তোফায়েল আহমদ

বড় আফসোস আমার। জীবনে এই প্রথম কোরবানি করতে পারছি না। মনকে শান্তনা দিচ্ছি, মহামারী করোনা আমার জীবন থেকে এবারের কোরবানি ছিনিয়ে নিয়েছে। তবুও প্রভুর কাছে শোকরিয়া জানে বেঁচে আছি এখনো। পুরো পরিবার নিয়ে হাসপাতাল, ঘর,কভিড টেস্ট, সবার জন্য ওষুধ ও খাবার যোগাড়সহ টাকার যোগান দিতেই হিমসিম খাচ্ছি আমি। নুন আন্তে নাকি পান্তা ফুরিয়ে যায়। কিন্তু আমার যেন নুনও নেই, পান্তাও নেই অবস্থা।

আমারই অনুজপ্রতিম কভিড আক্রান্ত একজন সংবাদকর্মী দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে বলেন এসব দুঃখের কথা গুলো।
তিনি বলেন, যার ঘরে করোনা হয়নি তিনি করোনার কষ্ট অনুধাবন করতে পারবেন না। তাই তিনি বুঝবেন না কত বেদনা লুকিয়ে আছে করোনার অভ্যন্তরে। চুলায় আগুন দেয়ার লোকেরও অভাব এখন। ঘরে চাল নেই, তরিতরকারি, মাছ মাংস সব কিছু ফুরিয়ে গেছে। তবুও জানটা রক্ষার জন্য আগে দৌঁড়াচ্ছি ওষুধের জন্য।

এমনিতে করোনায় নিঃশ্বাস ফেলতে কষ্ট হচ্ছে, তার উপর ওষুধ নিতে গিয়ে নিঃশ্বাস একেবারে বন্ধ হয়ে পড়ার উপক্রম। একদিনে ১৪০০/ টাকার ওষুধ দরকার হচ্ছে এখন। এভাবে এক সপ্তাহ চলবে। এর আগের সপ্তাহ সবচেয়ে সংকটে কাটিয়েছি। তখন যে দৈনিক কত টাকার চিকিৎসা খরচ গেছে সেই হিসাব আর বলার নয়।

হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে প্রতিটি ইনজেকশন ২২০০/,১০০০/ ও ৪৫০/ টাকায় করেও কিনতে হয়েছে। তার উপর হাসপাতাল থেকেও বিনামূল্যে পুশ করা হয়েছে অনেক। পরিবারের ৫ সদস্য সবাই কভিডে আক্রান্ত। এখন সবাই ঘরে চিকিৎসাধীন। রাতের বেলায় একটা বড় ধরনের হুলস্থুল পরিবেশ বিরাজ করে আমার এক কক্ষ বিশিষ্ট টিনশেডের ঘরটিতে।

কেউ কাশি শুরু করলে সেই কাশি একে একে সবাই কে পেয়ে বসে। জ্বর, সর্দ্দি আর ব্যথার যন্ত্রণায় কারও গোংগানি শুরু হলেও হয় একই দশা। করোনার যন্ত্রণায় শরীর দুর্বল হতে হতে নড়াচড়ার শক্তিও হারিয়ে যায়। কে কাকে সান্তনা দেব তা বুঝার শক্তিও থাকে না।
আমার এ ভাইটি চলমান সমাজে অত্যন্ত পরোপকারী একজন মানুষ। এসময়ে কি রকম আর্থিক কষ্টে আছেন তিনি তারপরও সেটা প্রকাশ করতে চান না। তবুও বার বার তিনি উচ্চারণ করে চলেছেন- “যার করোনা হয়েছে তিনিই জানেন, কি রকম ব্যয়বহুল চিকিৎসা এই করোনা। হায় আল্লাহ, সবাইকে ক্ষমা করে দাও।”

১৮.০৭.২০২১