মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী :

কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পগুলো থেকে স্বেচ্ছায় নোয়াখালীর হাতিয়ার ভাসানচরে যেতে তৃতীয় দফায় দ্বিতীয় ট্রিপে যাওয়া প্রায় দেড় হাজার রোহিঙ্গা শরনার্থী চট্টগ্রামের বিএএফ শাহীন কলেজের ট্রানিজট ক্যাম্পে পৌঁছেছে। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে প্রথম ও রাত ৯ টার দিকে শুক্রবারে যাওয়া তৃতীয় দফার দ্বিতীয় ট্রিপ চট্টগ্রাম পৌঁছে। শুক্রবার ২৯ জানুয়ারি দুপুর সাড়ে ১২টা এবং বিকাল ৩টায় উখিয়া ডিগ্রি কলেজ মাঠের অস্থায়ী ট্রানিজট ক্যাম্প থেকে এসব রোহিঙ্গা শরনার্থী ৩০ টি বাসে করে চট্টগ্রাম যায়। সাথে রোহিঙ্গা শরনার্থীদের মালপত্র বহন করে চট্টগ্রাম নিয়ে গেছে আরো বেশ কয়েকটি ট্রাক। সংশ্লিষ্ট সুত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

সুত্র মতে, ট্রানজিট পয়েন্ট থেকে নৌবাহিনীর জাহাজে করে শনিবার সকালে রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে নিয়ে যাওয়া হবে। সেখানে চূড়ান্ত প্রক্রিয়া শেষে নৌবাহিনীর ব্যবস্থাপনায় তাদের জাহাজে তোলা হবে। ৩০ জানুয়ারি তারা ভাসানচরে পৌঁছাবে। তবে স্থানান্তরের জন্য শুক্রবার নিয়ে যাওয়া রোহিঙ্গা শরনার্থীর এ সংখ্যা কমবেশি হতে পারে বলে জানিয়েছেন সুত্রটি।

এর আগে বুধবার ও বৃহস্পতিবার সকাল থেকে তাদের উখিয়া-টেকনাফের বিভিন্ন শরনার্থী ক্যাম্প থেকে বাসে করে এনে উখিয়া ডিগ্রি কলেজ এর মাঠে অস্থায়ী ট্রানজিট পয়েন্টে বিভিন্ন কার্যক্রম সম্পন্ন করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। রোহিঙ্গা শরনার্থীদের ভাসানচরে স্থানান্তরের জন্য নিবন্ধনের কাজও চলে সেখানে।

এটি হচ্ছে তৃতীয় দফায় রোহিঙ্গা শরনার্থী ভাসানচরে স্থানান্তরের দ্বিতীয় গ্রুপ। কক্সবাজার থেকে যাওয়া রোহিঙ্গাদের ভাসনচরে গ্রহনের জন্য সেখানকার কর্তৃপক্ষ পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়েছেন বলে জানান সুত্রটি।

এর আগে গত ৪ ডিসেম্বর প্রথম ধাপে ১ হাজার ৬৪২ জন রোহিঙ্গা শরনার্থী এবং গত ২৯ ডিসেম্বর দ্বিতীয় ধাপে ১ হাজার ৮০৪ জন রোহিঙ্গা শরনার্থী সহ মোট ৩ হাজার ৬৪৪৬ জন রোহিঙ্গা শরনার্থী বঙ্গোপসাগরের দ্বীপ নোয়াখালীর হাতিয়ার ভাসানচরে পৌঁছায়। তৃতীয় দফায় প্রথম অংশে এক হাজার ৭৭৮ জন রোহিঙ্গা শুক্রবার ২৯ জানুয়ারী নোয়াখালীর ভাসানচরে পৌঁছেছে।এছাড়া অবৈধভাবে সাগরপথে মালয়েশিয়া যেতে ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসা ৩০৬ জন রোহিঙ্গাকে গত মে মাসে ভাসানচরে নিয়ে যায় সরকার। তারাও সেখানে রয়েছেন।

উখিয়া-টেকনাফে আশ্রিত ৩৪ টি রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে কমপক্ষে এক লক্ষ রোহিঙ্গাকে নোয়াখালীর হাতিয়ার ভাসানচরে স্থানান্তর করার টার্গেট রয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। সুত্রমতে, আগামী ফেব্রুয়ারী মাসের শেষদিকে ভাসানচরে যেতে আগ্রহী রোহিঙ্গা শরনার্থীদের আরো একটি দল উখিয়া-টেকনাফ এর শরনার্থী ক্যাম্প থেকে চতুর্থ দফায় ভাসানচরে স্থানান্তরের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।

কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফে আগে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা শরনার্থী সহ বর্তমানে ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা কক্সবাজারের ৩৪ ক্যাম্পে বসবাস করছে। রোহিঙ্গা শরণার্থীদের চাপ কমাতে অন্তত এক লাখ রোহিঙ্গাকে নোয়াখালীর হাতিয়ার কাছে মেঘনা মোহনার দ্বীপ ভাসানচরে স্থানান্তরের পরিকল্পনা নেয় সরকার।

সরকারি তথ্য অনুযায়ী, নৌবাহিনীর তত্ত্বাবধানে রোহিঙ্গা স্থানান্তরের জন্য নিজস্ব তহবিল থেকে তিন হাজার ৯৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ভাসানচর আশ্রয়ণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়। ১৩ হাজার একর আয়তনের ওই চরে এক লাখ রোহিঙ্গা বসবাসের উপযোগী ১২০টি গুচ্ছগ্রামের অবকাঠামো তৈরি করা হয়েছে। ভাসানচরের পুরো আবাসন প্রকল্পটি বাস্তবায়ন ও ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে রয়েছে বাংলাদেশ নৌবাহিনী।

প্রসঙ্গত, রোহিঙ্গা শরনার্থীদের প্রয়োজনীয় নিরাপত্তার প্রয়োজনে নোয়াখালীর ভাসানচরকে হাতিয়া উপজেলার অধীনে দেশের ৬৫০ তম পূর্ণাঙ্গ একটি থানা হিসাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে গত ১৯ জানুয়ারী উদ্বোধন করেছেন।