আবদুর রহমান খান :

এপ্রিল ১৬: পাকিস্তানে শরিয়া আইন কার্যকর করার দাবিতে আন্দোলনরত ধর্মীয়-রাজনৈতিক দল তেহরিক-ই-লাব্বায়েক-পাকিস্তান (টিএলপি) কে সন্ত্রাস-বিরোধী আইনে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

টানা তিনদিন ধরে কারাচি, লাহোর, ইসলামাবাদ, রাওয়ালপিন্ডি সহ বিভিন্ন শহরে ব্যাপক বিক্ষোভ, মহাসড়ক অবরোধ এবং পুলিশের সাথে রক্তক্ষয়ী সঙ্ঘর্ষে অন্তত: ছ’জনের প্রানহানি সহ শতাধিক আহত হবার প্রেক্ষাপটে পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং ধর্মমন্ত্রী গতকাল ( ১৫ এপ্রিল) এক যৌথ সংবাদ সম্মেলন সরকারের এ সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছেন।

পাকিস্তানের বিশিষ্ট ইসলামি পণ্ডিত এবং ধর্মগুরু খাদিম হোসাইন রিজভি ২০১৭ সালে প্রতিষ্ঠা করেন তেহরিক-ই-লাব্বায়েক। প্রতিষ্ট্রার পর থেকে শরিয়া আইনের পক্ষে দেশব্যাপী বেশ কয়েকটি বড় ধরনের বিক্ষোভ সমাবেশ ঘটিয়ে ব্যাপক জনসমর্থন অর্জন করতে সক্ষম হয় দলটিক । ২০২০ সালে নভেম্বর মাসে খাদিম হোসাইন রিজভির মৃত্যুর পর পুত্র সা’দ হোসাইন সংগঠনের নেতৃত্বে আসেন। মূলত রেহেলভি ভাবধারার অনুসারীরা এর সাংগঠনিক শক্তি হিসেবে কাজ করছে ।

সম্প্রতি ফ্রান্সে মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সঃ) কে নিয়ে ব্যঙ্গ চিত্র পুন:প্রকাশের প্রতিবাদে পাকিস্তানে ব্যাপক প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ সংগঠিত করেছে তেহরিক-ই-লাব্বায়েক। এ প্রেক্ষাপটে তারা পাকিস্তানে নিযুক্ত ফরাসী রাষ্ট্রদুতের বহিষ্কার দাবি করে এবং ২০ এপ্রিলের মধ্যে এ দাবি না মানা হলে তারা রাজধানী ইসলামাদ অবরোধ করার হুমকি দেয়। প্রতিবাদ আন্দোলন দমাবার কৌশল হিসেবে পাকিস্তান সরকার গত সোমবার (১২ এপ্রিল) সংগঠনের প্রধান সা’দ হোসাইনকে লাহোরে থেকে গ্রেপ্তার করে।

পাকিস্তান সরকার বলছে, চট করেই ফারাশি দেশের রাষ্ট্রদূতকে বহিষ্কার করা যায় না। তাছাড়া এর সাথে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সম্পর্ক জড়িত। ভেবে চিন্তে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

এর আগে গত নভেম্বরে রাওয়ালপিন্ডিতে টিএলপি’ ডাকা এক অবস্থান কর্মসুচি শেষে সরকার তাদের সাথে চুক্তি করে যে শিগ্রই ফরাসি রাষ্ট্রদূতকে প্রত্যাহারের ব্যাবস্থা করবে। পাকিস্তানের পার্লামেন্ট ইতোমধ্যে ইসলামের প্রিয় নবীর এ কার্টুন আঁকার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে একটি প্রস্তাব পাশ করেছে এবং ফরাসী সরকারকে তাদের রাষ্ট্রদূত প্রত্যাহারের অনুরোধ জানিয়েছে ।

এদিকে, পবিত্র রমযান শুরুর আগের দিন সোমবার বিকেলে সংগঠনের প্রধান সা’দ হোসাইনকে আকস্মিকভাবে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে দেশব্যাপী বিক্ষোভে ফেটে পরে তেহরিক-ই-লাব্বায়েক-এর নেতা-কর্মী-সমর্থকগন। মহাসড়ক অবরোধ করে টানা প্রতিবাদে সোচ্চার হয়ে থাকে হাজার হাজার বিক্ষোভকারী। করাচি, লাহোর, ইসলামাবাদ, পিণ্ডি সহ বড় বড় শহরে পুলিশ রাস্তায় ব্যারিকেড দিয়ে মিছিল সামালাতে হিমশিম খায়। এক পর্যায়ে পুলিশের লাঠিচার্জ টিয়ারগ্যাস, রাবার বুলেট নিক্ষেপ। ওদিকে থেকে পালটা ইট, পাথর নিক্ষেপ এবং পুলিশের ওপর চোরাগুপ্তা বন্দুকের গুলি চালানো হয়।

দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দাবি করেছেন, এ সব সংঘর্ষে প্রায় ৬০০ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন এবং অর্ধশত গাড়ী ভাংচুর বা পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে।

সোমবার থেকে এরকম টানা সহিংতার প্রেক্ষাপটে ফরাসি দুতাবাস তাদের দেশের নাগরিক এবং ব্যাবসায়ীদের অনতিবিলম্বে পাকিস্তান ছেড়ে যাবার পরামর্শ দিয়ে ইমেল বার্তা পাঠিয়েছে।

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান এ প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের বলেছেন, দাঙ্গা-হাঙ্গামা থেকে দেশের নাগরিকদের জানমালের নিরাপত্তা এবং দেশে শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষা করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। আর সেকারণেই বৃহত্তর জনস্বার্থে টিএলপি কে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এ নিষেধাজ্ঞা স্থায়ীভাবে কার্যকর করার জন্য পার্লামেন্টের কাছে প্রস্তাব পাঠান হয়েছে।

পাকিস্তানের রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, আকস্মিক গণবিষ্ফোরন সরকারের প্রশাসনকে কেমন বেকায়দায় ফেলতে পারে তার উদাহরন হচ্ছে গত কয়েকদিনের ঘটনাবলী। আর ধর্মীয়গোষ্ঠীর ক্রম বর্ধমান শক্তি মোকাবেলায় আপোষকামীতা কী পরিণতি নিয়ে নিয়ে আসতে পারে তাও আর একবার দেখার সুযোগ হয়েছে পাকিস্তানের।