তাহেরিয়ান বলেন, যুদ্ধ নয় বরং একমাত্র রাজনৈতিক সংলাপের মাধ্যমে আফগানিস্তানের চলমান সংকটের সমাধান সম্ভব।

আফগান পরিস্থিতির জন্য আমেরিকাকে অভিযুক্ত করছে চীন

বিশ্বব্যাপী চলমান উত্তেজনা বিশেষ করে আফগানিস্তানের চলমান সংঘর্ষ ও প্রাণহানির জন্য আমেরিকাকে দায়ী করেছে চীন। চীনা প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র উ চিয়ান বলেছেন, আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা সরিয়ে নেয়ার ঘোষণা দেয়ার পর থেকে দেশটির নিরাপত্তা পরিস্থিতি নাজুক হতে শুরু করেছে।

তিনি বলেন, বাস্তবতা বলছে বিশ্বব্যাপী যত স্থানে উত্তেজনা ও সংঘাত চলছে তার জন্য সবচেয়ে বড় দায় আমেরিকার। আর আমেরিকা নিজের এ দায় অন্যের ঘাড়ে চাপাতে সিদ্ধহস্ত। চীনা প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেন, আফগানিস্তানে সংঘাত শুরুর সমস্ত দায় আমেরিকাকে মাথা পেতে নিতে হবে।

আফগান সরকারের প্রতি চীনের পূর্ণ সমর্থন ঘোষণা করে উ চিয়ান বলেন, আফগানিস্তানের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতা রক্ষা করার লক্ষ্যে কাবুলের প্রতি বেইজিং পূর্ণ সংহতি প্রকাশ করছে।

চীন-তালেবান বৈঠকে আশাবাদী যুক্তরাষ্ট্র

একসময় আফগানিস্তানে চীনের প্রভাব বাড়ানোর চেষ্টাকে যুক্তরাষ্ট্র বিশেষভাবে বাধা দিলেও বর্তমানে দেশটি তার সেই অবস্থান পাল্টাচ্ছে। আফগানিস্তান পুরোদস্তুর গৃহযুদ্ধে পতিত হোক, তা চাইছে না ওয়াশিংটন।

আফগানিস্তান নিয়ে চীনের বিশেষ আগ্রহ বা তালেবানের সঙ্গে তার ঘনিষ্ট যোগাযোগ দৃশ্যত যুক্তরাষ্ট্রের জন্য অস্বস্তির কারণ হলেও যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিঙ্কেন হাওয়া টের পেয়ে বলেছেন, আফগানিস্তানে বেইজিংয়ের স্বার্থ একটি ‘ইতিবাচক বিষয়’ হয়ে উঠতে পারে।

ব্লিঙ্কেন বলেন, এ অঞ্চল নিয়ে আফগানিস্তানের প্রতিবেশী দেশগুলোর একটা স্বার্থ আছে। তবে এ অঞ্চল গৃহযুদ্ধের মুখে পড়ে যাক বা তালেবানের হাতে এখানকার পতন ঘটুক, সে ব্যাপারে কারও স্বার্থ নেই। সিএনএন-নিউজ১৮ টেলিভিশন চ্যানেলকে তিনি বলেন, এই দৃষ্টিকোণ থেকে চীন ও অন্যান্য দেশ যদি কাজ করে, তবে তা ইতিবাচক হতে পারে।

আফগানিস্তান পরিস্থিতিকে নাজুক করে দিয়েছে আমেরিকা: ইমরান খান

প্রতিবেশী পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বলেছেন, আফগানিস্তানের পরিস্থিতি আগে থেকে খারাপ ছিল এবং আমেরিকা যথাযথ অর্থেই এই পরিস্থিতিকে আরো খারাপ করে রেখে গেছে। তিনি বুধবার মার্কিন নিউজ চ্যানেল পিবিএস’কে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এই খোলামেলা মন্তব্য করেন।

