সিবিএন ডেস্ক:
নিখোঁজের তিন দিন পরও সন্ধান মেলেনি চট্টগ্রামের সাংবাদিক গোলাম সরোয়ারের। তিনি কোথায়, কেউ কী অপহরণ করেছে তাকে—কোনো তথ্যই নেই পুলিশের কাছে। বিষয়টি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যন্ত গড়ালেও, ‘চেষ্টা চলছে’ বাক্যতেই সহকর্মী ও পরিবারের সদস্যদের সন্তুষ্ট রাখছে পুলিশ।

অফিসের উদ্দেশে গত বৃহস্পতিবার সকালে নগরীর ব্যাটারি গলির বাসা থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হন অনলাইন নিউজ পোর্টাল সিটিনিউজ বিডির সাংবাদিক গোলাম সরোয়ার। এ ব্যাপারে তার প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা সম্পাদক জুবায়ের সিদ্দিকি কোতোয়ালি থানায় একটি জিডি করেন।

এদিকে সরোয়ারের মোবাইল থেকে নিখোঁজের একদিন পর দুদফা ফোন এলেও তার অবস্থান শনাক্ত করতে না পারায় পুলিশের তদন্ত ও ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে সাংবাদিক সমাজে। বিষয়টিকে ইঙ্গিত করে চট্টগ্রামের তরুণ ও প্রতিবাদী সাংবাদিক হিসেবে পরিচিত মোস্তাফা ইউসুফ নিজ ফেসবুক ওয়ালে শনিবার লিখেছেন, ‘৭২ ঘন্টা শেষ হতে চলল, সাংবাদিক সরোয়ারের কোন সন্ধান নাই। তার মোবাইল থেকে বার বার কল দেয়া হচ্ছে। এরপরও কোন সংস্থা নাকি তার অবস্থান লোকেট করতে পারছে না। না পারারই কথা। এটা তো পৃথিবীর সবচে (সবচেয়ে) কঠিন কাজ। এফবিআইও পারবে কিনা সন্দেহ।’

তিনি আরও লিখেছেন, ‘তবে সবচে (সবচেয়ে) সহজ কাজ সাংবাদিককে কুপিয়ে মারা, থ্রেট দেয়া, যখন তখন তুলে নেয়া। সাংবাদিক ও সাংবাদিক সংগঠনগুলো দিনে দিনে মেরুদণ্ডহীনতার যে নজির তৈরী করেছে তার শোধ তো দিতে হবে এভাবে জীবন দিয়ে৷ চট্টগ্রামে সাম্প্রতিক সময়ে যত আন্দোলন তার পুরোভাগেই ছিল তরুণরা। এবারও সে দায়িত্ব আমরা পালন করব। এখনো যারা দালাল হয়নি, এখনো যাদের গায়ে ন্যায়ের রক্ত আছে, মস্তিস্ক বর্গা দেননি যারা। তাদের সাথে পাবো আশা করি।’

সাংবাদিক গোলাম সরোয়ারের নিখোঁজ নিয়ে উদ্বিগ্ন তার পরিবার ও চট্টগ্রামের সাংবাদিক সমাজ। দফায় দফায় পুলিশের সাথে কথা বললে আশ্বাস দিয়েও বিশ্বাস ভঙ্গ করেছে পুলিশ। যখন তাকে গত তিন দিনেও উদ্ধারে ব্যর্থ হয়েছে পুলিশ। তখনই খোদ সিএমপি কমিশনারের অফিসের সামনে রোববার অবস্থান কর্মসূচির ডাক দিয়েছে চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়ন (সিইউজে)।

এ প্রসঙ্গে শনিবার সন্ধ্যায় সিএমপি কমিশনার সালেহ মোহাম্মদ তানভীরের কাছে জানতে চাইলে তিনি সিভয়েসকে বলেন, ‘সাংবাদিক গোলাম সরোয়ারের সন্ধানে আমাদের সব ইউনিট একযোগে কাজ করছে। তার সন্ধান পেতে সব চেষ্টা করা হচ্ছে।’

