মো. নুরুল করিম আরমান, লামা:
গেল বছরগুলোর বর্ষা মৌসুমে প্রবল বর্ষণের ফলে পাহাড়ি ঢলের পানিতে বন্যা ও ব্যাপক হারে পাহাড় ধ্বসে প্রাণহানির ঘটনা ঘটে বিধায় এ বছর যেন এর পূণরাবৃত্তি না ঘটতে পারে, সেজন্য বান্দরবান জেলার লামা উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে আগাম প্রস্তুতি। গত সোমবার রাত থেকে টানা বর্ষণে মাতামুহুরী নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে পানিতে নিচু এলাকা প্লাবিত ও পাহাড় ধ্বসের আশঙ্কা দেখা দেওয়ায় মঙ্গলবার সকাল থেকে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষে মাইকিং এর মাধ্যমে ঝুঁকিপূর্ণদের নিরাপদে সরে যেতে তাগাদা দিচ্ছে তথ্য অফিস। তবে নিরাপদে সরে যাওয়ার জন্য মাইকিং করা হলেও, কিছু পরিবার নিরাপদে কিংবা আত্নীয় স্বজনদের বাড়িতে আশ্রয় নিলেও বেশিরভাগই সরে যায়নি। পৌরসভা এলাকা. লামা সদর, গজালিয়া, রূপসীপাড়া, সরই, আজিজনগর, ফাঁসিয়াখালী ও ফাইতং ইউনিয়নে সাড়ে ৪ হাজার পরিবারের প্রায় ২০ হাজার মানুষ ঝুঁকিপূর্ণ ভাবে বসবাস করছে বলে জানান স্থানীয়রা।

এদিকে বর্ষণের কারণে উপজেলার পাহাড়ি ঝিরি, খাল ও মাতামুহুরী নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে দুর্গম পাহাড়ি এলাকার হাজার হাজার মানুষ পানি বন্ধি হয়ে পড়েছে। নদীর পানিতে বৃদ্ধি পেয়ে লামা-আলীকদম সড়কের লাইনঝিরি ও শীলেরতুয়া এলাকা প্লাবিত হয়ে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। পাহাড় ধসে পৌরসভা এলাকার মধুঝিরি গ্রামের বাসিন্দা মো. শামীমের বসতঘর বিধস্তের পাশাপাশি রুপসীপাড়া সড়ক ও বগারঝিরিতে পাহাড় ধসে পড়ে সড়ক যোগাযোগে বিঘ্ন ঘটেছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। এতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। তাছাড়া পাহাড় ধ্বসের ঝুঁকিতে আতংকে আছেন ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীরা। দূর্যোগকালীন সময়ে পৌরসভা এলাকায় দুইটি ও সাতটি ইউনিয়নের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে আশ্রয়ণ কেন্দ্র ঘোষনা করা হয়। জরুরী প্রয়োজনে যোগাযোগের জন্য উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। যোগাযোগের নম্বর সমূহ যথাক্রমে নির্বাহী অফিসার-০১৫৫০০০৭১৮০, প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) ০১৮৪৫৭২৯৭২১ ও পিআইও সহকারী ০১৭১৭৭১৪৭৩৬।

সূত্র জানায়, গত সোমবার রাত সাড়ে ১১টার পর থেকে প্রবল বর্ষণ শুরু হয়। এতে মাতামুহুরী নদীসহ বিভিন্ন খালের পানি বৃদ্ধি পেয়ে পৌরসভা এলাকা ও রুপসীপাড়া, ফাঁসিয়াখালী ও সদর ইউনিয়নের নিচু এলাকা প্লাবিত হয়। এছাড়া বিভিন্ন খালের পানি বৃদ্ধি পেয়ে কয়েক হাজার পরিবার পানি বন্ধি হয়ে পড়ে। মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত বর্ষণ অব্যাহত থাকায় মাতামুহুরী নদীর পানি বিপদ সীমার কাছ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

পৌরসভা এলাকার লাইনঝিরি গ্রামের বাসিন্দা মো. শাহজাহান জানায়, প্রবল বর্ষণে লামা-আলীকদম সড়কের লাইনঝিরি ও শীলেরতুয়ার নিচু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত নৌকা যোগে জনসাধারণ সড়ক পার হচ্ছেন।

এ বিষয়ে ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. জাকের হোসেন মজুমদার, আজিজনগর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. জসিম উদ্দীন কোম্পানী, ফাইতং ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. জালাল উদ্দিন কোম্পানী জানান, পাহাড়ের পাদদেশে ঝুকিপূর্ণ বসবাসকারীদেরকে মাইকিং ও ইউনিয়ন পরিষদ সদস্যদের মাধ্যমে নিরাপদে আশ্রয় নেওয়ার জন্য তাগাদা দেয়া হয়েছে। পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে আশ্রয় নিতে পারবেন। একই কথা জানালেন রুপসীপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ছাচিংপ্রু মার্মা, লামা সদর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মিন্টু কুমার সেনও। এদিকে পৌরসভা এলাকায় যারা পাহাড়ে কিংবা সমতলে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাস করছেন তাদেরকে নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়ার জন্য মাইকিং এর মাধ্যমে তাগাদা দেয়া হয়েছে। এছাড়া লামা আদর্শ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও আদর্শ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়কে আশ্রয় কেন্দ্র খোলার পাশাপাশি আশ্রয়গ্রহিতাদের জন্য তাৎক্ষনিকভাবে শুকনো খাবার, খিচুড়ি ও পানির ব্যবস্থা করা হবে বলে জানান পৌরসভার মেয়র মো. জহিরুল ইসলাম। তিনি আরো বলেন, বর্ষণের ফলে দুপুরে মধুঝিরি গ্রামের বাসিন্দা শামীরের বসতঘরের ওপর পাহাড় ধসে পড়েছে। তবে এ ঘটনায় কেউ হতাহত হয়নি। এছাড়া রুপসীপাড়া সড়কে পাড়াড় ধসে পড়ে সড়ক যোগাযোগে বিঘ্ন ঘটছে।

লামা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. রেজা রশীদ বলেন, দূর্যোগ মোকাবেলায় প্রশাসন প্রস্তুত রয়েছে। ইতিমধ্যে উপজেলার বিভিন্ন স্থানের পাহাড়ে ঝুঁকিপুর্ণ বসবাসকারীদেরকে নিরাপদে সরে যাওয়ার জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিং এর মাধ্যমে তাগাদা দেওয়ার পাশাপাশি জরুরী প্রয়োজনে যোগাযোগের জন্য কন্ট্রোল রুমও খোলা হয়েছে। এছাড়া সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে খোলা রাখতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে, যাতে দূর্যোগকালীণ সময়ে মানুষ সেখানে আশ্রয় নিতে পারেন।