সিবিএন ডেস্ক:
১৩ জানুয়ারি সকাল থেকে ১৪ জানুয়ারি সকাল পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ১৬ জন। এর মধ্যে ষাটোর্ধ্ব ৯ জন। সরকারি হিসাবে এখন পর্যন্ত মোট মারা গেছেন সাত হাজার ৮৪৯ জন। এদের মধ্যে ষাটোর্ধ্ব চার হাজার ৩১৭ জন। শতকরা হিসাবে যা অর্ধেকেরও বেশি।

গত ১১ জানুয়ারি স্বাস্থ্য অধিদফতর জানায়, চলতি মাসের ২১ থেকে ২৫ তারিখের মধ্যে দেশে আসবে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের তৈরি অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার কোভিশিল্ড ভ্যাকসিন। দেশে আনার পর সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস তাদের ওয়্যারহাউজে রাখবে ভ্যাকসিন। এরপর সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী দেশের জেলা পর্যায়ে পৌঁছে দেবে।

দেশে কত মানুষকে কোন পর্যায়ে কীভাবে ভ্যাকসিন দেবে সে বিষয়েও সাংবাদিকদের জানায় স্বাস্থ্য অধিদফতর। ২৬ জানুয়ারি থেকে শুরু হবে রেজিস্ট্রেশন। ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহ থেকে জাতীয়ভাবে টিকা দেওয়া শুরু হবে। প্রথম দফায় টিকা দেওয়া হবে ৫০ লাখ মানুষকে।

এ ভ্যাকসিনের অর্ধেকই বয়স্কদের দেওয়ার পরিকল্পনা করেছে সরকার। সরকারের এ উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

গত ২৭ আগস্ট কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় পরামর্শক কমিটি করোনার টিকা দেওয়ার ক্ষেত্রে ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর কথা উল্লেখ করে।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভ্যাকসিনের মূল উদ্দেশ্য মৃত্যু ও সংক্রমণের হার কমানো। আর বয়োজ্যেষ্ঠরা যেহেতু মৃত্যু হারের শীর্ষে, তাই তাদের এই ভ্যাকসিন তালিকায় অগ্রাধিকার দেওয়ায় সরকার প্রশংসা পাবে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের টিকা প্রয়োগের তালিকায় প্রথম পর্যায়ের প্রথম ধাপে মোট জনসংখ্যার আট দশমিক ৬৮ শতাংশ অর্থাৎ এক কোটি ৫০ লাখ মানুষকে টিকা দেওয়া হবে।

কোভিড-১৯ টিকা বিতরণ কমিটির সদস্য সচিব ডা. শামসুল হক জানান, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সায়েন্টিফিক অ্যাডভাইজরি গ্রুপ অব এক্সপার্টস (এসএজিই)-এর নির্দেশনা এবং দেশের প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে অগ্রাধিকার তালিকা তৈরি করেছে স্বাস্থ্য অধিদফতর।

প্রথম মাসে সবচেয়ে বেশি টিকা বরাদ্দ থাকছে ৭৭ বছরের বেশি বয়সীদের জন্য। ২৪ লাখ ১৬ হাজার ৬২৬টি টিকা পাবেন তারা। এদের আবার দুই ভাগে করা হয়েছে। ৮০ বছরের বেশি রয়েছেন ১৩ লাখ ১২ হাজার ৯৭৩ জন আর ৭৭ থেকে ৭৯ বছরের মধ্যে আছেন ১১ লাখ তিন হাজার ৬৫৩ জন।

আবার স্বল্প রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার জনগোষ্ঠী (যক্ষ্মা, এইডস রোগী, ক্যানসার রোগী) ছয় লাখ ২৫ হাজার। এরাও প্রথম মাসে ভ্যাকসিন পাবেন।

৭৪ থেকে ৭৬ বছরের মধ্যে রয়েছেন নয় লাখ ৫৩ হাজার ১৫৩ জন। প্রথম পর্যায়ের দ্বিতীয় মাসে এই বয়সের সবাইকে টিকা দেওয়া হবে।

৭০ থেকে ৭৩ বছরের জনগোষ্ঠী ২০ লাখ ৬ হাজার ৮৭৯ জন। দ্বিতীয় মাসে তাদের টিকা দেওয়া হবে। ৬৭ থেকে ৬৯ বছরের জনসংখ্যা ২৪ লাখ ৭৫ হাজার এবং ৬৪ থেকে ৬৬ বছরের জনসংখ্যা ২৪ লাখ ৭৫ হাজার। পঞ্চম মাসে এরা সবাই টিকা পাবেন।

ডা. শামসুল হক বলেন, ‘কোভিডে বয়স্কদের মৃত্যুর হার অনেক বেশি। তাদের কথা চিন্তা করেই ৭৭ থেকে ৮০ বছরের ঊর্ধ্বে থাকা সবাই প্রথম মাসে টিকার আওতায় আসবেন। এটা বেশ ভালো উদ্যোগ।’

তিনি আরও জানান, ‘দ্বিতীয় রাউন্ডে ৭০ বছরের ঊর্ধ্বে থাকা সবাই ভ্যাকসিনের আওতায় চলে আসবেন। অর্থাৎ দুই মাসের মধ্যে আমাদের দেশের সত্তরোর্ধ্ব সবাই ভ্যাকসিনের আওতায় আসবেন।’

স্বাস্থ্য অধিদফতরের পাবলিক হেলথ কমিটির সদস্য জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. আবু জামিল ফয়সাল বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘টিকার অগ্রাধিকার তালিকায় বয়োজ্যেষ্ঠদের রাখাকে সাধুবাদ জানাই। একইসঙ্গে তাদের মধ্যে যাদের অন্যান্য জটিল রোগ রয়েছে, তারা যেন অগ্রাধিকার পান।’