ফটো: লামায় জোর পূর্বক পাহাড় কেটে ঘর নির্মাণ করছেন আজগর আলীরা। -লামা প্রতিনিধি।

লামা প্রতিনিধি :

পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ২০১০ মতে পাহাড় বা পাহাড়ি টিলাভূমি যা প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট তা কর্তন বা রূপ পরিবর্তন করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এই অপরাধে জড়িতদের ২-১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত অর্থদন্ড ও ২-১০ বছর কারাদন্ডের বিধান রয়েছে। অথচ এ আইনকে বৃদ্ধ্ঙ্গাুলি দেখিয়ে বান্দরবানের লামা উপজেলার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের কমিউনিটি সেন্টার নামক স্থানে আজগর আলী নামের এক ব্যক্তি জোর পূর্বক পাহাড় কেটে ঘর নির্মাণ ও পানি চলাচলের ঝিরি ভরাট করে চলেছেন। গত ২৫ ডিসেম্বর থেকে রহিমা বেগমের নামীয় ও ভোগদখলীয় পাহাড়ি জায়গায় বুল ড্রোজার লাগিয়ে পাহাড় কেটে ঘর নির্মাণ করছেন। শুধু তাই নয়, ওই পাহাড়ে রহিমা বেগমের রোপিত ১০ বছর বয়সী ২০টি গর্জন গাছও কেটে নিয়ে যাওয়ার সময় বাঁধা দিলে হত্যা করবে বলেও হুমকি দেন আজগর আলীরা। পাহাড় কাটার ফলে মারাতœক পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন মানবাধিকার কর্মীসহ সচেতন মহল। তারা পাহাড় কাটাসহ পরিবেশ বিনাশী কর্মকান্ড বন্ধে প্রশাসনের নিকট জোর দাবী জানান। এদিকে জোর পূর্বক পাহাড় কেটে ঘর নির্মাণকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে যে কোন সময় অপ্রীতিকর ঘটনার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।

জানা যায়, ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের কমিউনিটি সেন্টার এলাকার শহীদুল আলমের স্ত্রী রহিমা বেগম ১৯৭৯-৮০ সালের ৪২২৩নং বন্দোবস্তি মোকদ্দমা মুলে ২৮৬নং ফাঁসিয়াখালী মৌজায় আর/৭৪৯নং হোলিং মূলে ৫ একর তৃতীয় শ্রেণীর জায়গা বন্দোবস্তি পান। বন্দোবস্তির পর রহিমাসহ পরিবারের লোকজন বহু অর্থ কায়িক পরিশ্রমের মাধ্যমে ওই জায়গাতে বিভিন্ন প্রজাতির বনজ ফলজ গাছের বাগান ও বসতঘর নির্মাণ করে পরিবার পরিজন নিয়ে ভোগ করে আসছেন। বর্তমানে বাজার মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় ওই জায়গার ওপর মৃত ওয়াজ মিয়ার ছেলে আজগর আলী, তার স্ত্রী আমেনা বেগম, ছেলে ফজল করিম, জহুর আলী ও আল আমিনের লোলুপ দৃষ্টি পড়ে। তারা রহিমা বেগমের জায়গা দখলে নিতে শুরু করেন অপচেষ্টা। এর অংশ হিসেবে গত ২৫ ডিসেম্বর থেকে আজগর আলী সহ অন্যরা সংঘবদ্ধ হয়ে বুল ড্রোজার লাগিয়ে প্রায় ১৫ শতক আয়তনের পাহাড় ও রোপিত ২০টি গর্জন গাছ কেটে সাবাড় করে ফেলেন। এ সময় পাহাড় কাটায় বাঁধা দিলে রহিমা বেগমকে হত্যার হুমকি দেন আজগর আলীরা।

ভুক্তভোগী রহিমা বেগম বলেন, এ জায়গা ছাড়া আমার আর কোন জায়গা নেই। জায়গা ছেড়ে না দিলে আমাকে ও আমার পরিবারকে পথে বসতে হবে। ইতিমধ্যে আজগর আলীরা আমার পাহাড়ে রোপিত ২০টি গর্জন গাছ কেটে নিয়ে ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা ও পাহাড় কেটে মাটি বিক্রি করে আরো ২০ হাজার টাকা টাকা আতœসাত করেছেন। এসব নিয়ে যাওয়ার সময় বাঁধা দিলে আমাকে ও আমার পারিবারের সদস্যকে হত্যা করবে বলে হুমকি দেন। সামাজিক বিচারও মানেন না আজগর আলীরা। তাই আমার জায়গা রক্ষায় প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করছি।

এদিকে স্থানীয় বাসিন্দা মো. মঞ্জুর আলম, হাবিবুর রহমান ও এরশাদুর রহমান বলেন, এতদিন জানতাম বিরোধীয় জায়গা রহিমা বেগমের। কিন্তু সম্প্রতি ওই জায়গা আজগর আলীর বলে দাবী করছেন। জায়গা দখল-বেদখলকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। এ নিয়ে যে কোন সময় অপ্রতিকর ঘটনাও ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। স্থানীয়দের অভিযোগ, পরিবেশ ও ভূমি ব্যবস্থাপনা আইন লঙ্ঘন করে পাহাড় ও টিলা কাটা অবশ্যই দন্ডনীয় অপরাধ হলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে অপরাদীদের খোঁজ নিয়ে কোন ব্যবস্থা না নেওয়ায় জনমনে নানা প্রশ্নের সৃষ্টি হচ্ছে।

পাহাড় কাটার সত্যতা স্বীকার করে অভিযুক্ত আজগর আলী ও তার ছেলেরা বলেন, কারো জায়গায় নয়; আমরা আমাদের জায়গার পাহাড় কেটে ঘর নির্মাণ করছি। এ নিয়ে আমাদের সাথে কারো বিরোধ নেই।

এ বিষয়ে ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. জাকের হোসেন মজুমদার বলেন, রহিমা বেগম ও আজগর আলীর মধ্যে জায়গা নিয়ে বিরোধের ঘটনাটি স্থানীয়ভাবে মিমাংশার চেষ্টা করেছি। কিন্তু আজগর আলীরা পরিষদের সিদ্ধান্ত না নামায় বিরোধটি মিমাংশা করা সম্ভব হচ্ছেনা।