হাকিকুল ইসলাম খোকন:
যুক্তরাষ্ট্রের রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং তার ডেমোক্র্যাটিক প্রতিদ্বন্দ্বী জো বাইডেনের মধ্যে প্রথম বিতর্ক অনুষ্ঠানেই তুমুল বাগ্‌যুদ্ধ ও চরম বিশৃঙ্খলা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। স্থানীয় সময় ২৯ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার রাতে ওহাইও অঙ্গরাজ্যের ক্লিভল্যান্ডে ৯০ মিনিটের এ বিতর্কে ট্রাম্প ও বাইডেন একে অপরের প্রতি আক্রমণাত্মক বক্তব্য দেন।

ফক্স নিউজের ক্রিস ওয়ালেসের সঞ্চালনায় ট্রাম্প ও বাইডেন বিতর্কের মঞ্চে দাঁড়িয়ে বিতর্কের অনেকখানি অংশজুড়েই পরস্পরকে অপমান করেন, পরস্পরের প্রতি বাক্যবান নিক্ষেপ করেন এবং ব্যক্তিগত পর্যায়ে আক্রমণ করেন।

বিবিসি জানায়, গত কয়েক বছরের মধ্যে এটি ছিল হোয়াইট হাউসের সবচেয়ে বিশৃঙ্খল ও আক্রমণাত্মক বিতর্কের একটি। অনুষ্ঠানজুড়ে ট্রাম্পকে আক্রমণাত্মক ভূমিকায় দেখা যায়। প্রতিদ্বন্দ্বী বাইডেনকে ব্যক্তিগত আক্রমণও করেন তিনি। বাইডেনের ছেলের মাদক ব্যবহারের প্রসঙ্গও তিনি বিতর্কে তুলে আনেন। একপর্যায়ে বাইডেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে ‘ক্লাউন’ বা ভাঁড় হিসেবে আখ্যায়িত করে তাকে ‘চুপ থাকতে’ বলেন।

এই বিতর্কে প্রতি প্রশ্নের জন্য প্রত্যেক প্রার্থী ১৫ মিনিট করে ছয়টি প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য মোট ৯০ মিনিট সময় পেয়েছিলেন। প্রশ্নের জন্য নির্ধারণ করে দেওয়া বিষয়গুলো ছিল : সাফল্য-ব্যর্থতার খতিয়ান, সুপ্রিম কোর্ট, অর্থনীতি, বর্ণবৈষম্য ও সহিংসতা এবং নির্বাচনে বিশুদ্ধতা।

এই বিতর্কে করোনাভাইরাস প্রসঙ্গটি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল। যুক্তরাষ্ট্রে করোনায় দুই লাখের বেশি মানুষ মারা যাওয়ায় বাইডেন বলেন, প্রচুর মানুষ মারা গেছেন। আরও অনেক বেশি মানুষ মারা যাবেন, যতক্ষণ পর্যন্ত তিনি (ট্রাম্প) অনেক বেশি স্মার্ট, অনেক দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে না পারছেন।

প্রতিক্রিয়ায় বাইডেনকে ‘স্মার্ট’ শব্দটি ব্যবহারে আপত্তি জানান ট্রাম্প। ট্রাম্প বলেন, ‘আপনি হয় আপনার ক্লাসের মধ্যে সবচেয়ে কম নাম্বার পেতেন অথবা পেছনের দিকের ছাত্রদের মধ্যে একজন ছিলেন। আমার সঙ্গে স্মার্ট শব্দটি কখনো ব্যবহার করবেন না।’

ট্রাম্প জানান, করোনা মহামারির অজুহাতে দেশের অর্থনীতি ও সব কার্যক্রম বন্ধ রাখতে চাইছেন বাইডেন। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের জনগণ জানে কীভাবে এই মহামারির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে হবে।

ট্রাম্পের কথার জবাবে বাইডেন বলেছেন, যতক্ষণ করোনা পরিস্থিতি ঠিক করা না যাবে, ততক্ষণ অর্থনীতিও সচল হবে না। তিনি ট্রাম্পকে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে ‘সবচেয়ে খারাপ প্রেসিডেন্ট’ হিসেবে উল্লেখ করেন।

বিতর্কে ট্রাম্পের কর ফাঁকি দেওয়ার বিষয়টি তুলে ধরেন জো বাইডেন। তিনি বলেন, এমনকি একজন স্কুলশিক্ষকও এর চেয়ে বেশি কর পরিশোধ করেন। এ সময় বাইডেনকে থামিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন ট্রাম্প।

একপর্যায়ে অনুষ্ঠানের সঞ্চালক ট্রাম্পকে মনে করিয়ে দেন, অন্যের বক্তব্যের সময় বাধা দেওয়া চলবে না। সঞ্চালক ওয়ালেস প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে বলেন, ‘আপনার প্রচারণা টিম সম্মত হয়েছিল যে, উভয় পক্ষই দুই মিনিট করে উত্তর দেওয়ার সুযোগ পাবে। এ সময় কোনো ধরনের বাধা দেওয়া হবে না।

’বাইডেনের দাবি, ট্রাম্প পুরো বিতর্কটিকেই নস্যাৎ করে দেওয়ার অপচেষ্টা চালিয়েছেন। তিনি কখনো কথা রাখেন না। আর এখানে তিনি যা বলছেন, তার পুরোটাই অসত্য।

এখন পর্যন্ত জনমত জরিপে ট্রাম্পের চেয়ে এগিয়ে আছেন বাইডেন। যদিও যেসব অঙ্গরাজ্যের ফল বিজয়ী নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে, সেগুলোতে দুই প্রার্থীর মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস পাওয়া গেছে।

এই বিতর্কে দর্শকদের মাস্ক পরে আসার নিয়ম থাকলেও ট্রাম্পের পরিবারের অনেক সদস্যই সেখানে মাস্ক ছাড়াই উপস্থিত হয়েছিলেন। কেবল মেলানিয়া ট্রাম্পকেই বিতর্ক চলাকালে মুখ ঢাকতে দেখা যায়।

প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে আরো দুটি বিতর্ক অনুষ্ঠিত হবে। এদিকে আগামী ৭ অক্টোবর কমলা হ্যারিস ও মাইক পেন্স প্রথম বিতর্কে অংশ নেবেন।