সিবিএন ডেস্ক:
লকডাউনেও সরকার মাদ্রাসা বন্ধ করতে পারবে না বলে হুমকি দিয়েছেন হেফাজত ইসলামের আমির জুনায়েদ বাবুনগরী। তিনি বলেন, লকডাউন সরকার দিতে পারবে। কিন্তু আমাদের মাদ্রাসা বন্ধ করা যাবে না। নুরানী, হেফজখানায়, কওমি দ্বীনি মাদ্রাসা বন্ধ রাখা যাবে না। যেখানে কোরআন, হাদিস পাঠ করা হয়, যেখানে হেফজখানায় ছাত্ররা কোরআন পাঠ করে সেখানে করোনা আসবে না। তার কারণ হলো আল্লাহর রহমত।

বুধবার (১১ এপ্রিল) বিকেলে সাড়ে ৩টার দিকে হাটহাজারী মাদরাসায় প্রেস ব্রিফিং করে তিনি এসব কথা বলেন। এর আগে বেলা ১১টা থেকে দুপুর ৩টায় পর্যন্ত মাদরাসায় দেশের বিভিন্ন এলাকার হেফাজত নেতাদের নিয়ে বৈঠক করেন হেফাজত আমির। বৈঠক শেষে তিনি সাংবাদিকদের প্রেস ব্রিফিং করেন।

বাবুনগরী বলেন, মসজিদের জামাত বন্ধ করা যাবে না। ইতেকাফ বন্ধ করা যাবে না। তারাবি নামাজ চলবে, জুমা চলবে। জুমায় ১০ জন, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজে ইমামসহ ৫জন এগুলো মানা যাবে না। এগুলো শরীয়ত পরিপন্থী।

গত ২৬ মার্চ হাটহাজারীতে ভাঙচুরের সঙ্গে নিজেদের সম্পৃক্ততার বিষয়টি কৌশলে এড়িয়ে গেছেন জুনায়েদ বাবুনগরী। তিনি বলেন, গত ২৬ মার্চ যে ঘটনা ঘটেছে, ওই দিন হেফাজতে ইসলামের কোনও কর্মসূচি ছিল না। জাতীয় ও আঞ্চলিক কোনও জায়গায় আমাদের কোনও কর্মসূচি ছিল না। এ কারণে বিষয়টি আমরা ওয়াকিবহাল ছিলাম না। আমি নিজেও অনেক দূরে ছিলাম। কিছু মানুষ মিছিল বের করেছে, তারা বলেছে আমরা শান্তিপূর্ণ মিছিল বের করেছি। এই শান্তিপূর্ণ মিছিলে প্রশাসনের কিছু লোক, পুলিশ বাহিনী নির্বিচারে গুলি করে। হাটহাজারীতে চারজনকে হত্যা করেছে। আমাদের কথা হচ্ছে তারা কারা আমরা জানি না, আমরা ছিলামই না।

এসময় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে হেফাজত আমীর বলেন, আজকে আমাদের বৈঠকে কোনও ব্যক্তিকে নিয়ে কোনও আলোচনা হয়নি, কাউকে প্রত্যাহার অথবা অব্যাহতি দেওয়ার কোনও আলোচনা হয়নি। মামুনুল হকের বিষয়ে আমাদের একটি জবাব এটি উনার ব্যক্তিগত বিষয়। এর বাইরে আমরা এ বিষয়ে আর কোনও মন্তব্য করতে রাজি নই।

জুনায়েদ বাবুনগরী বলেন, তারা যদি কিছু ভাঙচুরও করে, তাহলে পুলিশ টিয়ার শেল নিক্ষেপ করতে পারে। রাবার বুলেট ছুঁড়তে পারে। এরপর গুলি করতে হলেও হাঁটুর নিচে গুলি করবে। যেন উত্তেজনা দমন হয়ে যায়। কিন্তু আমি সফরে ছিলাম, সফর থেকে আসার পথে হাসপাতালে গিয়েছি। চমেক হাসপাতালে সেখানে চারজন লাশের কারও পেটে গুলি, কারও বুকে গুলি, কারো মাথায় গুলি দেখেছি। এগুলো কি দেশের আইন?

তিনি আরও বলেন, হাটহাজারীর ঘটনার আগে বায়তুল মোকাররমে মুসল্লি আর আওয়ামী ক্যাডারদের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়েছে। সেখানেও হেফাজতের কোনও কর্মসূচি ছিল না।

পুলিশি হয়রানি বন্ধের দাবি জানিয়ে জুনায়েদ বাবুনগরী বলেন, সরকারের কাছে আমাদের দাবি হলো যা হয়ে গেছে, হয়ে গেছে। যাদের কপালে আছে শহীদ হওয়া, শাহাদাত বরণ করা। তাদের কপাল ভালো। এমনিতেও তো মরতে হবে। যা হওয়ার আছে, হয়ে গেছে। মাদ্রাসা এখন বন্ধ। কিন্তু প্রতি রাতে এলাকায় পুলিশ, র‌্যাব বের হয়ে নিরীহ মানুষকে হয়রানি করতেছে। ধরে নিয়ে যাচ্ছে, গ্রেফতার করতেছে, চালান করে দিচ্ছে। এই জুলুম নির্যাতন কেন করা হচ্ছে। সরকারের কাছে আমাদের জোর দাবি, এই সমস্ত হয়রানি বন্ধ করতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে হেফাজতে ইসলামের উপদেষ্টা মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী, হেফাজত নেতা সালাউদ্দিন নানুপুরী, আজিজুল হক ইসলামাবাদিসহ সংগঠনটির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।