মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী 

আজ ২৭ এপ্রিল, কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার ১৯ তম জন্মদিন। ২০০২ সালে আজকের এদিনে জেলার অষ্টম উপজেলা হিসাবে পেকুয়া উপজেলা আনুষ্ঠানিকভাবে জন্মলাভ করে।

২০০২ সালের ২৬ এপ্রিল পর্যন্ত কক্সবাজার জেলায় উপজেলার সংখ্যা ছিল ৭টি। সেগুলো হচ্ছে-কুতুবদিয়া, মহেশখালী, চকরিয়া, রামু, সদর, উখিয়া ও টেকনাফ। বাংলাদেশের প্রশাসনিক আইন অনুযায়ী কমপক্ষে ৮টি উপজেলা ছাড়া ‘এ’ ক্যাটাগরির জেলা হয়না। ২০০২ সালের ২৭ এপ্রিল তৎকালীন বৃহত্তর চকরিয়া উপজেলা থেকে পেকুয়া’কে পৃথক করে আলাদা একটি পূর্ণাঙ্গ উপজেলায় রূপান্তর করা হয়। তখন কক্সবাজার জেলাভুক্ত উপজেলার সংখ্যা দাঁড়ায় মোট ৮টিতে। এর মাধ্যমে কক্সবাজার জেলা প্রথম শ্রেণীর জেলায় উন্নীত হয়। এভাবেই ১৯ বছর আগে আজকের এ দিনে পেকুয়া উপজেলা জন্ম লাভ করে।

সেই ঐতিহাসিক ২০০২ সালের ২৭ এপ্রিল থেকে কক্সবাজার জেলার সকল নাগরিক প্রথম শ্রেণীর জেলার নাগরিক হওয়ার গৌরব অর্জন করে। পেকুয়া’কে উপজেলায় রূপান্তর করে কক্সবাজার জেলাকে প্রথম শ্রেণীর জেলায় উন্নীত করার এই মহান কাজটি করেছিলেন-জেলার রাজনীতির বরপুত্র, সাবেক যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী, বিএনপি জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য, জাতীয় রাজনীতিবিদ, কক্সবাজারের উন্নয়নের ফেরীওয়ালা, দি প্রিন্স অব কক্সবাজার সালাহউদ্দিন আহমদ। প্রথম শ্রেণীর জেলার নাগরিক হওয়ার গৌরব অর্জন ও পেকুয়া উপজেলা ঘোষনার ১৯ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতে স্বশ্রদ্ধ সালাম জানাচ্ছি- কিংবদন্তী নেতা, দুঃসাহসী বীরপুরুষ সালাহ উদ্দিন আহমদকে। হে ক্ষনাজম্মা পুরূষ, তোমার আসার অপেক্ষায় বাংলাদেশ। তোমার বজ্রকন্ঠে আবারো কেপেঁ উঠুক রাজপথ।

২০০২ সালের ২৭ এপ্রিল দেশনেত্রী প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত থেকে পেকুয়া উপজেলার ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপন করেছিলেন। তাঁর সাথে ছিলেন ডজনখানেক মন্ত্রী ও এমপি। পেকুয়া শহীদ জিয়াউর রহমান উপকূলীয় কলেজ মাঠে স্মরণকালের বিশাল জনসভায় পেকুয়া উপজেলার স্থপতি সালাহ উদ্দিন আহমদের সভাপতিত্বে প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ভাষনে সেদিন উজ্জীবিত হয়েছিল-পুরো কক্সবাজার জেলাবাসী। সেদিন শতাধিক গরু-মহিষ জবাই করে হাজার হাজার মানুষের জন্য গণ মেজবানের আয়োজন করা হয়েছিল। পেকুয়া উপজেলার আত্মপ্রকাশকে মানুষ উপভোগ করেছিল প্রাণভরে। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করা হয়েছিল সেদিন। সেখানে সঙ্গীত পরিবেশন করেছিলেন রবি চৌধুরীর মতো অনেক গুনী সঙ্গীত শিল্পী।