তাহলে গতকাল সাংবাদিক সরোয়ারের মোবাইল থেকে দুবার কল করা হলেও এখনো কেন তার অবস্থান শনাক্ত করতে পারেনি পুলিশ? এমন প্রশ্নের জবাবে সিএমপি কমিশনার বলেন, ‘নাহ, তার অবস্থান শনাক্ত হয়নি এটা সত্য। আসলে টেকনিক্যাল একটা প্রবলেম আছে। সেটার সমাধানের দ্রুত চেষ্টা চলছে।’

গতকাল শুক্রবার বিএফইউজের সভা থেকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে ফোনে সাংবাদিক নিখোঁজের বিষয়টি জানিয়ে দ্রুত উদ্ধারের অনুরোধ করেন মহাসচিব শাবান মাহমুদ। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কি এ বিষয়ে কোনও নির্দেশনা দিয়েছেন কিনা জানতে চাইলে সিএমপির শীর্ষ কর্মকর্তা সালেহ মোহাম্মদ তানভীর বলেন, ‘মন্ত্রী মহোদয় সরাসরি কিছু বলেননি। তবে আমাদের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের পক্ষ থেকে বিষয়টি নিয়ে নির্দেশনা পেয়েছি।’

সিভয়েসের পক্ষ থেকে সাংবাদিক গোলাম সরোয়ারের এই নিখোঁজ রহস্য উদঘাটনের চেষ্টা করা হয়। বেশ কয়েকটি প্রভাবশালী গোয়েন্দা সংস্থার সাথে কথা বলে জানা গেছে, তাদের ধারণা স্থানীয় একটি নিউজ পোর্টালে গোলাম সরোয়ার খুলশীতে প্রভাবশালীদের নিয়ন্ত্রণে ক্যাসিনো ব্যবসার নিউজ করার কারণেই হয়তো তাকে অপহরণ করা হয়েছে। সেই ধারণা আরও পোক্ত হচ্ছে যেদিন ওই নিউজ প্রকাশিত হয়েছে তার পরের দিনই নিজ বাসা ব্যাটারিগলির মুখ থেকে নিখোঁজ হন তরুণ এ সাংবাদিক। ওই এলাকা থেকেই তার মোবাইল ফোন বন্ধ ছিল।

এদিকে সাংবাদিক গোলাম সরোয়ারকে দ্রুত উদ্ধারের দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ কর্মসূচি পালন করেছে চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়ন-সিইউজে। শনিবার বিকেলে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সামনে অনুষ্ঠিত এ সমাবেশ থেকে ১৬ ঘন্টার আল্টিমেটাম দিয়েছে সিইউজে। এই সময়ের মধ্যে নিখোঁজ সাংবাদিক গোলাম সরোয়ারকে উদ্ধার করতে ব্যর্থ হলে রোববার সকাল ১১টায় সিএমপি কমিশনার কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছে সংগঠনটি।

তিন দিন পরও নিখোঁজ সাংবাদিক সরোয়ারের সন্ধান না পাওয়ায় সমাবেশে উদ্বেগ জানিয়ে নেতৃবৃন্দ বলেন, ‘একজন গণমাধ্যমকর্মীর নিখোঁজের ঘটনা একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের জন্য অশনি সংকেত। রাষ্ট্রের নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে চ্যালেঞ্জ করার ইঙ্গিত। রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ গণমাধ্যমে আঘাত করে কারা ফায়দা লুটতে চায়, কারা সরকারের চলমান উন্নয়ন কর্মকাণ্ডকে বাধাগ্রস্থ করতে চায়, সেসব ষড়যন্ত্রকারীদের চিহ্নিত করা এখন সময়ের দাবি।’

নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, ‘যতক্ষণ পর্যন্ত নিখোঁজ সাংবাদিককে উদ্ধার করা হবে না ততদিন রাজপথ ছাড়বে না সাংবাদিক সমাজ। গণমাধ্যমকে সরকারের মুখোমুখি দাঁড় করানোর ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে এই অপহরণের ঘটনা হয়েছে। বর্তমান সরকার সাংবাদিক বান্ধব সরকার। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করোনা মহামারিতে সাংবাদিক সমাজের পাশে ছিলেন। নিখোঁজ সাংবাদিক সরোয়ারকে দ্রুত উদ্ধারেও চট্টগ্রামের সাংবাদিক সমাজ প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছে। একইসাথে যারা এই অপহরণ কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত তাদেরকেও চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানান নেতৃবৃন্দ।

সিইউজের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রতন কান্তি দেবাশীষের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বিএফইউজের সাবেক সহ-সভাপতি শহীদ উল আলম ও মোস্তাক আহমদ, চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী ফরিদ, জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও হাইকোর্টের অতিরিক্ত এটর্নী জেনারেল এ এইচ এম জিয়া উদ্দিন, প্রেস ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মহসিন চৌধুরী, সিইউজের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক সবুর শুভ ও সহ-সভাপতি অনিন্দ্য টিটো, জাতীয় পার্টির নেতা তপন চক্রবর্তী, প্রতিনিধি ইউনিটের প্রধান সাইদুল ইসলাম, টিভি ইউনিটের প্রধান মাসুদুল হক, টিভি জার্নালিস্ট এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক লতিফা আনসারি রুনা, টিভি ক্যামেরা জার্নালিস্ট এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক দীপঙ্কর বাবু, যমুনা টেলিভিশনের ব্যুারো প্রধান জামশেদ রেহমান, আজকের সূর্যোদয়ের সহকারি সম্পাদক জোবায়ের সিদ্দিকী, সাংবাদিক মোস্তফা ইউসুফ ও কামরুল ইসলাম, সীতাকুণ্ড প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি সৈয়দ ফোরকান আবু, নিখোঁজ সাংবাদিক গোলাম সরওয়ারের স্ত্রী জেসমিন সরওয়ার, লালখান বাজার ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক দিদারুল আলম মাসুম, মহানগর যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ফরিদ মাহমুদ, সাবেক ছাত্রনেতা আরশেদুল আলম বাচ্চু, সহকারি পিপি এডভোকেট নজরুল ইসলাম, মানবাধিকার নেতা আমিনুল ইসলাম বাবু, বেসরকারি কারা পরিদর্শক সাবেক ছাত্রনেতা আজিজুর রহমান আজিজ, সাবেক ছাত্রনেতা ইয়াসির আরাফাত, চন্দনাইশ সমিতি চট্টগ্রামের সাধারণ সম্পাদক মাকসুদুর রহমান। বিক্ষোভ সমাবেশ সঞ্চালনা করেন সিইউজের নির্বাহী সদস্য মুহাম্মদ মহরম হোছাইন।

বিক্ষোভ সমাবেশে সংহতি প্রকাশ করেন মহানগর জাতীয় পার্টির নেতা নাসির উদ্দিন, যুবলীগের কেন্দ্রিয় জাহেদুর রহমান সোহেল, ইসলামিক ফ্রন্টের নেতা মঈনুদ্দীন হালিম, সাবেক ছাত্রনেতা হাবিবুর রহমান তারেক, মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ড কাউন্সিলের নেতা সারোয়ার আলম মনি, বিএসটিআই এর প্যানেল আইনজীবী আশরাফ উদ্দিন খন্দকার, কেন্দ্রিয় ছাত্রলীগ নেতা শেখ মহিউদ্দিন বাবু, মহানগর ছাত্রলীগের সহসভাপতি রোমেল বড়ুয়া রাহুল, চন্দনাইশ সমিতি চট্টগ্রামের নেতা কফিল উদ্দিন, সংগঠক নোমান উল্লাহ বাহার, মহানগর ছাত্রলীগের উপ অর্থ সম্পাদক আবু হানিফ রিয়াদ, উপ ক্রীড়া সম্পাদক মাহমুদুল হাসান রনি, লেখক মাহমুদুল হক আনসারি, মহানগর ছাত্রলীগের সদস্য বোরহান উদ্দিন গিফারি। -সিভয়েস