মমতাজ উদ্দিন আহমদ, আলীকদম (বান্দরবান):

বান্দরবানের আলীকদম উপজেলায় খাবার পানির তীব্র সংকট চলছে। পানিশুন্যতা বিরাজ করছে উপজেলার আনাচে কানাছে স্থাপিত বেশীরভাগ রিংওয়েল ও টিউবওয়েলগুলোতে। দুর্ভোগে পড়েছে সাধারণ মানুষ। দুর্গম এলাকার উপজাতি অধ্যুষিত এলাকার চিত্র ভয়াবহ। প্রতিবছর শুষ্কমৌসুমে এ উপজেলায় পানীয় জলের সংকট থাকলেও সমাধানে উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর ঠুটু জগন্নাথের ভূমিকায় রয়েছে।

সরেজমিন উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ঝিরি-ছড়া, খাল ও নদীর পানি ব্যবহার করছে বেশীরভাগ পরিবার। তীব্র দাবদাহে এসব উৎসের পানি দুষিত হয়ে পড়ে। ফলে খাবার পানির প্রকট সংকটে পড়েছে দুর্গমের বাসিন্দারা।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, এলজিইডি কিংবা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী অধিদপ্তর থেকে যেসব প্রকল্প নেওয়া হয় তা সদরকেন্দ্রিক। তাছাড়া এ দু’টি সরকারি প্রতিষ্ঠান পানির উৎসসৃষ্টির প্রকল্পগুলো নিলেও তা বাস্তবায়ন করে বৃষ্টি শুরু হওয়ার পর। যাতে ৩০/৪০ ফুট মাটির গভীরে গেলেই পানি পাওয়া যায়। চলতি অর্থবছরে আলীকদম এলজিইডি থেকে উপজেলা সদরে ৫টি রিংওয়েল স্থাপনের জন্য গত ২২ এপ্রিল বিজ্ঞপ্তি প্রচার করেছে। সেসব প্রকল্প স্থাপনে দরপত্র খোলার তারিখ দেখানো হয়েছে আগামী ৬ মে। প্রকল্প বাস্তবায়নের সময়সীমা ধরা হয়েছে ৪৫দিন। সে হিসাবে বুঝাই যাচ্ছে প্রকল্প বাস্তবায়নে চলতি অর্থবছরের জুন মাসও শেষ হয়ে যাবে! শুরু হবে বর্ষা। তখন স্থাপন করা হবে রিংওয়েলগুলো।

সরেজমিন দেখা গেছে, সাম্প্রতিক সময়ে উপজেলা সদর এলাকায়ও পানির সংকট চলছে। এছাড়াও উপজেলার পানবাজার, উত্তরপালং পাড়া, পূর্বপালং পাড়া, প্রভাত পাড়া, সিলেটি পাড়া ও আবুমাঝি পাড়া, কলারঝিরি, পূর্ণবাসন, বাঘেরঝিরি, যোগেন্দ্র পাড়া, তারাবুনিয়া, রোয়াম্ভূ, নয়াপাড়া, রোয়াম্ভু, মংচা পাড়া, জানালী পাড়া, কুরুকপাতা, পোয়ামুহুরীসহ প্রভৃতি এলাকায় বিশুদ্ধ পানীয় জলের সংকট দেখা দিয়েছে। সকাল-বিকেল রিংওয়েল টিবওয়েলগুলোতে মহিলারা কলসি নিয়ে ভীড় জমাচ্ছেন।

উপজেলার পোয়ামূহুরী, কুরুকপাতা, দোছরী ও মাংগু এলাকায় কয়েক শতাধিক পাহাড়ি পল্লীতে অন্তত ১৫ হাজার হাজার পরিবার বসবাস করছে। সেখানে নিরাপদ পানির উৎস নেই। সরকারি বরাদ্দে সেখানে কোন রিংওয়েল কিংবা টিউবওয়েল স্থাপন করা হয়নি। ফলে গ্রীষ্ম মৌসুম আসতে না আসতে বিশুদ্ধ পানির সংকট সৃষ্টি হয় এসব এলাকায়। প্রতিবছরই পানির জন্য হাহাকার অবস্থা সৃষ্টি হয় দুর্গমের বাসিন্দাদের।

সরেজমিনে দেখা গেছে, এতদিন যে সকল রিংওয়েল, কুপ কিংবা ঝিরি-ছড়া থেকে খাবার পানি পাওয়া যেত, এখন পানি মিলছে না। এক কলসি পানির জন্য দীর্ঘ অপেক্ষার প্রহর গুণতে হয়।

দৌছরির স্বাধীন মনি তঞ্চঙ্গ্যা জানান, প্রতিবছর শুষ্ক মৌসুমে পানির সংকট দেখা দেয়। বিশুদ্ধ পানি সরবরাহে কোনো প্রকল্প নেওয়া হয়নি।

শুক্রবার সকালে জানতে চাইলে উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের সহকারি প্রকৌশলী মনির আহমদ জানান, চলতি অর্থবছরে আলীকদম উপজেলার জন্য মাত্র ৬টি রিংওয়েল ও ২৪টি ডিপ টিউবওয়েল বরাদ্দ হয়েছে। এসব স্থাপনে টেন্ডার হয়েছে। ওয়ার্ক দিলে ঠিকাদার কাজ শুরু করবে।