এই পেকুয়া উপজেলা প্রতিষ্ঠার পর সরকারীভাবে গেজেট প্রকাশ করে কক্সবাজার জেলাকে ‘এ’ ক্যাটাগরির প্রশাসনিক জেলা ঘোষনা করা হয়। উন্নয়ন পাগল সালাহ উদ্দিন আহমদ পেকুয়াকে শুধু উপজেলায় রূপান্তর করে থেমে থাকেননি। সুদৃশ্য ও সুরম্য উপজেলা পরিষদ ভবন, হাসপাতাল, ফায়ার সার্ভিস, স্টেডিয়াম, বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে শুরু করে পরবর্তী ৫ বছরে পেকুয়া উপজেলার প্রায় সকল প্রয়োজনীয় অবকাঠামো ও স্থাপনা তিনি নির্মাণ করতে সক্ষম হয়েছেন। নবসৃষ্ট পেকুয়া উপজেলার যোগাযোগ ব্যবস্থার আমুল পরিবর্তন করে ভৌগোলিকভাবে এ উপজেলাকে তিনি চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের সাথে সম্পৃক্ত করেছেন। তাঁর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় সম্পাদিত হওয়া ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকান্ডের সুফল ভোগ করছে, পুরো জেলাবাসী। বিগত পেকুয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ নাকরায় পেকুয়া উপজেলায় আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী সহ সকল প্রার্থীরা পেকুয়া উপজেলার জন্মদাতা সালাহ উদ্দিন আহমদের প্রশংসার খই ফুটিয়েছে। পেকুয়া যখন উপজেলা হয়, সালাহ উদ্দিন আহমদ তখন যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী ছাড়াও (কক্সবাজার-১) পেকুয়া-চকরিয়ার নির্বাচিত সংসদ সদস্য ছিলেন। অর্থাৎ তিনি পেকুয়া উপজেলার শুধু স্থপতি নন, পেকুয়া উপজেলার প্রতিষ্ঠাতা সংসদ সদস্যও। পরে অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তাঁরই সহধর্মিনী এডভোকেট হাসিনা আহমেদ একই আসন থেকে বিপুল ভোটে আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থীকে হারিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এই পেকুয়া উপজেলা পরিষদের পর পর দু’বার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন কেন্দ্রীয় বিএনপি’র সাবেক সহ সভাপতি মরহুম মাহমুদুল করিম চৌধুরীর সন্তান, আরেক তরুণ রাজনীতিবিদ শাফায়েত আজিজ রাজু। কালের পরিক্রমায় এই পেকুয়া উপজেলার উদ্বোধক তিনবারের প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া দীর্ঘ তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে কারাগারে ও নিজ বাসভবনে অন্তরীণ রযেছেন। অপরদিকে, এই পেকুয়া উপজেলার স্থপতি সালাহ উদ্দিন আহমদ দীর্ঘ অর্ধ্ব যুগ ধরে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের শিলং শহরে নির্বাসিত জীবনযাপন করছেন। দেশবাসীর যেমন প্রত্যাশা, গণতন্ত্রের প্রতীক বেগম খালেদা জিয়া শীঘ্রই মুক্তি পেয়ে এদেশের গণমানুষের সকল মৌলিক, নাগরিক ও নৈতিক অধিকার ফিরে আনুক। একইভাবে কক্সবাজার জেলাবাসীর প্রত্যাশা-বীরের বেশে সালাহ উদ্দিন আহমদ ফিরে এসে কক্সবাজার পৌরসভাকে সিটি কর্পোরেশন, ঈদগাহ ও মাতামুহুরী’কে পূর্ণাঙ্গ উপজেলা, উখিয়া ও রামু সদরকে পৌরসভা, জেলায় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা সহ জেলাবাসীর প্রাণের দাবি সমুহ পূরণ করুক। মহান আল্লাহতায়লা দেশাবাসী ও কক্সবাজার জেলাবাসীর সকল ন্যায্য প্রত্যাশা পূরণ করুক। আমিন!
ছবি : সাংবাদিক ছাফওনুল করিম।

(লেখক : আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট, ঢাকা।)