গিয়াস উদ্দিন


এক সময়ের খড়ের ছাউনীযুক্ত ছোট্ট মসজিদটি কালের আবর্তে পুরনোকে তলিয়ে এখন সমৃদ্ধশালী বহুতল একটি পূণ্য ভবন। প্রায় একশো পনেরো বছরের পুরনো এ মসজিদে ৩ হাজারের বেশি মুসল্লীদের ধারন ক্ষমতা । বাজারের প্রাণ কেন্দ্রে বিশাল জায়গা এ মসজিদের অবস্থান।

জানা যায়, মাছুয়াখালী এলাকার বিশিষ্ট দানশীল ব্যক্তি মাগন আলী সিকদারের জীবদ্দশা ও পৃষ্টপোষকতায় তারই মেঝ ছেলে আমির মোহাম্মদ সিকদার ১৯০৫ সালে খড়ের ছাউনী ও তক্তার বেড়া দিয়ে ছোট সাইজের এ মসজিদটি প্রতিষ্টিত করেন। মাগন আলী সিকদার সর্বপ্রথম ১২ শতক জমি দান করেন। পরবর্তীতে জমিদারী খাস জমিসমূহ রেকডভূক্ত হয়ে ৬২ শতকে উন্নীত হয়। ১৯৫৭ সালে আমির মোহাম্মদ সিকদার ৮ কানি জায়গা দান করেন। এরপর মমতাজ উদ্দীন চৌধুরী ধলিরছড়া মৌজা হতে ৩ কানি জায়গা দান করেন। এছাড়া বিভিন্ন দানশীল ব্যক্তিবর্গ বিভিন্ন সময়ে ২০ শতক জায়গা দান করার পর বিভিন্ন উপায়ে অনেক ধর্মপ্রাণ মুসল্লীদের দান অব্যাহত রয়েছে। সেকালে মাগন আলী সিকদার ঈদগাও তহসিল অফিসের ইনচার্জ ছিলেন। সূত্রে প্রকাশ তৎকালীন ঈদগাও তহসিল অফিস, রামু তহসিল অফিস ও খুনিয়া পালং তহসিল অফিস বাঁশখালী বাণীগ্রামের অধীনে পরিচালিত হতো। পুরনো মুরব্বীদের মতে সে সময় বাজারে কোন দোকানপাট বা ব্যবসা প্রতিষ্টান ছিল না। কিন্তু বর্তমানে বাজারে বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্টানের পাশাপাশি আড়াই হাজারের বেশি দোকান পাঠ নিয়ে বিশাল এক বাণিজ্য কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। আমির মোহাম্মদ সিকদার ১৯০৫ সাল হতে ১৯৬০ সাল পর্যন্ত ৪৯ বছর মোতওয়াল্লীর দায়িত্বে ছিলেন। এরপর হতে ১৯০৮ সাল পর্যন্ত মমতাজ উদ্দিন চৌধূরী মোতওয়াল্লীর দায়িত্ব পালন করেন। ১৯০৮ সাল হতে এ পর্যন্ত মমতাজ উদ্দিন চৌধুরীর জামাতা ও ভাইপো কক্সবাজারের বিশিষ্ট সিনিয়র সাংবাদিক বদিউল আলম মসজিদটির মোতওয়াল্লীর পদে অধিষ্টিত হয়ে সুষ্টুভাবে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। ২৩ সদস্য বিশিষ্ট মসজিদ কমিটিতে ঈদগাও, ইসলামাবাদ ও জালালাবাদ ইউপি চেয়ারম্যানও অর্ন্তভ’ক্ত। সহ-সভাপতির দায়িত্বে রয়েছেন আমান উল্লাহ ফরাজী ( সাবেক চেয়ারম্যান), লিয়াকত নুর চৌধুরী ( মমতাজ উদ্দিন চৌধুরীর পুত্র ) ও আনু মৌলভী। সেক্রেটারী পদে স্থানীয় শিল্পপতি আলহাজ জসিম উল্লাহ মিয়াজী দীর্ঘদিন দায়িত্ব থাকাকালীন সময়ে মৃত্যুবরণ করায় ভারপ্রাপ্ত দায়িত্বে রয়েছেন আলহাজ শফিউল আলম ও সহযোগি হিসেবে জাফর আলম এমএ । অর্থ সম্পাদক হিসেবে মা: এমরানুল ইসলাম দায়িত্বে রয়েছেন। মসজিদের প্রধান প্রবেশদ্বার অপরুপ আকর্ষনীয় ও সৌন্দর্যমন্ডিত। প্রবেশ পথের উত্তর পাশের্^র দেয়ালে মার্বেল পাথরে সেটে দেয়া আমির মোহাম্মদ সিকদারের একটি বাণী লিখা রয়েছে।

যাতে প্রাধান্য পেয়েছে “ আমীর মোহাম্মদ কহে ভাবিয়া রব্বানা কোন অব্দে কে গড়িল মসজিদখানা। তেরশত চুয়ান্ন বাংলায় ইহারই স্থাপন গড়ে বন্দেগীর কারণ। পারাপার মাাসে পত্তন তেরশত সাতানব্বই জান বাংলার সন। পুন: নির্মাণে আল্লাহর মদদ পরজনগন সু-পুত্র মমতাজ উদ্দীন আহমদ মোতওয়াল্লীর স্থানে রাখেন আল্লাহ দু জাহানে মানে সম্মানে হীন জ্ঞানী কি বর্ণিব হক কমিটির অবদান কক্সবাজারের অর্ন্তগত ঈদগাও গ্রাম। ” নিয়মিত মুসল্লী মহিব উল্লাহ , আবুল কাশেম, আবদুল হাকিম, নুর মোহাম্মদ ও আবু সৈয়দ সহ অনেকের সাথে কথা হলে তারা জানান এ মসজিদে এশারের নামাজ না পড়ে বাসায় গেলে মন শান্তি হয় না। প্রতি ওয়াক্ত নামাজে এখানে রয়েছে শান্তির ফোয়ারা। দেয়ালে সহ সভাপতি লিয়াকত নুর চৌধুরীর সাথে এ ব্যাপারে কথা হলে তিনি জানান মসজিদের যত সম্পদ রয়েছে সব ভোগদখলে নেই। অবৈধ দখলে থাকা জায়গাসমূহ উদ্ধারের চেষ্টা চলমান রয়েছে। প্রতিষ্টাতা সহ সকলের অংশগ্রহনে ছোট মসজিদটি এখন মুসল্লীদের বিশাল প্রার্থনার স্থানে পরিণত হয়েছে। বর্তমানে মসজিদটি পুরো এয়ারকন্ডিশনারযুক্ত ( এ সি ) করার কাজ চলছে। উক্ত কাজে মসজিদ কমিটির ১০ লাখ টাকা এবং কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় এলাকাবাসীর আর্থিক সহায়তা সংযুক্ত রয়েছে।