তিনি বলেন, তালেবানের সঙ্গে তখন আলোচনা করতে হতো যখন আফগানিস্তানে ন্যাটো জোটের দেড় লাখ সেনা মোতায়েন ছিল। ইমরান খান বলেন, এখন যখন ১০ হাজারেরও কম সেনা রয়েছে এবং তাদেরও চলে যাওয়ার তারিখ চূড়ান্ত হয়েছে তখন তালেবানকে রাজনৈতিক সমঝোতায় বাধ্য করা দুরূহ ব্যাপার; কারণ, তালেবান এ যুদ্ধে নিজেদেরকে বিজয়ী ভাবছে।

দুই সপ্তাহ আগে আফগান প্রেসিডেন্ট মোহাম্মাদ আশরাফ গনি অভিযোগ করেছিলেন, সাম্প্রতিক সময়ে পাকিস্তান থেকে প্রায় ১০ হাজার জঙ্গি আফগানিস্তানে প্রবেশ করেছে। এ সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে ইমরান খান বলেন, পাকিস্তানে প্রায় ৩০ লাখ আফগান নাগরিক বসবাস করে যাদের অনেকেই তালেবানের জাতিগোষ্ঠীর লোক; বিশেষ করে পশতুন জনগোষ্ঠী।আফগানরা পাকিস্তানের যেসব ক্যাম্পে বসবাস করে সেগুলোতে ৫০ হাজার থেকে এক লাখ পর্যন্ত মানুষের বসবাস। পাকিস্তানের পক্ষে কীভাবে তাদের খোঁজখবর রাখা সম্ভব?

পাক প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন আফগান সংকট সমাধানের একমাত্র উপায়ে দেশটির সরকারের সঙ্গে তালেবানের একটি রাজনৈতিক সমঝোতায় উপনীত হওয়া। তিনি বলেন, আফগানিস্তানে যুদ্ধ চলতে থাকলে পাকিস্তানকে দু’টি বিষয়ের মোকাবিলা করতে হবে। এক, আবার পাকিস্তানে আফগান শরণার্থীদের ঢল নামবে কিন্তু সেরকম পরিস্থিতি সামাল দেয়ার মতো অর্থনৈতিক পরিস্থিতি পাকিস্তানের নেই। দ্বিতীয় বিষয় হচ্ছে, পাকিস্তানে আফগানিস্তানের চেয়ে বেশি পশতুন বসবাস করে। যুদ্ধ চলতে থাকলে পাকিস্তানি পশতুনরা বসে থাকবে না বরং তাদের এ যুদ্ধে জড়িয়ে যাওয়ার জোর সম্ভাবনা রয়েছে।

সাম্প্রতিক সময়ে আফগান সরকার অভিযোগ করছে যে, দেশটির সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে তালেবানকে পৃষ্ঠপোষকতা দিচ্ছে পাকিস্তান; কিন্তু এই অভিযোগ কঠোর ভাষায় প্রত্যাখ্যান করেছে ইসলামাবাদ।

সাক্ষাৎকারে তিনি স্পষ্ট করে জানিয়ে দেন, তার সরকার পাকিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রকে কোনো ঘাঁটি তৈরি করার সুযোগ দেবে না।

ক্রিকেটার থেকে রাজনীতিবিদ বনে যাওয়া ইমরান খান বলেন, আমাদের সীমান্তের মধ্যে আর কোনো যুদ্ধ করার সক্ষমতা আমাদের নেই। আফগান সংঘাতে পাকিস্তান জড়িত হবার পর থেকেই দেশজুড়ে অন্তর্ঘাতমূলক বোমা হামলা, সামরিক হামলা ঘটে। প্রাণহানি ছাড়াও এতে বাণিজ্য ও পর্যটন একেবারেই ধসে পড়েছে। সুতরাং আমরা আর কোনো লড়াইয়ের অংশ হতে চাই না’,

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী বলেন, আফগান যুদ্ধ শেষ করতে তালেবান যেন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সমঝোতা করে সে বিষয়ে জোর চেষ্টা চালিয়েছে পাকিস্তান।

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান স্পষ্ট করেই বলেছেন, তালেবানদের নিয়ে একটি ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক সরকার’ হবে আফগানিস্তানের জন্য সেরা রাজনৈতিক সমাধান। এটা ছাড়া আফগানিস্তানের জন্য আর কোনো সমাধান নেই। কারণ সামরিক উপায়ে দেশটিতে শান্তি প্রতিষ্ঠার চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে’।