সিবিএন ডেস্ক:
হাটহাজারী থানার ওসি রফিকুল ইসলামকে প্রত্যাহার করার দাবি জানিয়েছেন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমির জুনায়েদ বাবুনগরী। রবিবার (২৮ মার্চ) বিকাল ৩টায় হাটহাজারী মাদ্রাসায় সংবাদ সম্মেলনে তিনি ওসি রফিকুল ইসলামকে প্রত্যাহার করে নেওয়ার এই দাবি জানান। এছাড়া নিহত হেফাজত কর্মীদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি জানান তিনি। দাবি পূরণ না করলে সামনে কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে বলেও হুমকি দেন বাবুনগরী।

রবিবার (২৮ মার্চ) দুপুরে হরতাল পরবর্তী প্রতিক্রিয়ায় তিনি এ দাবি জানান। এ সময় হরতাল সফল হয়েছে বলেও দাবি করেন হেফাজত আমির।

এদিকে হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীরা আর যদি আহত-নিহত হয় এবং হেফাজতের দেয়া দাবি পূরণ না করলে কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দিয়েছেন হেফাজতে ইসলামের আমির ও হাটহাজারী মাদরাসার শায়খুল হাদীস আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী।

রবিবার (২৮ মার্চ) দুপুরে হাটহাজারী কাতারিয়া রোডের (বড় মাদ্রাসা এলাকায়) আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই হুঁশিয়ারি দেন।

তিনি বলেন, ‘শুক্রবার (২৬ মার্চ) সকালে হাটহাজারী মাদ্রাসায় শান্তিপূর্ণ মিছিল কোনো ওস্কানিমূলক মিছিল ছিল না। শান্তিপূর্ণ মিছিলে পুলিশ বাহিনী বিশেষভাবে হাটহাজারী থানার ওসি রফিকুল গুলি করে চারজনকে শহীদ করেছেন। এতে আরও অনেক মাদ্রাসার ছাত্র আহত হয়েছেন। এছাড়া একজন নিরীহ দ্বীনদার তাবলীগকেও শহীদ করেছেন।’

জুনায়েদ বাবুনগরী বলেন, ‘এ মর্মান্তিক ঘটনায় সারা দেশে আরও শহীদ হয়েছেন। বিশেষভাবে ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ঢাকা ও হাটহাজারীসহ মোট ১৬ জন নিহত হয়েছেন। এটা কোনো মামলি (সাধারণ) কথা নয়। এ কারণে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আজকে হরতালের ডাক দিয়েছি।’

হেফাজতের আমির বলেন, ‘এ হরতালে আলেম-ওলামারা সাড়া দিয়েছেন। এ কারণে আমি দেশের আলেম-ওলামা ও জনগণকে মোবারকবাদ ও অভিনন্দন জানাচ্ছি। এভাবে ইসলামবিরোধী কাজ হলে, জুলুম নির্যাতন হলে আমরা আলেম-ওলামা, জনগণ, তৌহিদী জনতা ও ছাত্র জনতা ঝাঁপিয়ে পড়বো, ইনশাআল্লাহ।’

তিনি বলেন, ‘এই নির্যাতনের বিরুদ্ধে হরতালের ডাক। এ হরতাল ন্যায়ের পক্ষে অন্যায়ের বিরুদ্ধে; ইনসাফের পক্ষে জুলুমের বিরুদ্ধে। আমরা বাধ্য হয়ে হরতালের ডাক দিয়েছি— আলহামদুলিল্লাহ হরতাল কামিয়াব, হরতাল সফল।’

বাবুনগরী বলেন, ‘বিভিন্ন জায়গায় সরকারের পেটুয়া বাহিনী ও দলীয় ক্যাডাররা আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর জুলুম নির্যাতন ও আক্রমণ করেছে, আহত-নিহত করেছে। আমাদের হেফাজতের নায়েবে আমির মধুপুরের পীর সাহেব আব্দুল হামিদের ওপরও হামলা করেছে। এছাড়া আরও অনেকের ওপর হামলা করেছে। ১৬ জন শহীদ ছাড়াও আরও অনেকে আহত হয়েছেন। এটার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। সরকারের কাছে আমাদের দাবি— এ হামলা যেন বন্ধ করে, যারা নিহত হয়েছেন তাদের ক্ষতিপূরণ দেন, যারা আহত হয়েছেন তাদের ভালো চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। আর যারা গ্রেপ্তার হয়েছেন তাদেরকে নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে।’

এদিকে বিক্ষোভে চারজন নিহতের ঘটনায় গত শুক্রবার থেকে টানা তিনদিন ধরে চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি সড়ক অবরোধ করে রেখেছে হেফাজত ইসলামের নেতাকর্মীরা। প্রশাসনের বারবার অনুরোধ সতর্ক অবস্থানেও তারা অবরোধ তুলেনি। ফলে ওই সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকায় চট্টগ্রামের সঙ্গে খাগড়াছড়ি, ফটিকছড়ি ও নাজিরহাট এলাকার লোকজন চট্টগ্রাম শহর থেকে বিছিন্ন রয়েছে।

তবে রবিবার সকাল-সন্ধ্যা হরতাল শেষ হলে সড়কের অবরোধ তুলে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন হেফাজতে ইসলামের আমির হাফেজ জুনায়েদ বাবুনগরী। রবিবার দুপুরে হাটহাজারী মাদ্রাসায় জরুরি সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ ঘোষণা দেন।

শুক্রবার জুমার নামাজের পর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সফরের বিরোধীতায় হাটহাজারী বড় মাদ্রাসা থেকে কয়েক হাজার হেফাজত কর্মী করে মিছিল নিয়ে বের হয়। এসময় তারা হাটহাজারী থানা, ইউনিয়ন ভূমি অফিস ও ডাক বাংলোতে হামলা চালায়। পাশাপাশি তারা ভূমি অফিসে অগ্নিসংযোগও করে। আগুন নেভাতে ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের হেফাজতের কর্মীরা ভূমি অফিসে প্রবেশে বাধা দেয়। এসময় হেফাজত ও পুলিশের সংঘর্ষে গুলিতে চারজন নিহত হন। তাদের মরদেহ পুলিশি পাহারায় নিজ নিজ এলাকায় পৌঁছে দিচ্ছে পুলিশ। শনিবার রাতে ডাক বাংলোতে আগুন দেয় হেফাজতের কর্মীরা। পাশাপাশি তারা তিনটি মোটর সাইকেলও পুড়িয়ে দেয়।

শুক্রবারের বিক্ষোভের সময় পুলিশের ধাওয়া খেয়ে হেফাজত কর্মীরা মাদ্রাসা গেটে অবস্থান নিয়ে চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি সড়ক অবরোধ করে রাখে। যেই অবরোধ তিনদিনেও ওঠেনি। যদিও হেফাজতের আমির বলছেন, হরতাল শেষে তারা সড়কের উপর তুলে দেয়া দেয়াল সরিয়ে ফেলে যান চলাচল স্বাভাবিক করে দিবেন।