এম.এ আজিজ রাসেল :
১৩৮৩ রাখাইন অব্দকে বিদায় জানিয়ে ১৩৮৪ নতুন অব্দকে ব্যাপক উৎসাহ—উদ্দীনায় বরণ করা হয়েছে। প্রতিবছর বর্ষবরণ ও পুরোনো বছরকে বিদায় জানাতে রাখাইন সম্প্রদায়ের লোকজন মহাসমারোহে সাংগ্রাই বা জলকেলি উৎসবে ওঠেন। গতবছর করোনার জন্য এই উৎসব হয়নি। এবার একেবারে পারিবারিকভাবে এই উৎসব পালন করা হয়েছে। সোমবার (১৯ এপ্রিল) ছিল উৎসবের সমাপনী দিনে একে—অপরের গায়ে পানি ছিটিয়ে পুরনো বছরের সকল দুঃখ, অবসাদ দূর করে নতুন বছরে শুদ্ধ মননে জীবন শুরুর প্রত্যয় ব্যক্ত করেন রাখাইন সম্প্রদায়ের মানুষ। পাশাপাশি আগামী দিনে করোনা মহামারী থেকে মুক্তিলাভ করে সবার জীবনে শান্তি আসুক, আবার মুক্ত বাতাসে যেন প্রাণখুলে নিশ্বাস নিতে পারে সবাই। এমন প্রত্যাশা ছিল রাখাইন ‘জলকেলি’ বা সাংগ্রাই উৎসবের সমাপনী দিনে। সোমবার দুপুরে টেকপাড়া, হাঙর পাড়া, বার্মিজ স্কুল এলাকা, পূর্ব—পশ্চিম মাছ বাজার, ক্যাং পাড়া ও বৈদ্যঘোনাস্থ থংরো পাড়ায় গিয়ে দেখা যায়, সবার মাঝে করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যু বরণ করা মানুষের জন্য বিষাদের ছায়া। তবুও অন্ধকারের ঘনঘটা ভেদ করে নববর্ষ বরণে কৃপণতা করেনি কেউ। ছোট শিশু থেকে শুরু করে আবাল বৃদ্ধা বণিতাও শামিল হয় আলোক মিছিলে। আলোক সেই মিছিল যেন ছুঁয়ে গেছে সমুদ্রের বিশাল জলরাশিকেও। প্যান্ডেলগুলোতে খানিক পর পর রাখাইন তরুণ—তরুণীরা একে অপরের গায়ে জল ছিটিয়ে পুরোনো বছরের হতাশা দূর করে নব আলোকে পথ চলার স্বপ্ন বুনেন। শহর ছাড়াও মহেশখালী, টেকনাফ সদর, হ্নীলা চৌধুরী পাড়া, রামু, মহেশখালী, খুরুশকুল, পানিরছড়া, চকরিয়ার মানিকপুরসহ রাখাইন অধ্যুষিত এলাকায় সপ্তাহজুড়ে রাখাইন নববর্ষ পালনে নানা আনুষ্টানিকতা পালন করা হয়।

রাখাইন তরুণ—তরুণীরা জানান, আধিকাল থেকে রাখাইন নববর্ষ উপলক্ষে সামাজিকভাবে আমরা সাংগ্রাই উৎসব পালন হয়ে আসছি। তবে এবার করোনার কারণে উৎসব হয়েছে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত পরিসরে। নববর্ষ উপলক্ষে আমরা একে অপরের গায়ে পানি ছিটানোর মধ্য দিয়ে পুরনো দিনের সব ব্যথা, বেদনা, হিংসা বিদ্বেষ ভুলে এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখি। গত ১৪ এপ্রিল চন্দন জলে বুদ্ধ স্নানের মধ্য দিয়ে উৎসবের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। এসময় করোনা মহামারী থেকে মুক্তিলাভে বিশেষ প্রার্থনা করা হয়। এরপর ১৫ ও ১৬ এপ্রিল পাড়া—মহল্লায় চলে শিশুদের জলকেলি। গত শনিবার (১৭ এপ্রিল) দুপুর থেকে সন্ধ্যা অবদি সীমিত আয়োজনে মৈত্রিময় জলকেলিতে মেতে উঠে রাখাইন তরুণ—তরুণীরা। সোমবার করোনা থেকে মুক্তিলাভের আশায় শেষ হলো বর্ণিল এই উৎসব
কক্সবাজার সিটি কলেজের অধ্যক্ষ ক্য থিং অং ও সাবেক সাংসদ জেলা আওয়ামী লীগের সহ—সভাপতি অধ্যাপিকা এথিন রাখাইন জানান, এটি রাখাইন সম্প্রদায়ের সংস্কৃতির অংশ। করোনা মহামারীর কারণে এবার সীমিত আকারে জলকেলিতে মজেছে শিশু—কিশোর ও তরুণ—তরুণীরা। তবে এবার সর্বাত্মক কঠোর লকডাউন চলমান থাকায় উৎসবে আগের মতো উচ্ছ্বাস ছিল না। ঘরে ঘরে সীমিত পরিসরে সবাই নতুন বছরকে বরণ করতে নানা কর্মসূচী পালন করেছে।