মো. নুরুল করিম আরমান, লামা প্রতিনিধি:

করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে বান্দরবানের লামা উপজেলায় হামিদা বেগম (৬২) নামের এক বৃদ্ধ নারীর মৃত্যু হয়েছে। কক্সবাজার সদর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আইশোলেশন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মঙ্গলবার ভোরে মারা যান তিনি। মৃত বৃদ্ধার দেহে করোনা পজেটিভ ও হৃদরোগ জনিত জটিলতা ছিল বলে নিশ্চিত করেন, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মহি উদ্দিন মাজেদ চৌধুরী। হামিদা বেগম উপজেলার রূপসীপাড়া ইউনিয়নের অভিপোস্ট পাড়ার বাসিন্দা ইসহাক সর্দারের স্ত্রী। করোনায় মৃত্যুর খবর পেয়ে প্রবল বৃষ্টি উপেক্ষা করে ও স্বাস্থ্য বিধি মেনে কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের একটি স্বেচ্ছাসেবী টিম দুপুরে মৃত বৃদ্ধার দাফন কাফন কাজ সম্পন্ন করেন। এর আগে ৬ জুন একই ইউনিয়নের মুসলিম পাড়ার গৃহবধূ আমেনা আক্তার ও ধুঅং পাড়ার বাসিন্দা ধুংক্য মার্মার স্ত্রী উ¤্রানু মার্মা (১৭) করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান। এ দু’নারীর দাফন কাফন কাজও সম্পন্ন করেন কোয়ান্টাম স্বেচ্ছাসেবীরা।

মৃত হামিদার স্বামী ইসহাক সর্দার জানায়, গত ২৫ জুলাই সকালে হামিদা বেগম হঠাৎ অসুস্থ্য হয়ে পড়লে তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য দায়িত্বরত চিকিৎসক তাকে কক্সবাজার সদর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠিয়ে দেন। সেখানে নমুনা পরীক্ষায় তার করোনা পজেটিভ রিপোর্ট আসে। এক পর্যায়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মঙ্গলবার ভোরে মারা যান হামিদা বেগম। পরে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বৃদ্ধার দাফন কাফনের জন্য কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের স্বেচ্ছাসেবীদের খবর দেন।

দাফন কার্যক্রমের নারী সদস্য মাসুদা আক্তার বলেন, ‘একবছর আগে যখন এই সেবাকাজে যোগ দেই তখন মৃতের কাছে নিকট আত্মীয়রাও ভয়ে আসত না। কিন্তু আমি মনে করি, একজন মানুষের শেষ বিদায় অবশ্যই সম্মানজনক হওয়া উচিত। তাই যখন আমি কোন মহিলার শেষ বিদায়ের গোসল ও কাফনের কাজটি করি তখন মমতার অনুভূতি নিয়েই করি। তাই কাজটি আমি নির্ভয়ের সাথে করে যাচ্ছি এবং আলাহর রহমতে সুস্থ আছি।’

করোনায় মৃত হামিদা বেগমের লাশ দাফনের সত্যতা নিশ্চিত করে কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের দাফন কার্যক্রমের লামা প্রধান পারভেজ মাসুদ জানায়, ‘হাসপাতাল বা বাসা যেখানেই কেউ করোনায় মারা যান না কেন, আমরা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও সরকারের স্বাস্থ্যবিধি মেনে স্বধর্মীয় মর্যাদায় দাফন বা সৎকারের কাজটি সম্পন্ন করি। এই সেবা দেয়ার জন্য আমাদের পুরুষ ও মহিলা আলাদা টিম ২৪ ঘণ্টাই প্রস্তুত আছেন।’ শুধু তাই নয়, দাফন সম্পন্নের পর মৃতের পরিবার ও প্রতিবেশীদের স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলার জন্য পরামর্শ প্রদান করা হয় বলে জানান তিনি।

লামা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. রেজা রশীদ জানান, করোনায় হামিদা বেগমের মৃত্যুর খবর জানার পর উপজেলার সরই ইউনিয়নস্থ কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের স্বেচ্ছাসেবীদের খবর দিই। পরে তারা স্বাস্থ্য বিধি মেনে বৃদ্ধ হামিদা বেগমের দাপন সম্পন্ন করেন।